X
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২

বৈষম্য নিরসনে ৮ দাবি বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৮ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৭আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৭

বৈষম্য নিরসন ও বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়াসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। এসময় তারা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি থাকলেও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া বড়ুয়া জনগোষ্ঠী নানা রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। দাবি না মানা হলে রাষ্ট্রীয় সংবিধানের অধীনে গণতান্ত্রিক পন্থায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার কথাও জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সব নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং সব নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সম্মিলিতভাবে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর চুক্তি করা হয়। 

তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তির পরেও ২৭ বছর ধরে পাহাড়ের বাঙ্গালিরা (মুসলমান, হিন্দু ও বড়ুয়া) চরমভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সদস্য ব্যতীত মুসলমান, বড়ুয়া, হিন্দু, তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুরখা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। এই চুক্তিতে রাঙামাটি চাকমা, খাগড়াছড়ি ত্রিপুরা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা মারমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

নির্মল বড়ুয়া মিলন বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি উপজাতি জনগোষ্ঠীকে এককভাবে সুবিধা করে দিয়েছে। চুক্তির পর বিভিন্ন কমিটি, বোর্ড, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি, আঞ্চলিক পরিষদ, জনগোষ্ঠী প্রতিনিধি গঠন করা হলেও এসব কমিটিতে এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রাখা হয়নি বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি। বিগত স্বৈরাচারের শাসনকালীন ১৭ বছর ধরে পাহাড়ে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কিছু পদলেহনকারী স্বঘোষিত নেতার কারণে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কথা বলা সুযোগ পর্যন্ত ছিল না।

নির্মল বড়ুয়া মিলন বলেন, ৫ আগস্টে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পার্বত্যবাসীর প্রত্যাশা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ও বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বর্তমান বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে ধারণ করা অন্তর্বর্তী সরকার নতুনভাবে গঠিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে আগের ন্যায় বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে। 

সংগঠনের ৮ দফা দাবি

১। পার্বত্য চুক্তিটি সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।

২। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ড সভায়, তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসনে আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে, তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলা প্রশাসনে আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে, তিন পার্বত্য জেলার পৌরসভার শহর উন্নয়ন কমিটিতে বিশেষ বিবেচনায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। 

৩। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর শুমারির তথ্যে অধ্যায় ৩ রাঙামাটি জেলার শুমারির ফলাফল ৩.১.৪ এর ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা ছকে বা খানায় বৌদ্ধ বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পরিচিতি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এ শুমারি সম্পর্কিত অধিকতর তথ্য-উপাত্ত আলাদাভাবে ছকে বা খানায় বৌদ্ধ ‘বড়ুয়া’ জনগোষ্ঠীর পরিচিতি সংযুক্ত করা।

৪। রাষ্ট্রীয়ভাবে বৌদ্ধ ‘বড়ুয়া’ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বৈষম্যের শিকার বিধায় তিন পার্বত্য জেলা বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে সংসদ সদস্য পদ সংরক্ষিত করে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়া।

৫। বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসেবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।

৬। ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বসবাসরত অন্য সব জনগোষ্ঠীর ন্যায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সদস্যদের সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।

৭। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় দিবস এবং শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বসবাসরত বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিজস্ব সংগঠনের মাধ্যমে উল্লেখিত দিবসে আমন্ত্রণ জানানো।

৮। বৈষম্য বিলোপ কমিশন গঠন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সভাপতি ডা. বাদল বরণ বড়ুয়া, প্রধান উপদেষ্টা  ভদন্ত অদিতানন্দ মহাথোরো, কেন্দ্রীয় সংগঠক ত্রিদিব বড়ুয়া টিপু, শিক্ষক প্রকাশ কুসুম বড়ুয়া, জেলা সংগঠক নিপ্পন বড়ুয়া, জুয়েল বড়ুয়াসহ প্রমুখ।

/এসএ/এমকেএইচ/
সম্পর্কিত
‘যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে জাতিসংঘ অফিস খুলতে চায়’
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে অবস্থান
‘ভবিষ্যতে আ.লীগ বলে কোনও দল থাকবে না’
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১০ জুলাই, ২০২৫)
রিয়ালকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পিএসজি
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপরিয়ালকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পিএসজি
শাপলা দলীয় প্রতীক না হলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না: সারজিস
শাপলা দলীয় প্রতীক না হলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না: সারজিস
কুমিল্লা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত
কুমিল্লা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
বিবিসির অনুসন্ধানে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের যে চিত্র উঠে এলো
বিবিসির অনুসন্ধানে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের যে চিত্র উঠে এলো