চব্বিশের ছাত্র আন্দোলন দমাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশ নিয়ে বিবিসি ওয়ার্ল্ডের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
বুধবার (৯ জুলাই) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিবিসির ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনকে অনৈতিক সাংবাদিকতার একটি নির্লজ্জ উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সম্প্রতি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে একটি বিকৃত তথ্যে ভরা তথাকথিত ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি টেলিফোন আলাপের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর অনুপস্থিত থেকে গেছে এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলে দাবি করলেও বিবিসি সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতিমালাও মানতেও ব্যর্থ হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থান দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন-পীড়ন চালানোর অনুমোদন যে শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন, ফাঁস হওয়া একটি অডিও টেপ যাচাই করে তার সত্যতা পেয়েছে বিবিসি আই। ওই অডিওতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যেখানেই পাবে, গুলি করবে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অজ্ঞাত পরিচয় একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ড এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, যা দিয়ে বলা যায়, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা’ হিসেবে জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহকে বর্ণনা করেছে বিবিসি। তাদের ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অনুসন্ধানে ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি হত্যাযজ্ঞের নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা আগে এতটা স্পষ্টভাবে আসেনি। এই অনুসন্ধানে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি পাওয়া গেছে।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে জয় তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য নেওয়ার কোনও চেষ্টাই দেখা যায়নি। বিবিসি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে– এমন কোনও ইঙ্গিতও সেখানে মেলে না। কোনও প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপটও উপস্থাপন করা হয়নি। কথিত ওই ‘অনুসন্ধান’ শেষ হয়েছে কয়েক সেকেন্ডের খণ্ডিত অডিও, একটি কথিত ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং কয়েকজন সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তির বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে।”
বিবিসির ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জয় বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘বিবিসির প্রতিবেদনটি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৫২ জন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ওই অভিযোগের পেছনে বিবিসি ‘কৌশলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষা করেছে।’
‘‘পুলিশ যে চরম পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল, সেটি ছোট করে দেখানো হয়েছে। সেনাবাহিনী শুরুতে সেখানে উপস্থিত থাকলেও হঠাৎ তারা কেন সরে গেলো এবং কেন পুলিশ সদস্যরা একা হয়ে থানায় আটকা পড়ে গেলেন, সেই প্রশ্ন খতিয়ে দেখা হয়নি।”
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন যাত্রাবাড়ীতে কীভাবে সহিংসতার শুরু ও শেষ হয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত নতুন তথ্য উঠে এসেছে তাদের অনুসন্ধানে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘পুলিশি সহিংসতার অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা’ হিসেবে ওই ঘটনাকে চিহ্নিত করেছে বিবিসি।
বিবিসি লিখেছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের তোলা ভিডিও, সিসিটিভি ভিডিও এবং ড্রোন থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে পুলিশ বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অবস্থান নিয়ে থাকা সেনা সদস্যরা সরে যাওয়ার পরপরই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি শুরু করে।
গুলি শুরুর পর বিক্ষোভকারীরা মহাসড়ক এবং আশপাশের অলিগলি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। সেই অবস্থায় টানা ৩০ মিনিট ধরে গুলি চালিয়ে যায় পুলিশ। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা কাছের সেনা ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেন।
