বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইন ও বিধি যুগোপযোগী করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, বার কাউন্সিল আইন ও বিধিতে পেশাগত অসদাচরণের কোনও সংজ্ঞা নেই। পেশাগত অসদাচরণের সংজ্ঞা না থাকলেও এ ধরনের অভিযোগে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালে অনবরত শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন আইনজীবীরা। যেখানে পেশাগত অসদাচরণের সংজ্ঞাই নাই সেখানে এ ধরনের অভিযোগে আইনজীবীদের শাস্তি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত। এ কারণে বার কাউন্সিলের উচিত আইনজীবীদের শাস্তি দেওয়ার আগে পেশাগত অসদাচরণের সংজ্ঞা নিরূপণ করা।
গুরুতর পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত এক আইনজীবীর আপিলের রায়ে মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব পরামর্শ দেন। বার কাউন্সিল আইন ও বিধি এবং পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালা পর্যালোচনা করে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবীকে ইনটিমেশন ফরমে শুরুতেই ঘোষণা দিয়ে বলতে হয় তিনি অন্য কোনও পেশায় নিয়োজিত নন। কিন্তু এই ঘোষণা কতটা বাস্তবসম্মত? বার কাউন্সিল আইনের ২৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অ্যাডভোকেট হিসেবে অন্তর্ভূক্তির জন্য বয়স ২১ বছর পূর্ণ হতে হবে। কিন্তু কত বছর বয়সের পর আর আইনজীবী হওয়া যাবে না সেই বিষয়ে কোনও বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া নাই আইনে। এ কারণে অন্য কোনও পেশা বা ব্যবসায় নিয়োজিত থাকলেও একজন ব্যক্তি আইনজীবী হওয়ার লক্ষ্যে শুরুতেই বার কাউন্সিলের ইনটিমেশন ফর্মে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছেন। সেজন্য ইনটিমেশন ফর্মে এই ঘোষণা দেওয়ার শর্ত কতটা বাস্তবসম্মত তা বার কাউন্সিলকে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আদালত আরও বলেন, বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আছেন যারা উকালতি পেশার পাশাপাশি অন্য কোনও পেশায় বা ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছেন। আইন পেশার পাশাপাশি অন্য পেশায় নিয়োজিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বার কাউন্সিল কি আদৌ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? নেয়নি। হয়ত কারও অভিযোগ পেয়ে এ ধরনের পেশাগত অসদাচরণের কারণে কাউকে কাউকে শাস্তি দিয়েছে, তবে সবাইকে নয়। আমরা মনে করি এক্ষেত্রে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। তাই এসব ক্ষেত্রে বার কাউন্সিল আইন ও বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ আইনজীবীদের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার রয়েছে বলে মনে করে হাইকোর্ট।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আইনজীবী পেশায় আসার জন্য প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক আইনজীবীকে সনদ দিচ্ছে বার কাউন্সিল। সনদধারীদের সবাই যে আদালতে প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার তা নয়। নন প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ারও রয়েছেন। কারা প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার এবং কারা নন প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার সেই বিষয়েও বার কাউন্সিলের একটা মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা দরকার।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সৈয়দপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন বাবু ক্ষিতিশ চন্দ্র রায়। ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি নীলফামারী জেলা বারের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। শিক্ষকতা পেশায় থাকলে তিনি সনদ সাময়িক স্থগিত রাখার কোনও আবেদন বার কাউন্সিলে করেননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ আনে এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগে তাকে বার কাউন্সিল আইনের ৩২(১) বিধান অনুযায়ী চিরতরে আইন পেশা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিল আংশিক মঞ্জুর করে হাইকোর্ট তার আইনজীবী সনদ ফিরিয়ে দেন। অর্থাৎ এখন থেকে ওই ব্যক্তি আইন পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন বলে জানান তার আইনজীবী মো. আব্দুল হক। এই মামলায় আদালতে অ্যামিকাসকিউরি হিসাবে বক্তব্য দেন বার কাউন্সিল সদস্য অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
