X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রমা ম্যানেজমেন্টের চেয়ে মুখ খোলার ট্রমা বেশি

উদিসা ইসলাম
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০০আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০০

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাবেয়া (ছদ্মনাম) ক্লাসে উজ্জ্বল-উচ্ছল ভালো ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। এক বছর যেতে না যেতে ক্লাসের একটি গ্রুপের সঙ্গে বাদানুবাদকে কেন্দ্র করে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় তাকে। রাবেয়া কারো সঙ্গে মেশার সুযোগ পান না।  ক্লাসে ঢুকলে বুলিংয়ের শিকার হওয়ার ফলে ক্লাস ফাঁকি দেন। প্রভাব পড়তে শুরু করে রেজাল্টে।  একইসঙ্গে বাসা থেকে চাপ তৈরি হয়। কিন্তু কীভাবে সহপাঠীদের সঙ্গে আবারও একসাথে হতে পারবেন তা বুঝতে পারেন না। কার সঙ্গে কথা বলবেন জানেন না। এ সময় তাকে হলের এক শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষক পরামর্শ কেন্দ্রের কথা বললেও যেতে রাজি হন না। কী ঘটেছিল সহপাঠীদের সঙ্গে, কেন সেই দলটি বিরূপ আচরণ করছে সেটা কারোর সঙ্গে শেয়ার করতে চান না। তার ধারণা, যেখানেই মুখ খুলবেন বিষয়টি ওই সহপাঠী গ্রুপের কাছে যাবে। পরিণতি তার অজানা।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তৃতীয় বছরে এসে একজনকে ভালো লাগার কথা জানান সায়মন (ছদ্মনাম)। সাড়া না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হতে শুরু করেন এবং বারবার সেই সহপাঠীকে নক করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেই সহপাঠী রাস্তায় তাকে থাপ্পড় মারে এবং সায়মন ঘরে ফিরে দরজা লাগিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বাসার কাজের লোক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর সায়মন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেড়ে দেন। নারীদের বিষয়েও তার বিদ্বেষ তৈরি হয়। উন্নয়নকর্মী মা তাকে কাউন্সিলিংয়ে পাঠাতে চাইলে সায়মনকে রাজি করানো যায়নি। তৃতীয় ব্যক্তির সামনে কথাগুলো বললে তিনি কীভাবে বিচার করবেন সেই ভয়ে তাকে কোথাও নেওয়া সম্ভব হয়নি।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ১২ মাসে ৫১৩ জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালে আত্মহত্যা করেছে ৫১৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ, কলেজ শিক্ষার্থী ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ১৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। ৫১৩ জনের মাঝে পুরুষ শিক্ষার্থী ২০৪ জন, যা ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থী ৩০৯ জন, যা ৬০ দশমিক ২ শতাংশ।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতার কারণ চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থার কথা বলছেন মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসকরা। যদিও আত্মহত্যা চেষ্টা করেছেন এমন একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর কাউন্সিলিংয়ে তারা আগ্রহী না। তাদের গোপন কথা শুনে লুকিয়ে রাখবেন সে বিশ্বাস তারা করেন না। তাদের মতে, কথা বলে নিজেকে হালকা করবো, ট্রমা ম্যানেজ করবো নাকি বলার পরে কী হবে সেই ট্রমা ম্যানেজ করবো, সেটাই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আত্মহত্যার চেষ্টার পরবর্তী শারীরিক কষ্টের কথা উল্লেখ করে তারা বলছেন, আমাদের কথা শোনার জন্য যদি কেউ একজনও থাকতো, হয়তো এই পথে যেতে হতো না।

দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলিংয়ের সুযোগ থাকলেও সেগুলো যথেষ্ট প্রফেশনালিজম না মানার অভিযোগ আছে।

আত্মহত্যা রোধে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দরকার উল্লেখ করে সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলিং দফতর খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। শিক্ষার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় শুভ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট প্রয়োজন বলে আমরা অনেক আগে থেকেই বলছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে। এখন সময় এসেছে দ্রুত সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়ার।’

কেবল কাউন্সিলিং সেন্টার খুললে হবে নাকি অন্য কোনও উদ্যোগ দরকার প্রশ্নে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা আমাদের দেশের একটা স্টিগমা। প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিলিং সেন্টারটা সবসময় প্রফেশনাল কাউন্সিলর দ্বারা পরিচালিত হয় না, প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের দ্বারা হয়। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের এই প্রফেশনাল জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে, ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়। আস্থার জায়গা তৈরি করা দরকার। যারা কাউন্সিলিং নিতে যাবে তাদের আস্থা আনার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিলরদের। না হলে শিক্ষার্থীরা যাবে না।’

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৮৬ শতাংশ, শিল্প খাতে উল্লম্ফন
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৮৬ শতাংশ, শিল্প খাতে উল্লম্ফন
অকার্যকর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ নেবে মন্ত্রণালয়
অকার্যকর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ নেবে মন্ত্রণালয়
সাংবাদিকদের হুমকি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধক
বিএফইউজে-ডিইউজের প্রতিবাদসাংবাদিকদের হুমকি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধক
বরখাস্তের কয়েক ঘণ্টা পর পুতিনের সাবেক পরিবহনমন্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
বরখাস্তের কয়েক ঘণ্টা পর পুতিনের সাবেক পরিবহনমন্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ
‘আ.লীগের সদস্যরা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে না পারে’
‘আ.লীগের সদস্যরা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে না পারে’