X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আইনে স্বীকৃত অনেক অবিচার এখনও আছে: এম এ মান্নান

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৬আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৬

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান বলেছেন, আমাদের সমস্যা এই মুহূর্তে নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য এবং অবিচার। আমি মনে করি, অনেক অবিচার, অযৌক্তিক বিষয় এখানে আছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে— অনেকগুলো আইন দ্বারা স্বীকৃত। এগুলো সব অতীতের আইন। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে এ ধরনের আইন সংস্কার করার জন্য। কিন্তু আইন তো শুধু কথাবার্তা, আমাদের একটা আমলাতন্ত্র আছে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল লেকশোর-এ ‘দলিত ও ঋষি সম্প্রদায়ের টেকসই উন্নয়ন রূপরেখার সুপারিশমালা’ শীর্ষক জাতীয় গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আলোচনাটি  আয়োজন করে কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যানালের কারিগরি সহায়তায় এবং ইউএসএআইডি’র সহযোগিতায় বাস্তবায়িত প্রোমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস কর্মসূচি।

এম এ মান্নান বলেন, ‘এক সময় সমাজে অনেক দুঃখ দুর্দশা, ব্যথা- বেদনা ছিল। এগুলো মেনে নিয়েছিল মানুষ।  এখন আর আগের মতো মেনে নেওয়ার দিন নয়। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। কিছু সমস্যা আমি নিজে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি। করবো কী তাহলে। আমরা কি তাহলে উন্নয়ন করবো না? আগে কি এসব সমস্যার সমাধান করবো? আজকের পানি, স্যানিটেশন, নিরক্ষরতা— এগুলো সমস্যার সমাধান তাহলে কবে করবো? এজন্য আমাদের  একটা দোলাচল থাকে।’

তিনি বলেন, ‘আমার প্রধানমন্ত্রী, তার সঙ্গে কাজ করেছি আমি এক্ষেত্রে। আমি বিশ্বাস করেই বলি— তিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তিনি অবশ্যই চান প্রান্তিক এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন। উনি মাথা ঘুরিয়ে হাওড় এলাকার দিকে তাকাতে চান, কিন্তু সবসময় পারেন না। কারণ, অনেক ঐতিহাসিক বাধা আছে এখানে। তবুও আমি বলবো, শেষ বেলায় এসে আমরা কিছু করতে পেরেছি। আমরা চরম দারিদ্র্য, না খেয়ে ঘুমানোর মতো ঘটনা কিছুটা কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আমরা ময়লা পানি পান, কিংবা ময়লা স্যানিটেশন ব্যবহার রোধ করতে পেরেছি। নিরক্ষরতা আমাদের জন্য একটা ভয়ংকর অভিশাপ। এটার যে মূল সেটাকেও আমরা ক্ষীণ দমন করতে পেরেছি। তবে দীর্ঘ যাত্রা বাকি। এজন্য দরকার টেকসই উদ্যোগ।’

এম এ মান্না আরও বলেন, ‘জাতীয়ভাবে আমাদের বিষয়গুলো একটু রিঅ্যারেঞ্জ করা দরকার। শপিং লিস্ট ঠিকঠাক করা দরকার। শপিং লিস্টে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এগুলো আগে নিয়ে আসা হবে, নাকি অত্যন্ত সুক্ষ্ম বিষয়াদি যেগুলো নিয়ে আমরা সোচ্চার আছি। পুল-কালভার্ট তৈরির জন্য ইঞ্জিনিয়ার আনলেই হয়ে যায়। কিন্তু সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনে একটু ছোঁয়া দিতে গেলেই টপটপ করে নড়ে সবজায়গা। কয়েকবছর আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটা আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিলেন, পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের ভাগাভাগির ব্যাপারে। আমিও চাই, ছেলেমেয়ে সমান ভাগে সম্পত্তি পাক। কিন্তু তিনি সেটা পারলেন না শেষ পর্যন্ত। আপস করতে হলো। এগুলো হচ্ছে আমাদের বাস্তবিক ব্যবস্থা। এগুলো বাস্তবায়ন খুবই কঠিন।’      

আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান মানিক, ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর রিড এশলিম্যান, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি কেটি ক্রোক এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট গোয়েনডোলিন অ্যাপেল।

গোলটেবিল আলোচনায় খুলনার দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং ঢাকার ঋষি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা দলিত ও ঋষি সম্প্রদায়ের টেকসই উন্নয়ন রূপরেখা সম্পর্কিত পাঁচটি সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এগুলো হচ্ছে— সংখ্যালঘুদের জন্য জাতীয় কমিশন প্রতিষ্ঠা করা এবং সংখ্যালঘুদের বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুদের অধিকার (যেমন, আদিবাসী-দলিত-সংখ্যালঘু কমিটি বা দলিত ককাস) ত্বরান্বিত করার জন্য ককাস গঠন বা পুনসক্রিয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত ও নিশ্চিত, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বৈষম্যবিরোধী আইন দ্রুত বাস্তবায়ন এবং দলিত ও ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বেসরকারি খাতে প্রণোদনা দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিদ্যমান নীতিমালা বাস্তবায়ন ও পুনপর্যালোচনা করা।

সুপারিশের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোটেক শামিমা আক্তার খানম, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট গোয়েন অ্যাপেল দলিত ও ঋষি সম্প্রদায়ের অধিকতর উন্নয়নে অবদান রাখায় গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থা ও দলিতকে কাউন্টারপার্ট গ্লোবাল সিভিক চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ প্রদান করেন।

সমাপনী বক্তব্যে প্রোমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস কর্মসূচির চিফ অব পার্টি কেটি ক্রোক বলেন, প্রান্তিক মানুষ, নাগরিক সমাজ ও সরকারের সমন্বিত কাজের মাধ্যমেই সম্ভব প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখা।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে পিএআর প্রকল্প বাংলাদেশি সহযোগী সংস্থাগুলোকে দেশের অপেক্ষাকৃত কম ও প্রতিনিধিত্বহীন ২ হাজার ৩০৩ জন নাগরিককে একই কাতারে আনতে সহায়তা করে। যারা নিজেরাই তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা চিহ্নিত করে এবং তা সমাধানের কার্যকরী  সুপারিশ দেয়। এরপর সেসব চিহ্নিত সমস্যা এবং সুপারিশ নিয়ে তারাই ২১৭ জন রাজনৈতিক নেতা এবং ৪৬ জন সংসদীয় প্রার্থীর কাছে সরাসরি তুলে ধরে। একইসঙ্গে নির্বাচনি ইশতেহারে এবং প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে সেগুলো অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায়।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
শান্তি চুক্তি হলেও পাহাড়ে এখনও আস্থা তৈরি হয়নি
‘জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবুজায়ন ও জলাধার রক্ষার বিকল্প নেই’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলটেবিলশ্রমিকের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান
সর্বশেষ খবর
ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল, বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল, বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
গাইবান্ধায় আগুনে পুড়ে ছাই ১০ দোকান
গাইবান্ধায় আগুনে পুড়ে ছাই ১০ দোকান
আজ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস
আজ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প