বিক্ষোভকারীরা পরে যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্তত ছয়জন পুলিশ সদস্য সেখানে নিহত হন।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে শেখ হাসিনার পুত্র জয় লিখেছেন, “বিবিসির সঙ্গে কথা বলা দুই পুলিশ সদস্য স্পষ্ট করেই বলেছেন, তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল এবং জীবন হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতেই তারা গুলি চালান। এমন চরম পরিস্থিতিতে আদেশ নেওয়ার সুযোগও ছিল না। বাস্তবে সেই সময় দেশে কার্যকর কোনও সরকার ছিল না।’’
‘‘ওইদিন মোতায়েন সেনা সদস্যদের সঙ্গে বিবিসির কোনও কথা হয়নি, ফলে তাদের রহস্যজনকভাবে সরে যাওয়ার ব্যাখ্যা মেলেনি। অথচ বিবিসি কেবল কিছু আন্দোলনকারীর বক্তব্য ও মোবাইল-ড্রোন ভিডিওর ওপর ভরসা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল যে পুলিশ ‘নির্বিচারে’ গুলি চালায়।”
নিজের মায়ের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জয় লিখেছেন, ‘‘প্রতিবেদনটি যতই ‘একপেশে’ হোক না কেন, বিবিসি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করতে পারেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলির ঘটনা শুরু হয় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে, যা ইঙ্গিত করে গুলির আগেই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে গেছেন। এরই মধ্যে দেশের নানা প্রান্তের থানায় আক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। অসহায় পুলিশ সদস্যরা তখন নিজেদের জীবন রক্ষায় লড়াই করছিলেন।’’
‘‘যাত্রাবাড়ীতেও একই পরিস্থিতি ছিল। এর আগেও একাধিক জায়গায় পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিবিসি এসব তথ্য গোপন করে বিক্ষোভকারীদের ‘নিরপরাধ’ হিসেবে তুলে ধরেছে।”
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জয় লিখেছেন, “হাজার হাজার সহিংস বিক্ষোভকারী সেদিন যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালায়। সেখানে থাকা সেনা সদস্যরা রহস্যজনকভাবে সরে যাওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা থানায় ঢুকে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। এসব বর্বরতার অসংখ্য ভিডিও ইন্টারনেটে ঘুরছে, কিন্তু বিবিসি কেবল কিছু মোবাইল ও ড্রোন ফুটেজই বেছে নিয়েছে।”
‘‘সেদিন সেখানে ড্রোন কে চালিয়েছে, কীভাবে সেগুলো আগে থেকেই সেখানে ছবি তোলার জন্য ‘প্রস্তুত ছিল’, নিহতদের ময়নাতদন্ত কেন হয়নি, সেসব নিয়ে বিবিসি কেন অনুসন্ধান করেনি’’ এসব প্রশ্ন সামনে এনেছে জয়।
জয় লিখেছেন, ‘‘বিবিসি জানতেও চায়নি, এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সামনে বিকল্প কী ছিল। তারা পুলিশের গুলিতে কতজন নিহত হয়েছেন তা নির্দিষ্টভাবে দাবি করলেও, ১১ মাসের তথাকথিত অনুসন্ধানের পরও তারা জানাতে পারেনি ঠিক কতজন পুলিশ নিহত হয়েছেন। শুধু বলেছে ‘অন্তত ছয় পুলিশ নিহত হয়েছেন’। তারা এ নিয়েও কোনও অনুসন্ধান করেনি, কেন ৫ আগস্টের ঘটনার পরপরই তৎকালীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়মুক্তি দিয়েছিল।’’
বিবিসির প্রতিবেদনের অন্য অংশটি এক কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার ‘কথিত’ একটি ফোনালাপের অংশ নিয়ে, যেখানে তখনকার প্রধানমন্ত্রীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছোড়ার নির্দেশ দিতে শোনা যায়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের নজরদারি সংস্থা এনটিএমসি সে সময় শেখ হাসিনার অনেকগুলো অডিও কল রেকর্ড করে। তারই একটি কল রেকর্ড যাচাই করে দেখেছে বিবিসি আই। সেটি ১৮ জুলাইয়ের ঘটনা।
টেলিফোনে শেখ হাসিনার ওই নির্দেশের পরের কয়েক দিনে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দমাতে পুলিশের হাতে ‘সামরিক মানের রাইফেল’ দেওয়া এবং তা ব্যবহৃত হওয়ার কথা পুলিশি নথিতে লিপিবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
এ বছরের মার্চ মাসের শুরুতে ওই ফোনালাপের অডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় কে ফাঁস করেছিল, তা স্পষ্ট নয়। বিবিসি লিখেছে, ১৮ জুলাইয়ের কল রেকর্ডটি শেখ হাসিনার অন্য অডিওর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করার জন্য বিবিসি ওই অডিও টেপ অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ইয়ারশটকে দিয়েছিল।
ইয়ারশট বলেছে, অডিওটি জাল বা সম্পাদিত নয়। সেটি কৃত্রিমভাবেও তৈরি করা হয়েছে– এমন সম্ভাবনাও ‘খুব কম’।ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে নেওয়া হয়েছে, যেখানে ফোন কলটি স্পিকার দিয়ে বাজানো হচ্ছিল। কারণ সেখানে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং বাইরের শব্দ ধরা পড়েছে।
রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি (ইএনএফ) শনাক্ত করেছে ইয়ারশট, যা সাধারণত একটি রেকর্ডিং ডিভাইস ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হওয়ার কারণে ধরা পড়ে। বিবিসি লিখেছে, এটা ইঙ্গিত দেয় যে ওই অডিওটি ‘ম্যানিপুলেট’ করা হয়নি।
