রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন অফিসপাড়া থেকে ছয় জনকে ডাকাত সন্দেহে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। ডিবি বলছে, তারা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা তুলে বের হওয়া গ্রাহককে টার্গেট করে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল তারা।
ডিবি বলছে, এই ডাকাত দলটি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল। সম্প্রতি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা ডাকাতির ঘটনায় দলটি জড়িত থাকার তথ্য ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার (৩ ডিসেম্বর) অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৭), মো. শরিফুল ইসলাম (৪০), মো. আরিফ (৩৪), মো. আলাউদ্দিন (৪৩), আরিফুল ইসলাম আরিফ (৩৬) ও মো. জসিম (৪৩)। অভিযান টের পেয়ে জাকির হোসেন ওরফে বাবু (৪৩) নামের এক ডাকাত সদস্য পালিয়ে যায়।
এসময় তাদের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের দুটি পোশাক (ডিবির জ্যাকেট), এক জোড়া হাত কড়া, একটি সিলভার রংয়ের হায়েস গাড়ি, একটি কালো রংয়ের খেলনা ওয়াকিটকিসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ডিবি উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিমের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল একটি ডাকাত দল গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়া এক গ্রাহককে তুলে নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ডাকাত সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে এক গ্রাহক বড় অংকের টাকা তুলে বের হবেন এমন তথ্যে তারা অপেক্ষা করছেন।
ডিবি প্রধান বলেন, এই চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বড় লেনদেন করা ব্যাংকের গ্রহকদের টার্গেট করে। পাশাপাশি ব্যাংকের ভেতরে তাদের সোর্স থাকে। তারাও লেনদেনের তথ্য দেয়। তখন তারা ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের সামনে ওঁত পেতে থাকে। একইভাবে তারা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সামনে ওঁত পেয়ে ছিল। এই টাকা তোলার তথ্য তাদের কাছে আগে থেকে ছিল। গাড়িতে ডিবি লেখা, ডিবি লেখা জ্যাকেট পরা ছিল। তখন ডিবি উত্তর বিভাগ তাদের হাতে নাতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্যের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল উল্লেখ করে হারুন বলেন, এই ডাকাত দলটি নাটোরের বড়াই গ্রামে মোটা অংকের টাকা ছিনতাই করেছে। কিন্তু ওই ঘটনায় কোনও মামলা হয়নি। ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় ১৬ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছিল, কিন্তু গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তারা অনেক স্থানে ডাকাতি করেছে যা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, অনেক সময় ডিবির পোশাক দেখলে তাদের কেউ চ্যালেঞ্জ করে না। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় ডাকাতির ঘটনা ঘটলে চুরির মামলা হয়। এটা করা যাবে না। ডাকাতির ঘটনা ঘটলে সেই মামলাই করতে হবে। তাহলে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।