দেশের অর্থনীতিতে ধীরে হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলছে। সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থিরমূল্যে দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।
সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাময়িক এ জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১.৯৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪.৪৮ শতাংশ। অপরদিকে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই দুই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫.৮৭ ও ৪.৪৭ শতাংশ।
সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিক, অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ সময়কালে সম্মিলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য কম।
শিল্প খাতে প্রাণচাঞ্চল্য, কৃষিতে মন্দা
জিডিপির প্রান্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতেই সবচেয়ে বেশি গতি ফিরে এসেছে। এ খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় উল্লেখযোগ্য বেশি।
প্রথম প্রান্তিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৪৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। এ তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, বছরজুড়েই শিল্প খাতে ধাপে ধাপে উন্নতি ঘটছে।
অপরদিকে কৃষি খাতের অবস্থা তুলনামূলক দুর্বল। তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৪২ শতাংশ, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪.০২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকেও কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ০.৭৬ ও ১.২৫ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে খুব বেশি অগ্রগতি নয়।
সেবা খাতেও ইতিবাচক ধারা
সেবা খাতেও দেখা গেছে উন্নয়নমূলক ধারা। তৃতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের ৪ দশমিক ৩১ শতাংশের তুলনায় বেশি।
তবে বছরের শুরুতে এ খাতে কিছুটা মন্থরগতি দেখা যায়। প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৪১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩.৭৮ শতাংশ। তুলনায় আগের বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫.৫২ ও ৭.১০ শতাংশ।
জিডিপির আকার বেড়েছে
চলতি মূল্যে বিবেচনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের আকার দাঁড়িয়েছে ১৪,১৯৭ বিলিয়ন টাকা, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ১২,৬৭০ বিলিয়ন টাকা।
সবচেয়ে বড় দিক হলো— শিল্প ও সেবা খাতের ঘুরে দাঁড়ানো প্রবণতা সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে, যদিও কৃষি খাতের মন্দা এখনও উদ্বেগজনক রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকলে আগামী প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির ধারা আরও ইতিবাচক হতে পারে। তবে কৃষি খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নিশ্চিত না হলে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির গতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।