X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

পার্সেল প্রতারণার আন্তর্জাতিক ফাঁদ!

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:০৮আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:০৮

বিদেশ থেকে পার্সেল পাঠানোর নামে চলছে প্রতারণা। মূলত মধ্যবিত্ত ও ধনী ব্যক্তিদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশিসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল সংগ্রহ করে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ নানান পরিচয়ে বার্তা পাঠানো হয়। টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে প্রতারকরা। এক পর্যায়ে স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হিরা, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার বা ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলে। পরে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পার্সেল প্রতারণা চক্রটির মূলহোতাসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। গ্রেফতারদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও রয়েছে। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন– বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর ৩৪) ও তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪)। এছাড়া নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১),  মঙ্গোলিয়ার নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনিকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২৮টি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেকবই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা, নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ওই চক্রের সদস্যরা কখনও বাংলাদেশে বসে আবার কখনও দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে পার্সেলে ডলার অথবা মূল্যবান উপহার পাঠানোর নামে অপারেটরদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল সংগ্রহ করতো। পরে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন পরিচয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতো। স্বর্ণসহ বিভ্ন্নি মূল্যবান পাথর, বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলতো। এরপর অপারেটরদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠাতো। অপারেটররা পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকরা বিভিন্ন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে কল করতো। তারা জানাতো, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজে ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

পার্সেল পেতে অপারেটররা কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দিতেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ধারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানাতো, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে, যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইনসহ অন্যান্য আইনে মামলা হবে বলে মিথ্যা ভয় দেখানো হতো।

প্রতারিত ব্যক্তিরা মামলার ভয়ে প্রতারকদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দাবি করা টাকা পাঠাতো। পরে পুলিশ ও সাংবাদিক জেনে গেছে বলে তাদের ম্যানেজ করার কথা বলে আরও বড় অংকের টাকা দাবি করা হতো। প্রতারকরা দাবি করা টাকা সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিতো।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কুলি থেকে কোটিপতি হয়েছে গ্রেফতার বিপ্লব লস্কর। রাজধানীতে তার একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। বিদেশিদের প্রতারণার শতাধিক ঘটনার সঙ্গে বিপ্লব লস্করের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রেফতার এড়াতে গাড়িতে ও সঙ্গে সব সময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতো সে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি প্রতারক চক্রটি গ্রেফতার নুসরাতের মতো বহু বাংলাদেশির সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট জাল করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড নিতো। এসব ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তুলে নিতো তারা। টাকা তোলা ও টাকা ভাগাভাগির কাজটি করতো বিপ্লব লস্কর। সে বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সবকিছু সরাসরি তদারকি করতো। বিপ্লব লস্করের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো সুমন হোসেন ওরফে ইমরান, মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন এবং ইমরান হাসান ইকবাল।

গ্রেফতার বিপ্লব লস্করের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। এ মামলায় সে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে।

 

/এআরআর/আরকে/এফএস/
সম্পর্কিত
খাবার না খাওয়ায় বাবার ‘চড়’, মাথায় আঘাত পেয়ে শিশুর মৃত্যু
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
সর্বশেষ খবর
সারির হ্যাটট্রিকে ১১ গোলের ম্যাচ জিতলো মোহামেডান
সারির হ্যাটট্রিকে ১১ গোলের ম্যাচ জিতলো মোহামেডান
গরমে আরও ডায়রিয়া রোগী বাড়ার শঙ্কা
গরমে আরও ডায়রিয়া রোগী বাড়ার শঙ্কা
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের বিষয় যুক্ত করা হবে: পরিবেশমন্ত্রী
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের বিষয় যুক্ত করা হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি বিরোধী দলীয় নেতার
সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি বিরোধী দলীয় নেতার
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের