শব্দ দূষণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে ঢাকার নীরব এলাকার শব্দের মাত্রাও মানমাত্রার আড়াই গুণ বেশি। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিজার পক্ষ থেকে শব্দ দূষণের নানান চিত্র তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিজার সভাপতি ও পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করি। স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদ গেট, বাংলামটর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, আজিমপুর, কলাবাগান, ধানমন্ডি, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি ২৭, কলেজ গেট, শ্যামলী, আগারগাঁও, পলাশী, লালবাগ সেকশন, নাজিরাবাজার, সচিবালয় এলাকা। জরিপ করা স্থানগুলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকা। প্রতিটি এলাকায় দিন-রাতের শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। এছাড়া বাসের ভেতরে শব্দের মাত্রাও পরিমাপ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা ৮৪ দশমিক ৫ থেকে ১০১ দশমিক ৭ ডেসিবল, রাতে ৯৬ দশমিক ৪ থেকে ১০১ দশমিক ৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিনে ৮২ দশমিক শূন্য থেকে ৯১ দশমিক শূন্য ডেসিবল, রাতে ৮৩ দশমিক শূন্য থেকে ৯১ দশমিক ৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিনে ৯১ দশমিক শূন্য থেকে ১০১ দশমিক ৫ ডেসিবল, রাতে ৮৯ দশমিক শূন্য থেকে ১০৩ দশমিক ৮ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা ৯২ দশমিক শূন্য থেকে ৯৭ দশমিক শূন্য ডেসিবল, রাতে ৯১ দশমিক শূন্য থেকে ৯৯ দশমিক শূন্য ডেসিবল। বাসের ভেতরে ৮০ দশমিক ৪ থেকে ৮৩ দশমিক ৯ ডেসিবল। বাংলামটরে শব্দের মাত্রা ১০৩ দশমিক ৮ ডেসিবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৮৬ দশমিক শূন্য থেকে ৯৪ দশমিক শূন্য ডেসিবল। সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৬ দশমিক শূন্য থেকে ১০১ দশমিক ৭ ডেসিবল।’
তিনি আরও বলেন, ‘নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি এবং রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে আড়াই গুণের বেশি। আবাসিক এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। আবাসিক এলাকায় রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিন ও রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি। নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি সচিবালয় এলাকায়, যা ১০১ দশমিক ৭ ডেসিবল; রাতে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ধানমন্ডি ল্যাবএইডে, যা ১০১ দশমিক ৫ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বাংলামটরে, যা ১০৩ দশমিক ৮ ডেসিবল; রাতে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি লালবাগ সেকশন, যা ১০১ দশমিক ৫ ডেসিবল।’
সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘শব্দদূষণের কারণে মানুষ কেবল শ্রবণশক্তি হারায় না, নানা ধরনের জটিল রোগেও মানুষ আক্রান্ত হয়। আমাদের সবার সচেতনতা জরুরি। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অতি দ্রুত সরকারকে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে শব্দদূষণ কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা; জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো; উচ্চ শব্দসৃষ্টিকারী হর্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা; উচ্চ শব্দের হর্ন আমদানি বন্ধ করা; নীরব এলাকায় হর্ন না বাজানো ও অন্যান্য এলাকায় অপ্রয়োজনে হর্ন না বাজানোর জন্য মোটরযান ড্রাইভারদের উদ্বুদ্ধ করা; যানবাহন নিয়মিত মেরামত করা; লাউড স্পিকারের ব্যবহারে সচেতন হওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন– নগর গবেষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিজার সহসভাপতি ক্যামেলিয়া চেম্বরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হাসান প্রমুখ।