বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৩০ দিনে দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজার ৪৪২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কার কার্যক্রম প্রায় শেষ করার বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, ওই সব সহিংস ঘটনার মধ্যে রয়েছে হত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাঙচুর, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার, জোর করে বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, জোর করে পদত্যাগ প্রভৃতি। সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত, ২ হাজার ১০টি। এছাড়া গত বছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের শুরু থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন করে আরও ২৫৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এবং তাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও পেশ করা হয়। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আশা করেছিল, সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান বৈষম্য ও নিপীড়নগুলো চিহ্নিত করে তা অবসানের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপের সুপারিশ করার জন্য আলাদাভাবে একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য কোনও আলাদা কমিশন গঠন করা হয়নি। পরে যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে সেখানেও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে কোনও প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এমনকি সংবিধান সংস্কার কমিশনেও কোনও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই।
তারা আরও বলেন, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কমিশনে বেশকিছু লিখিত প্রস্তাবনা পাঠানোর পরও এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন তারা মনে করেননি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান বাংলাদেশের ১০ শতাংশের অধিক ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারত্বের বিষয়কে বিবেচনায় না নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। আমরা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই। এর মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান বৈষম্য ও নিপীড়নকে চ্যালেঞ্জ না করে তা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন– সংগঠনের সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক, উষাতন তালুকদার, নির্মল রোজারিও, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, জে এল ভৌমিক, সাংগঠনিক সম্পাদক দিপঙ্কর ঘোষ, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে প্রমুখ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।