X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
রাষ্ট্রপতি থেকে ওসি সবার নামে ভুয়া আইডি

৭৭১ নারীর সঙ্গে চ্যাট করছিল পঞ্চম শ্রেণি ফেল আনোয়ার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৪আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৪

নাম মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (৩০)। গাইবান্ধা সদরের খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ফেল করার পর পড়াশোনা আর করেনি। তবে ফেসবুকে নানা রকম পরিচয়। পুলিশের ওসি, রাষ্ট্রপতি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, অভিনেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে তার। ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন ভুয়া আইডি থেকে ৭৭১ নারীর সঙ্গে আনোয়ারের চ্যাট করার তথ্য পাওয়া গেছে।

সাইবার প্রতারণার অভিযোগে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) গাইবান্ধা সদর থানার ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আনোয়ার গাইবান্ধা সদর থানার খোলাবাড়ি গ্রামের সাইদার হোসেনের ছেলে।

পুলিশ জানায়,  তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের নাম ও ছবি ব্যবহার করে আনোয়ার একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে। মূল আইডি থেকে ছবি ও স্ট্যাটাস নিয়ে ভুয়া এই আইডিতে নিয়মিত পোস্ট করতো আনোয়ার। আসল ওসি মহসীনের অভিযোগের সূত্র ধরে সে ধরা পড়েছে।

বিভিন্ন পরিচয়ে এ পর্যন্ত ৭৭১ জনের সঙ্গে আনোয়ারের চ্যাট করার তথ্য জানা গেছে। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, প্রবাসী, মডেল সবাই আছেন তার এই তালিকায়। প্রথমে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলার পরে হোয়াটসঅ্যাপেও তাদের সঙ্গে কথা বলে আনোয়ার। তবে কারও সঙ্গে ভিডিও কলে আসতো না তিনি। কেউ তাকে দেখতে চাইলে কিংবা সন্দেহ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ব্লক করে দিতো সে। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তা বলা। কারও কারও সঙ্গে ছবি আদান-প্রদান করেছে আনোয়ার। আবার কারও কারও কাছে টাকাও দাবি করেছে।

শনিবার ( ২৭ জানুয়ারি) বিকালে ডিএমপির তেজগাঁও থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ মহসীন (MD Mohshin)  নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি চালিয়ে আসছে। ওই আইডিতে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের মূল আইডির হুবহু ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে সে। 

এ ব্যাপারে ওসি মহসীন প্রথমে গত ৫ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে গত ২২ জানুয়ারি নিজেই বাদী হয়ে তেজগাঁও থানার সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার সূত্র ধরেই শুক্রবার আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়।

মহসীন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির নামেও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছে আনোয়ার। তার এই ভুয়া আইডির তালিকায় আছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান, চিত্রনায়ক শান্ত খান, অভিনেতা ও মডেল আব্দুন নুর সজল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তবে রাষ্ট্রপতি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আইডি বর্তমানে ডিজঅ্যাবল অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাকিগুলো সবই সচল আছে। এসব আইডি থেকে আনোয়ার ওই ব্যক্তি সেজেই বিভিন্ন পোস্ট ও ছবি দেয়। আর ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে চ্যাট করে।

নায়িকা হতেও আনোয়ারের কাছে ধরনা

চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে আনোয়ার। ওই আইডিতে নিজেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে দাবি করে সে। সেই পরিচয় দেখে তার সঙ্গে বিভিন্ন মেয়ে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে। মূলত নায়িকা হওয়ার জন্যই তারা যোগাযোগ করতো। আনোয়ার নায়িকা বানাবে বলে তাদের ছবি পাঠাতে বলতো। ছবি দেখে কাউকে কাউকে নায়িকা বানানোর আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন কথা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে গিয়ে কোনও কোনও মেয়ে নিজেরাই যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। আর মাঝে মাঝে ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে আনোয়ার নিজেই কোনও কোনও মেয়েকে ব্লক করে দিতো। আর বাকিদের আরও স্লিম হতে হবে, স্মার্ট হতে হবে ইত্যাদি বলে এড়িয়ে যেতো। 

ইউটিউব দেখে দেখে ‘ফেসবুক মাস্টার’

আনোয়ার চাকরি করে ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে, প্রিন্টিং মেশিনের হেলপার হিসেবে। প্রিন্টিং প্রেসে কাজের ফাঁকে সে ইউটিউব দেখে ফেসবুকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কলাকৌশল শেখে। খোলাবাড়ি গ্রাম ও দাশ বেকারি মোড় এলাকায় সে ‘ফেসবুক মাস্টার’ নামেই পরিচিত। আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করা, পেজ ভেরিফিকেশন, রিপোর্ট কিংবা স্ট্রাইক খাওয়া পেজ রিকভারসহ ফেসবুকের যেকোনও সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে ওঠে আনোয়ার।

মেয়েদের ফেসবুক আইডি-পাসওয়ার্ড হ্যাক

কারও ফেসবুক আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করে দেয় আনোয়ার। এজন্য তার কাছে বিভিন্ন মেয়েরা আইডি, পাসওয়ার্ড উদ্ধারের জন্য যোগাযোগ করতো। কিন্তু যেসব আইডি সে উদ্ধার করে দিতো সেগুলো সব আনোয়ারের হয়ে যেত! পরে আনোয়ার সে আইডি ব্যবহার করতো। যেসব আইডি একটু পুরনো হয়েছে সেসব আইডির নাম পরিবর্তন করেই গণ্যমান্য ব্যক্তির নামে ভুয়া আইডি খুলতো। এসব ভুয়া আইডি রিপোর্ট করে বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবারও তা রিকভার করে ফেলে আনোয়ার।

/কেএইচ/এফএস/
সম্পর্কিত
ফরাসি পুলিশের গাড়িতে হামলা: কে এই পলাতক কারাবন্দি মোহাম্মদ আমরা?
মুদি দোকানির গুদামে মিললো ভারত থেকে চুরি করে আনা ১২৯২ বস্তা চিনি
নকল চিপসের কারখানায় অভিযান, লাখ টাকা জরিমানা
সর্বশেষ খবর
ডেঙ্গুতে একদিনে ৩ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে একদিনে ৩ জনের মৃত্যু
তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি, বৃষ্টি হলেও কমবে না গরম
তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি, বৃষ্টি হলেও কমবে না গরম
জলবায়ুসহিষ্ণু কাঁচাবাজার নির্মাণের কাজ এগোলো কতদূর?
জলবায়ুসহিষ্ণু কাঁচাবাজার নির্মাণের কাজ এগোলো কতদূর?
ইসলামী ব্যাংক-ট্রান্সফাস্ট রেমিট্যান্স ক্যাম্পেইন, বিজয়ীদের পুরস্কার দিলেন মনিরুল মওলা
ইসলামী ব্যাংক-ট্রান্সফাস্ট রেমিট্যান্স ক্যাম্পেইন, বিজয়ীদের পুরস্কার দিলেন মনিরুল মওলা
সর্বাধিক পঠিত
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল