X
মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
১১ চৈত্র ১৪৩১

যেভাবে ট্রেনের টিকিট যায় সিন্ডিকেটের হাতে, জানালো র‌্যাব

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:২৯আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:৪৯

ট্রেনের টিকিট কাটতে নানা বিধিনিষেধ ও তদারকির পরও থামছে না কালোবাজারি। খোদ টিকিট প্রক্রিয়া ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বরতরাই এই কালোবাজারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে র‌্যাব। চক্রটি কারসাজি করে টিকিট সংগ্রহ করে দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। এ ছাড়া ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে তা বেড়ে যেত তিন থেকে চার গুণ।

ট্রেনের এই টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেটের ১৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) কাওরান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেফতার এ চক্রের সদস্যরা হলো, সেলিম (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), হারুন মিয়া (৬০), মান্নান (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), ফারুক (৬২), শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), জুয়েল (২৩), আব্দুর রহিম (৩২), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২), জোবায়ের (২৫)।

র‍্যাব জানায়, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দুই হোতা সেলিম সিন্ডিকেট ও উত্তম সিন্ডিকেট নামে পরিচিত। টিকিটের বাড়তি লাভের ৫০ শতাংশ পায় তারা। বাকি ৫০ শতাংশ চলে যায় কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইটি বিশেষজ্ঞদের হাতে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় দুটি সিন্ডিকেটের হাতে প্রতিদিন যাচ্ছে প্রায় ৫০০ টিকিট।

তিনি বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তমের নেতৃত্বে এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।

তিনি বলেন, সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা সময় বুঝে সংগ্রহ করা টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে। স্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের কাছে তারা চড়া দামে বিক্রি করে থাকে। এ ছাড়া ট্রেন ছাড়ার সময় ঘনিয়ে এলে কালোবাজারে টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দাম দিগুণেরও বেশি নেয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিতে টিকিটের দাম তিন-চার গুণ বেশি নেয়। সাধারণত প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ তারা নিতো। বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রথমে ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদের টাকার লোভ দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। যেহেতু প্রতিটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে চারটি টিকিট দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে প্রত্যেককে চারটি করে টিকিটের জন্য ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীদের যোগসাজশে তারা যাত্রীদের টিকিট কাটার সময় দেওয়া এনআইডি সংগ্রহ করে রাখে। পরে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা প্রতিটি এনআইডি দিয়ে চারটি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে। এভাবে তারা প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করতো।

অনেক ক্ষেত্রে টিকিট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতো চক্রের সদস্যরা। আবার কৌশলে লাইনে অপেক্ষমাণ টিকিট প্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে চারটি টিকিট কিনে তিনটি টিকিট নিজেরা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিতো।

তিনি বলেন, এ ছাড়া, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেফতাররা রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট কেনার জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম/আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতো।

এভাবে বিপুল সংখ্যক টিকিট হাতিয়ে নিতো চক্রটি জানিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ফলে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে গ্রেফতার উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

এদিকে র‌্যাবের এই অভিযানের প্রশংসা করে তদন্তে যে কোনও সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে টিকিট অপারেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা সহজডটকম। প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার সন্দীপ দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টিকিট অব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনাটি সম্পর্কে সহজডটকম অবগত। আমরা এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রশংসা করি। গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং গ্রাহকদের সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি ব্র্যান্ড হিসেবে এই ঘটনাটি আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।’

ডিজিটাল টিকিটিং খাতে সর্বোত্তম পরিষেবা প্রদান করা সহজডটকমের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনও সদস্য এই ধরনের কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা এই চলমান তদন্তের উপর পুরোপরি আস্থা রাখি এবং তদন্তে যেকোনও প্রকার সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান দেখতে চাই, পাশাপাশি আমাদের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বজায় রাখতে চাই।’

/কেএইচ/এনএআর/ইউএস/
সম্পর্কিত
চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার শ্রমিক দল নেতাকে ছাড়াতে থানায় হামলা যুবদলের, গ্রেফতার ৬
সংঘবদ্ধ ধর্ষণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে স্কুলছাত্রী
স্কুলে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্তকে গণধোলাই
সর্বশেষ খবর
সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডারের সাক্ষাৎ
সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডারের সাক্ষাৎ
এরদোয়ানের হুমকি অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
এরদোয়ানের হুমকি অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড
স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড
পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন: দাবি আদায় না হলে গাজীপুর অচলের হুমকি
পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন: দাবি আদায় না হলে গাজীপুর অচলের হুমকি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচ কখন, দেখবেন কোথায়?
বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচ কখন, দেখবেন কোথায়?
তামিমের কামব্যাক ও একটি ‘যেন-তেন’ হাসপাতাল
তামিমের কামব্যাক ও একটি ‘যেন-তেন’ হাসপাতাল
নিখোঁজ হামিম গ্রুপের জিএম আহসান উল্লাহর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
নিখোঁজ হামিম গ্রুপের জিএম আহসান উল্লাহর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
১০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া এলজিইডি প্রকৌশলীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড
১০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া এলজিইডি প্রকৌশলীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড
বাইরের লোক দিয়ে চলে কম্পিউটারে কাজ, সরকারি ফির ১০ গুণ আদায়
শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসবাইরের লোক দিয়ে চলে কম্পিউটারে কাজ, সরকারি ফির ১০ গুণ আদায়