দেশে বাল্য বিয়ে রোধের হার তুলনামূলকভাবে কমছে। ২০০৬ সালে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের বাল্যবিয়ের হার ৩৯ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। গত ১০ বছরে বাল্যবিবাহ রোধ করার যে গতি সেটি দ্বিগুণ করা হলে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৩০ শতাংশে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার বেশি।
বুধবার (৫ জুন) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাল্যবিয়ে বন্ধে যৌথ বৈশ্বিক কর্মসূচির (জিপিইসিএম) তৃতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাল্যবিয়ের পেছনে কারণগুলোর মধ্যে আছে লিঙ্গ বৈষম্য ও সামাজিক রীতিনীতি, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং যৌতুক, নিরাপত্তাহীনতার উপলব্ধি, মেয়ে ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি, জ্ঞান/সচেতনতার অভাব, আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাব, অন্তর্ভুক্তিমূলক/উপলব্ধ শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব (মেয়েদের জন্য), মানবিক ও জলবায়ু সংকট, দুর্গম ও ‘অবন্ধুত্বপূর্ণ’ পরিষেবা।
২০৩০ সাল পর্যন্ত চলা এই গ্লোবাল প্রোগ্রামটি দেশজুড়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করবে। বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ, শিক্ষা সমাপ্তির হার বৃদ্ধি এবং সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলো কাজে লাগিয়ে ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণে এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইন কার্যকর করতে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য আমাদের অবশ্যই আচরণগত দিকটির দিকেও মনোনিবেশ করতে হবে, কারণ দীর্ঘকাল ধরে যা অনুশীলন করা হচ্ছে তা একা আইন পরিবর্তন করতে পারে না।
ইউএনএফপিএ’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লোখাস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে হ্রাসের হার প্রতি বছর মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ, যার অর্থ বাল্যবিবাহ নির্মূল করতে বাংলাদেশের দুই শতাব্দী বা ২১৫ বছর সময় লাগবে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গোয়াভুয়া বলেন, প্রতিটি শিশু, বিশেষ করে গ্রামীণ কিশোরী ও তরুণ নারীদের ক্ষমতায়নের নতুন অঙ্গীকার নিয়ে ইউনিসেফ এই নতুন ধাপে প্রবেশ করছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আগামী চার বছরে (২০২৪-২০২৭) ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ যৌথ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ১২ লাখেরও বেশি কিশোরীকে (১০-১৯ বছর বয়সী) জীবন দক্ষতা বা সমন্বিত যৌন শিক্ষা (সিএসই) কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া ইউএনএফপিএ-ইউনিসেফ গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু এন্ড চাইল্ড ম্যারেজ সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক উদ্যোগ। এটি বেলজিয়াম, কানাডা, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনপুষ্ট।