ইয়ারশট শেখ হাসিনার কথাও বিশ্লেষণ করেছে। তার বাক্যচয়ন, স্বরের ওঠানামা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ পরীক্ষা করে তারা ‘নয়েজ ফ্লোর লেভেল’ একই রকম পেয়েছে। কৃত্রিমভাবে অডিওটি তৈরি করার কোনও প্রমাণও তারা খুঁজে পায়নি বলে বিবিসির ভাষ্য।
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্রের বক্তব্যও রয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। তিনি বলেছেন, বিবিসি যে অডিও রেকর্ডের কথা বলেছে, সেটি আসল কিনা, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন।
বিবিসির ভূমিকার সমালোচনা করে জয় লিখেছেন, “মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অডিও ক্লিপ দেওয়া হয়েছে—কেন, কাকে উদ্দেশ করে, কী পরিস্থিতিতে ওই কথা বলা হয়েছে বা আদৌ সেটি তিনিই বলেছিলেন কিনা—এসব প্রশ্ন বিবিসি এড়িয়ে গেছে। প্রেক্ষাপট উপস্থাপন সাংবাদিকতার মৌলিক নীতি, কিন্তু বিবিসি তা উপেক্ষা করেছে। বাংলাদেশের সাবেক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিদেশে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিবিসি কেবল অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যই প্রকাশ করেছে।’’
‘‘জাতির উদ্দেশে শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষ তুলে ধরে সেটিকে পুলিশি নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রকৃতপক্ষে পুলিশই ছিল হামলার শিকার। এরকম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আগেও দেখা গেছে তথাকথিত একটি জাতিসংঘ ‘তদন্ত’ দলের কাজে। তারা সরকারি তথ্যের ওপর নির্ভর করে বলেছিল, ‘সম্ভবত ১৪০০ জন নিহত হয়েছে।’ এই সংখ্যা পরবর্তীকালে বর্তমান সরকার ব্যাপকভাবে প্রচার করলেও তাদের নিজেদের প্রকাশিত তালিকায় তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যা সেখানে দেখা যায়। এখন বিবিসি একই কৌশলে সরকারের দেওয়া তথ্যকে ‘অনুসন্ধানের’ নামে চালিয়ে সরকারি প্রপাগান্ডা উসকে দিয়েছে।”
জয় লিখেছেন, ‘‘প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, শেখ হাসিনার ‘কথিত’ ফোনালাপের তারিখ ১৮ জুলাই, যেটি ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সূত্র থেকেই নেওয়া’। তাদের দাবি অনুযায়ী, ওই দিন শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ফোনটি করেন।’’
“ধরে নেওয়া যাক বিবিসির দাবি সত্যি, তিনি ১৮ জুলাই ওই কথা বলেছেন, তাহলে কি কেবল ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়ে অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করাই বিবিসির অনুসন্ধান দলের দায়িত্ব ছিল? ফরেনসিক পরীক্ষাও তারা নিজেরা করেনি, বরং অন্য প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিয়েছে!”
জয় লিখেছেন, “যদি তারা সত্যিই ১৮ জুলাই বা তার আগে দেশের পরিস্থিতি যাচাই করতো, তবে অনেক তথ্য উঠে আসতো। যেমন- ১৭ জুলাই চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ১৫ সদস্যকে পিটিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়, যাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। ১৬ জুলাই থেকে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় ধারাবাহিকভাবে হামলা চলছিল।’’
“১৮ জুলাই ঢাকার রামপুরা টেলিভিশন স্টেশনে আগুন লাগিয়ে, সেখানে থাকা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর করা হয়। একই দিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আটকে পড়লে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করতে হয়। রাজধানীজুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় বাস, পুলিশ বক্স, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরেও হামলা হয়, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হন।”
তখনকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, এখনকার তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সম্প্রতি বলেছেন, তাদের আন্দোলনের প্রথম অংশ ‘অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র-জনতার।
তার ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে জয় লিখেছেন, “ঘটনার জন্য দায়ীদের একজন, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, সম্প্রতি প্রকাশ্যে বলেছেন, ১৮ জুলাই ছিল তাদের দেড় মাসব্যাপী কর্মসূচির চূড়ান্ত ধাপ। কিন্তু বিবিসি এসব প্রেক্ষাপট ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছে।”
জয় প্রশ্ন রেখেছেন, “ধরা যাক, একই ঘটনা যদি লন্ডনে ঘটে, বিবিসি সদর দফতর যদি ঘেরাও হয়, পুলিশ যদি ভেতরে অবরুদ্ধ ও প্রাণহানির শঙ্কায় পড়ে, তখন কি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার পুলিশকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দিতেন না? বিবিসির অনুসন্ধান দল কি তেমন একটি পরিস্থিতিতেও এমন একপেশে প্রতিবেদন প্রকাশ করতো?”