প্রতিবছরের মতো এবারও এই বইমেলা নিয়ে উচ্ছ্বসিত বইপ্রেমী ও পাঠক সমাজ। তবে এবারের মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে মেট্রোরেল। দ্রুত সময়ে যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেল এখন সবার পছন্দের বাহন। তাই দূর এলাকা থেকেও এবার মানুষ বইমেলায় আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা-সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন ও মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা উদ্বোধন করার আগ পর্যন্ত মেট্রোরেলে করে আসা যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। তবে সন্ধ্যায় সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আগামী শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে বইমেলার যাত্রীদের ভিড় বাড়তে পারে বলে জানান স্টেশনে দায়িত্ব থাকা স্টাফরা।
বইমেলায় মিরপুর থেকে আসা রাশেদ সিকদার বলেন, অনেকের মেলায় আসার ইচ্ছা থাকলেও যানজটের কারণে আগ্রহ হারিয়ে যায়। আবার সময়-সুবিধামতো আসাও হয় না। এখন সেই সমস্যা আর থাকছে না। গত বছরগুলোয় শাহবাগ নেমে তারপর হেঁটে মেলায় আসতে হতো। এখন একেবারে মেলার গেটে এসে নামছি।
আসতে-যেতে সময় বাঁচবে, মেলায় সময় বেশি কাটানো যাবে। বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে আসা সাদিয়া ইসলাম এভাবে বলেন, গত বছরগুলোয় দুপুরের পর বের হলেও মেলায় আসতে প্রায় বিকাল শেষ হতো। আবার যাওয়ার জন্য তাড়া থাকতো। ঘণ্টাখানেক মেলায় থেকে আনন্দ মাটি হয়ে যেত। এবার এই ঝামেলার অবসান হচ্ছে। আজ মেট্রোরেলে করে এসে মনে হচ্ছে, মন চাইলেই আসা যাবে, ফিরতেও তাড়া থাকবে না।
উত্তরা থেকে বইমেলায় আসা কামরুল আহসান বলেন, বইমেলা তো আমাদের প্রাণের মেলা। নিজেও লেখালেখি করি। তাও প্রতিবছরই খুব আগ্রহ থাকে বইমেলাকে নিয়ে। কিন্তু উত্তরা থেকে আসার চিন্তা করলেই কপালে ভাঁজ পড়তো। এখন মেট্রোরেল হওয়ায় আমার সেই ভোগান্তি দূর হবে। যারা দূরে বসবাস করে, তারাও এখন আসবে বলে মনে হয়।
কর্মজীবী মানুষের বইমেলায় আসা সহজ করে দিয়েছে মেট্রোরেল, এ মন্তব্য করে হোসাইন সাগর বলেন, আমরা কর্মজীবীদের বইমেলায় আসা প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন তো ছুটির দিনেও ভিড় থাকে। মেট্রোরেল চলাচল করায় এবার অফিস থেকে সরাসরি মেলায় চলে আসবো। ফেরার ক্ষেত্রেও ভোগান্তি থাকছে না। আবার চাইলে বাসায় গিয়েও ফ্রেশ হয়েও বইমেলায় আসা যাবে। এতে সময়ও বাঁচবে।
তবে মেলা উপলক্ষে রাতে ফেরার সময় মেট্রোরেলের সময় বাড়ানোর দাবি করেন হোসাইন সাগর। তার মতো বইমেলায় আসা অনেক যাত্রীই রাতে মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ানোর দাবি জানান।
মেলার বিভিন্ন প্রকাশনার বই বিক্রেতারাও এবার মেট্রোরেলের কারণে আশাবাদী। তারা বলছেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় মেলায় মানুষের উপস্থিতি বাড়বে।
বই বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেলের জন্য এবার মেলায় আসা সহজ হবে সবার জন্য। অনেকে কয়েকবার করে আসতে পারবেন তাদের বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে। আশা করছি মেট্রোরেলের কারণে বেনিফিট পাবো।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, মেট্রোরেলের কারণে যাতায়াতের সুবিধা বেড়েছে। সাহিত্যানুরাগীরা এবার নির্বিঘ্নে মেলায় আসবেন। এতে মেলায় পাঠক সমাগম বাড়বে। বই বিক্রিও ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে।
মেলায় উপস্থিত সাহিত্যিক মুনতাসীর মামুন বলেন, বইমেলা প্রতি বছরই নতুন। অনেকেই এই সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হন। তবে মেট্রোরেলের কারণে এবার বইমেলায় সেই সংখ্যাটা বাড়বে। কারণ, যাতায়াত এবার সহজ হয়েছে।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার যারা মেলায় আসবেন, তারা খুব অল্প সময়েই স্বস্তি নিয়ে আসতে পারবেন। আবার যাওয়ার সময়ও ভোগান্তিতে পড়বেন না। এতে দীর্ঘ সময় তারা মেলায় উপস্থিত থেকে মেলাকে প্রাণবন্ত করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা পাঠকের কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যেন রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু রাখা হয়। তারা অনুরোধ রেখে মেলা শুরুর ১০ দিন আগে থেকেই রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু করেছে। আমরা এ-ও বলেছি যেন শুক্রবারও মেট্রোরেল চালু রাখা হয়।