নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া মিধিলি উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। দুপুরের মধ্যেই মোংলা ও খেপুপাড়া দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করবে এটি। সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ এবং কক্সবাজার, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঝড়ের প্রভাবে গতকাল রাত থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া সহভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। একই কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যায় খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রপ্রান্ত আজ দুপুরের উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এ ছাড়া এর প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিধিলি নামটি মালদ্বীপের দেওয়া। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। এই নাম দিয়েছিল ইরান।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নদীবন্দরগুলোতে বাড়ানো হয়েছে সংকেত। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নামিয়ে ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে আগের মতো ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টি সতর্কবার্তায় বলা হয়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
কোন সংকেতের অর্থ কী
৬ নম্বর বিপদ সংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি ভীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৭ নম্বর বিপদ সংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।