আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই খালি পায়ে বুকে কালো ব্যাজ পরে ব্যানার ও পুষ্পস্তবক নিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে বাবা-মা কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের হাত ধরে অসংখ্য শিশু এসেছে শহীদ মিনারে ফুল দিতে।
শহীদ মিনার কী বা কেন এখানে ফুল দেওয়া হয় তা সঠিকভাবে না জানলেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিয়েছে অগণিত শিশু ও কিশোর-কিশোরী। ফুল দিতে আসা বেশিরভাগ শিশুর মুখে ফুটে উঠেছে শহীদ মিনার এবং বাংলা বিভিন্ন বর্ণমালা। আনন্দ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে শিশুরা তাদের হাতে মুখে এবং কপালে একুশে ফেব্রুয়ারি সংবলিত এসব লেখা অঙ্কন করছে।
মুখে শহীদ মিনার অঙ্কন করা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী গালিব বলে, যাদের জন্য আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে আজ আমরা শহীদ মিনারে এসেছি। এখানে আসার পর আম্মু জানতে চাইলো আমরা মুখে শহীদ মিনার আঁকবো কিনা। তারপর আমরা দুই ভাই-বোনই মুখে শহীদ মিনার এঁকেছি।
মায়ের সঙ্গে খালি পায়ে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে মাইমুন। তার মা মারিয়া জানান, এবার মাইমুনকে প্লেতে ভর্তি করানো হয়েছে। শহীদ মিনারে কেন এসেছো এমন প্রশ্নে আধো আধো কণ্ঠে মাইমুন জবাব দেয়, আম্মুর সঙ্গে ফুল দিতে এসেছি। মুখে শহীদ মিনারে এঁকে ভীষণ খুশি মাইমুন।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাবার হাত ধরে শহীদ মিনারে এসেছে ছয় বছর বয়সী মাহমুদুল ইসলাম তৌসিফ। মাদ্রাসা পড়ুয়া তৌসিফ বলে, আমার বাবা বলেছেন বাংলা ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের জন্য এই শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। তাই আমি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছি। তৌসিফ মুখে শহীদ মিনার আঁকা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
বাবার হাত ধরে শহীদ মিনারে আসা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া রাফসান বায়না ধরেছে মুখে শহীদ মিনার আঁকবে। রঙ মুখের ক্ষতি করে, বারবার বলার পরও সে জেদ ধরে। শেষ পর্যন্ত মুখে শহীদ মিনার ও একুশে ফেব্রুয়ারি লিখে বেশ আনন্দিত রাফসান। বাংলা ট্রিবিউনকে রাফসান বলে, ভাষা শহীদদের ইতিহাস, বাংলা ভাষার ইতিহাস আমার সব জানা। স্কুলে শেখানোর আগেই আম্মু শিখিয়েছে। তাই আজ আব্বুর সঙ্গে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিতে এসেছি।
শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা শিশুদের হাতে ও মুখে রঙ-তুলির আঁচড়ে শহীদ মিনার ও বিভিন্ন ধরনের লেখা এঁকে দিতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন যুবককে। তাদের মধ্যে একজন মো. রাকিব খান। তিনি ঢাকা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের আর্ট শেখানো তার শখ। এই শখ তার বাড়তি রোজগারের পথও খুলেছে। রাকিব বলেন, সকাল থেকে আমি ৫০-৬০ জন শিশুর মুখে শহীদ মিনার এঁকে দিয়েছি। তারা আমাকে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দিয়েছে। আবার কেউ কেউ দেয়নি। যে শিশুই আঁকতে চেয়েছে এঁকে দিয়েছি।
ছবি: প্রতিবেদক