X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু হাসপাতালে তিন দিনের ব্যবধানে দুবার আগুন!

আরমান ভূঁইয়া
১৯ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৩৫আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:১২

ঢাকা শিশু হাসপাতালে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে চতুর্থ তলার কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগে এসি বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রেণে আসে। এর আগে গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) একই হাসপাতালের তৃতীয় তলায় বি-ব্লকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায় ইন্টারনেটের ক্যাবল থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে দুটি ঘটনায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে তিন দিনের ব্যবধানে দুবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনরা। তারা বলছেন, অসুস্থ শিশুদের নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এটি দেশের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল, অথচ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নেই।

অগ্নিকাণ্ডের সময় ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের আগুনের ধোঁয়া বিভিন্ন ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনরা দিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। আইসিইউতে থাকা শিশু রোগীদের জরুরি বিভাগ ও অন্য ওয়ার্ডগুলোয় স্থানান্তর করা হয়।

আগুনোর সূত্রপাত সম্পর্কে কথা হয় কয়েকজন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে। রীনা নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আগুন লাগার সময় আমি আইসিইউর গেটে সামনে ছিলাম। হঠাৎ দেখি ধোঁয়ায় পুরো ফ্লোর ভরে যাচ্ছে। আমি চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকি। দ্রুত আইসিইউর ভেতরে গিয়ে দেখি আমার রোগী (হার্টের রোগী) রানীর (১০ মাস) মাথার ওপরে সিলিংয়ে আগুন জ্বলছে। তখন ভেতরে শুধু দুজন নার্স ছিল। তারা আগুন নেভাতে তেমন কিছুই করতে পারছিল না।

আগুন লাগার পর শিশুদের নিয়ে বাইরে চলে আসেন মা ও স্বজনরা   ছবি: নাসিরুল ইসলাম

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ঈদের আগে হাসপাতালে আসছি। এখানে আগুন লাগার আগে গত মঙ্গলবার তৃতীয় তলায় আগুন লেগছিল। ওই ঘটনার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়নি।‘

একই অভিযোগ করে আরেক রোগীর মা মরিয়ম বলেন, ‘এই হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা ভালো। তবে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো না। যেকোনও কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলে কি অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে না?’

ফায়ার সার্ভিসও নিশ্চিত করেছে শিশু হাসপাতালের পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না।

শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রেণ শেষে বিকালে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে বড় ঢাকা শিশু হাসপাতাল। অথচ এখানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া আর কিছুই নেই। ছিল না অগ্নিনির্বাণের ফায়ার হাইড্রিন বা পানির ব্যবস্থা। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে পাশের মানসিক হাসপাতাল থেকে রিজার্ভ পানি এনে কাজ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে বেশ কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে। যেখানে-সেখানে বিভিন্ন ক্যাবল (তার) আনা-নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার হাসপাতালের তৃতীয় তলায় বারান্দায় ইন্টারনেট ক্যাবল বক্স থেকে একটি আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। তবে ওই আগুন কোনও বড় আগুন রূপ নেয়নি।’

সন্তানের কষ্টে কাঁদছেন বাবাও   ছবি: নাসিরুল ইসলাম

এ বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা রয়েছে।’

এর আগে আগুন লাগার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় তলার একটি রান্নাঘরের চুলা থেকে একজনের কাপড়ে আগুন লেগেছিল। তবে ওই ঘটনায় কোনও ক্ষয়ক্ষতির কিছু হয়নি।’

আগুনের ঘটনায় আতঙ্কিত হয় রোগী ও স্বজনরা
শুক্রবার দুপুরে শিশু হাসপাতালের চতুর্থ তলার কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগে আগুনের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীদের নিয়ে স্বজনরা ভবনের বাইওে চলে আসে। এতে অনেক গুরুতর রোগীকেও কয়েক ঘণ্টার জন্য চিকিৎসার বাইরে রাখা হয়। এ ছাড়া বাইরে প্রচণ্ড গরম ও মানুষের ছোটাছুটির কারণে ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে রোগী ও স্বজনদের।

স্বজনরা বলেন, আগুন লাগার পর হাসপাতাল ভবন ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন যে যেভাবে পেরেছে নিজের শিশুসন্তানকে বাঁচাতে হাসপাতালের ভবন থেকে বের হয়ে যান।

হাসপাতাল ভবনের চতুর্থ তলায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ মাস বয়সী শিশুসন্তান হাবিবুর রহমানের চিকিৎসা চলছিল। তার মা হাজিরা আক্তার বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার শিশুকে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তার প্রচণ্ড জ্বর। চিকিৎসা চলছিল। আগুন লাগার পর সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করছিল। আর তখন ধোঁয়ায় ভেতরে অন্ধকার হয়ে গেছে। দিশা না পেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে নিচে নেমে আসি।’

পেটে ব্যান্ডেজ নিয়ে সন্তানকে নিয়ে বাইরে বসে আছেন অভিভাবকরা  ছবি: নাসিরুল ইসলাম

কার্ডিয়াক আইসিইউ রোগীদের অন্যত্র চিকিৎসাব্যবস্থা
ঢাকা শিশু হাসপাতালের চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগে আগুনের ঘটনায় সেখানে থাকা রোগীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, ‘ওই ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি শিশুর চিকিৎসা চলছিল। পরবর্তী আইসিইউ ব্যবস্থার আগ পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য অতিরিক্ত ১০টি অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীর সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

অগ্নিকাণ্ডের কারণ
শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।

মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। আমরা প্রাথমিকভাবে ধরণা করছি আইসিইউর ভেতরের এসি থেকে আগুন লাগতে পারে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
গাজীপুর-নীলফামারীর দুই হাসপাতালে দুদকের অভিযান
দুই দফা অভিযানেও খোঁজ মেলেনি শিশুটির
সর্বশেষ খবর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
লন্ড‌নের মেয়র প‌দে হ্যাটট্রিক জ‌য়ের প‌থে সা‌দিক খান
লন্ড‌নের মেয়র প‌দে হ্যাটট্রিক জ‌য়ের প‌থে সা‌দিক খান
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা