X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

কী কাজে আসছে ট্রাফিক লাইট?

আব্দুল হামিদ
২৬ অক্টোবর ২০২২, ১৪:০০আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১৯:১৬

রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে একটু স্বস্তি ফেরাতে পারে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অকার্যকর সিগন্যাল লাইটগুলো। সিগন্যাল সচল থাকলে আর চালকরা একটু সচেতন হলেই কায়িক পরিশ্রম ও জীবনের ঝুঁকি উভয়ই কমে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। রাজধানীর অধিকাংশ সিগন্যাল লাইট এখন কী কাজে আসছে জানতে চাইলে কোনও উত্তর নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাত থেকে শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, চকবাজারসহ পুলিশ প্লাজা থেকে গুলশান ১ নম্বর ও ২ নম্বর চত্বর, নেভি সদর দফতর, মহাখালী ও সৈনিক ক্লাব থেকে কচুক্ষেত, মিরপুর কল্যাণপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় সিগন্যাল লাইটগুলোর বেহাল দশা। ব্যয়বহুল এই লাইটগুলো ট্রাফিক পুলিশের কোনও কাজে আসছে না।

রাজধানীর দুই সিটির আওতাধীন অধিকাংশ ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও লাইট ভেঙে পড়ে আছে, আবার কোথাও শুধু স্ট্যান্ড আছে, লাইট নেই। যাও আছে তার অধিকাংশই জ্বলে না। রাজধানীর কোথাও কার্যকর নেই সিগন্যাল লাইটের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। পুলিশের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলক কোথাও কোথাও চালু হওয়ার কথা বলা হলেও অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই।

কী কাজে আসছে ট্রাফিক লাইট?

 তবে সরেজমিন ভিন্ন চিত্র দেখা যায় গুলশান ১ নম্বর ও ২ নম্বর চত্বরে। দিনে সিগন্যাল লাইট তেমন কার্যকর না থাকলেও শুক্রবার রাতে দেখা যায় লাল, সবুজ ও হলুদ বাতির ইশারা মানছে কিছু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চালক। এছাড়া সৈনিক ক্লাব থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও উপস্থিতি না থাকার পরও সিগন্যাল লাইটের সংকেত অমান্য করা তো দূরের কথা, ওভারটেকিংও করে না চালকেরা।

গুলশান ২ নম্বর চত্বরে মোটরসাইকেল চালক রাহুল দে  বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখানে সবাই সিগন্যাল মানে। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি। আর রাতে গুলশান এলাকায় অনেককে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে দেখা যায়। একটু দেখে শুনে রাস্তা পার হওয়াই ভালো।

দীর্ঘদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা পল্টন ও শান্তিনগর সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করা ফরিদ নামে এক ট্রাফিক পুলিশের সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন বিশেষ বাহিনী। ওখানে উল্টাপাল্টা করলে তো আর মাফ নাই। এজন্য ভয়ে কেউ কিছু করতে সাহস পায় না। কিন্তু এসব জায়গায় যার যা মন চায় করে। আবার পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গেলেও সেটাকে সাধারণ মানুষ ভুলভাবে উপস্থাপন করে।

কী কাজে আসছে ট্রাফিক লাইট?

ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আবু সাঈদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজধানীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিগন্যাল লাইটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে যেসব রাস্তায় রিকশা চলাচল করে, সেসব রাস্তায় সিগন্যাল লাইট কাজে আসবে না। কারণ, মামলার ভয় না থাকায় রিকশাচালকরা কিছু মানে না। রিকশাচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সাধারণ মানুষও তাদের পক্ষ নিয়ে পুলিশকেই দোষে।

এই সার্জেন্ট বলেন, সিগন্যাল লাইট কার্যকর থাকলে আমাদের ঝুঁকি কমবে। না হলে চলন্ত গাড়ি থামাতে গিয়ে যেভাবে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের গাড়ির সামনে দাঁড়াতে হয়, তাতে বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। মামলা করি বলে চালকদের রাগও থাকে ট্রাফিক পুলিশের ওপর। মামলা দিলে চালকরা মনে করে ট্রাফিক পুলিশ মামলার রেভিনিউ (রাজস্ব) থেকে পার্সেন্টিজ পায়। আসলে এমন কিছুই দেওয়া হয় না। অন্য সার্ভিসে জরিমানার একটা অংশ তাকে দেওয়া হয়, কিন্তু পুলিশে সেটা হয় না।

কী কাজে আসছে ট্রাফিক লাইট?

সিগন্যাল লাইটের বিষয়ে যা বলেছে পুলিশ
ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার মেহদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিদিনই রাস্তায় গাড়ি বাড়ছে, কিন্তু রাস্তা বাড়ে না। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম হয়। সব তো আর পুলিশ একা করে পারবে না। কারণ সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ আছে। তারপরও পুলিশ তার দায়িত্বের চেয়ে অতিরিক্ত করে।

মেহদী হাসান বলেন, সিগন্যাল লাইট সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণ করে। সিগন্যাল লাইট এখনও ডিএমপির হাতে আসেনি। এটা নিয়ে দুই সিটি কাজ করছে। পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি এখনও সিগন্যাল লাইটের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। কারণ, সিগন্যাল লাইটের দায়িত্ব নেওয়ার মতো পুলিশিং আসেনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিগন্যাল লাইট কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পয়েন্ট বেছে নিয়ে কাজ চলছে। এরমধ্যে রাজধানীর চারটি পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সিগন্যাল লাইট নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি দুই সিটিকে জানানো হয়েছে। তারা এটা নিয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। কারণ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের আর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব ট্রাফিকের।

মামলার রাজস্বের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলার জরিমানা থেকে রাজস্ব আদায় হয়। সেখান থেকে একটি অংশ ট্রাফিক বিভাগকে দেওয়ার জন্য আমার আবেদন করি। পরে সরকার প্রত্যেক সদস্যকে একটা আলাদা ভাতা দেয়। কিন্তু মামলার থেকে কোনও অংশই ট্রাফিক পুলিশ পায় না। যারা বলেন, এটা তাদের ভুল ধারণা।

কী কাজে আসছে ট্রাফিক লাইট?

সিগন্যাল লাইটের বিষয়ে যা বলছে বিশেষজ্ঞরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজধানীর সিগন্যাল লাইটগুলো কার্যকর করার জন্য লেনভিত্তিক রাস্তার বিকল্প নেই। ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে কিন্তু সবাই নিজ নিজ লেন ধরে চলাচল করছে। এর পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগও রয়েছে।

তিনি বলেন, রাজধানীতে প্রায় ১৮ ধরনের গাড়ি চলাচল করে। সব গাড়ির গতি বা চলার ধরনও এক না। কিন্তু সবুজ সিগন্যাল দেখার পরে কত দূরত্ব সিগন্যাল পার হয়ে যাবে সেটা দেখতে হবে। সেটা ঢাকায় সম্ভব না। কারণ, একটি প্রাইভেটকারের সামনে আছে রিকশা, এখন আপনি কী করবেন? আপনি তো বেরিয়ে যেতে পারছেন না। এই অবস্থা থাকলে কোনও সিগন্যাল লাইট কাজ করবে না। এজন্য রিকশাকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে কর্তৃপক্ষকে আরও ভেবেচিন্তে দিতে হবে। তাদের চলাচলের জন্য একটা নিয়ম করে দিতে হবে। তারা প্রধান কোনও সড়কে উঠতে পারবে না, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, লেনভিত্তিক গাড়ি চলাচল, গাড়ির সংস্করণ (ধরন) যত কমানো যায় ও সিগন্যালে কখনও লোকাল ট্রাফিক থাকা যাবে না। এই তিনটি বিষয় কার্যকর করলে সিগন্যাল লাইটের ব্যবহার অকার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই। আর যদি আইনের সঠিক প্রয়োগ না হয়, সেটা ভিন্ন কথা। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ হয়, এই ভয়ে লেন পরিবর্তনসহ সিগন্যাল অমান্য ও  ওভারটেকিং করার সাহস করে না চালকেরা।

কী কাজে আসছে ট্রাফিক লাইট?

যা বলছে ডিএনসিসি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজধানীতে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করতে কাজ চলছে। এছাড়া ঢাকাকে অটোমেশন কারার জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল অটোমেশন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। আরও একটি প্রজেক্ট ছিল, সেটাকে আধুনিকায়নের চেষ্টা চলছে। ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করার জন্য স্মার্ট পার্কিং ও আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে যে অটোমেশন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন হলে রাজধানীতে স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হয়ে যাবে। তবে একটু সময় লাগবে। আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক লাইট ঠিক করা হচ্ছে। এরমধ্যে রাজধানীর অনেক জায়গায় কাজ করা চলছে। পাশাপাশি ম্যানুয়ালি কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যানজট নিরসনে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগ ও মহানগর পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। এছাড়া অটোরিকশা বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকার এই সরু রাস্তায় গাড়িভিত্তিক লেন সম্ভব না। তারপরও পরীক্ষামূলক শেরেবাংলা নগরে সাইকেল লেন করা হয়েছে। কিন্তু সেই লেনে সাইকেল চলে না, কোনও সুফল পাওয়া যায়নি। এখন সেই লেন থেকে সকাল-সন্ধ্যা হকার সরানো লাগছে।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সর্বশেষ খবর
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া