করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়িয়ে সবাইকে ঘরে বসে কোরবানির পশু কেনাকাটায় উৎসাহিত করতে সরকার চালু করলো ডিজিটাল হাট (www.digitalhaat.net)। এই হাটের মাধ্যমে ঘরে বসে পছন্দের কোরবানির পশু কেনা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এই হাটের উদ্বোধন করেন। সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হওয়ায় এই হাট থেকে কেনাকাটা সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তেব্যে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ যেন আরও ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য অধিক জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। ঘরে বসে নিরাপদে কেনাকাটা করুন। আমরা ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে সেই সুযোগ করে দিয়েছি।
তিনি জানান, করোনাকালে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষী ও খামারীদের অনুদান, প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আজ দেশে ২৪১টি ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করা হচ্ছে। এতো হাট থাকতে আমরা কেন শারীরিকভাবে হাটে গিয়ে নিজেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলবো? ঘরে বসে কোরবানি পশু কেনার সব আয়োজন বা ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। আপনারা ঘরে বসে কেনাকাটা করুন নিরাপদে থাকুন। তিনি জানান, আমরা একটি সেন্ট্রাল প্ল্যাটফর্ম বা ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করলাম। যে হাটের নাম www.digitalhaat.net। এই হাটের মধ্যে দেশের ২৪১টি ডিজিটাল হাটের তথ্য সন্নিবেশ করা আছে। হাটের এই ওয়েবসাইট ভেরিফায়েড। এই হাটে ঢুকলে সারাদেশের (বিভিন্ন জেলা, উপজেলার হাটও) হাটের তথ্য (লিংক) পাওয়া যাবে।
ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন শেষে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কোরবানির জন্য একটি গরু কেনেন। ওই গরুটি তিনি মানবসেবা নামের একটি প্রতিষ্ঠানে দান করে দেন। মানবসেবা প্রতিষ্ঠানটি গরু কোরবানি করে দুস্থদের মাঝে বিতরণ করবেন। গরু কেনার পুরো প্রক্রিয়াটি ৩ মিনিট ৭ সেকেন্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ডিজিটাল হাটের (ঢাকা) মোট ভিজিটর ৪ লাখ ১১ হাজার। ডিজিটাল হাটে (ঢাকায়) ৫০০ পশু শ্লটারিংয়ের (ফুল প্রসেস সেবা) ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯১টি আঞ্চলিক ডিজিটাল হাটের মোট ভিজিটর ১৯ লাখ ৫৬ হাজার। মোট ডিজিটাল হাটের ওয়েবসাইট তৈরি সরকারি পর্যায়ে ১৬টি। সোশ্যাল মিডিয়া হাট তৈরি ৯১টি (নির্মাণ চলমান রয়েছে আরও ২৩১টির) মোট পশু অনলাইনে এসেছে আনুমানিক ১ লাখ ৫০ হাজার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রওনক মাহমুদ জানান, এ বছর দেশে ১ কোটি ১৯ লাখ গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৭ হাজার গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে। গত বছর প্রস্তুত ছিল ১ কোটি ২০ লাখ গবাদি পশু। এর মধ্য থেকে ৮৫ হাজার কোরবানি পশু ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে বিক্রি হয়। যার বাজারমূল্য ৫৯৫ কোটি টাকা।
এ বছর দেশে যতো সংখ্যক গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্য থেকে অন্তত ২৫ শতাংশ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রির জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছবি ও তথ্য আপলোডের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক ড. আব্দুল মান্নান, ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।
এছাড়া দেশের সব জেলা ও উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ডিজিটাল হাটের আয়োজন করেছে। সব জেলার কোরবানির হাটের তথ্য পাওয়া যাবে http://www.livestockmarket.net/ এই লিংকে। এছাড়া অনলাইন কোরবানির পশুর হাটের জেলা, উপজেলা ও খামারিদের তথ্য পাওয়া যাবে http://www.dls.gov.bd/ এই লিংকে। সূত্র আরও জানায়, দেশে এ বছর কোরবানি করা যাবে এমন ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু রয়েছে।