X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জিএমও বিশ্বব্যাপী সাফল্য পেয়েছে, বাংলাদেশেরও ভাবা উচিত: নোবেলজয়ী রিচার্ড রবার্টস

সাদ্দিফ অভি
০৩ নভেম্বর ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:১০

জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম (জিএমও) এমন জীব, যার ডিএনএ সিকোয়েন্সে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনটা হতে পারে অন্য কোনও জীবের জিন অনুপ্রবেশ করানোর মাধ্যমে অথবা নির্দিষ্ট ডিএনএ সিকোয়েন্স বিলুপ্তি ও নতুন ডিএনএ সিকোয়েন্স প্রতিস্থাপন বা জিনোম এডিটিংয়ের মাধ্যমে। আর জিএম ফুড হলো জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) অর্গানিজম থেকে পাওয়া খাদ্য। সয়াবিন, তুলা, সুগারবিট, পেঁপেসহ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শতাধিক জিএমও ফসল বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে।

এই সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করতে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী স্যার রিচার্ড জন রবার্টস সম্প্রতি ঢাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভার্নেন্স (এসআইপিজি) আয়োজিত এক সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন।  বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জিএমও পলিসি নিয়ে ভাবার আহ্বান জানান। তার মতে, জিএমও খাদ্য প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে অনেক কম খরচে উৎপাদন করা যায় এবং এটি বিশ্বব্যাপী সফলতার মুখ দেখছে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের নিজস্ব প্রতিবেদক সাদ্দিফ অভি

রিচার্ড জন রবার্টস (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম। একটি সেমিনারের অংশ নিতে আপনি ঢাকায় এসেছেন। সেখানে কী নিয়ে আপনি আলাপ করবেন?

রিচার্ড জন রবার্টস: আমি বাংলাদেশে এসেছি মূলত জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম (জিএমও) নিয়ে কথা বলতে, একই সঙ্গে আমি গোল্ডেন রাইস নিয়েও কথা বলবো।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশ কীভাবে জিএমও–র মাধ্যমে লাভবান হতে পারে?

রিচার্ড জন রবার্টস: যদি প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষবাসের কথা ভাবেন তাহলে দেখা যাবে একটি ফসল ফলাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। জিএমও পদ্ধতি অনুসরণ করলে অনেক দ্রুত ফসল পাওয়া যায়। এমনকি অন্যান্য ফসল কিংবা যে ফসল উৎপাদন করেতে চাচ্ছেন সেটার ব্যাকটেরিয়া কিংবা জিন সম্পর্কে জানা যায়। আমি যদি জিনটি পেয়ে যাই এবং জানতে পারি সেটি পুষ্টিকর এবং ভালো স্বাস্থ্যের জন্য আমি সেটিকে ফসলে প্রয়োগ করতে পারি এবং আরও ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারি। একই কাজ হয়েছে গোল্ডেন রাইসের ক্ষেত্রে। সেখানে দুটি জিনকে প্রয়োগ করে আরও ভাল ফসল তৈরি করার জন্য। যার ফলে ফসলটি ভিটামিন 'এ' ঘাতটি পূরণে সহায়তা করে।

রিচার্ড জন রবার্টস (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

বাংলা ট্রিবিউন: পরবর্তীতে কী নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছেন?

রিচার্ড জন রবার্টস: আমি জিএমও নিয়ে গবেষণা করিনি কিন্তু আমি এটি নিয়ে কথা বলি। আমি ব্যাকটেরিয়ায় ডিএনএ মেথিলেশন নিয়ে কাজ করি।  (এটি একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মিথাইল গ্রুপগুলো ডিএনএ অণুতে যুক্ত হয়। মেথিলেশন ক্রম পরিবর্তন না করে ডিএনএ বিভাগের ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন করতে পারে। যখন কোনও জিন প্রমোটারের মধ্যে অবস্থিত হয়, তখন ডিএনএ মেথিলেশন সাধারণত জিন ট্রান্সক্রিপশনকে দমন করতে কাজ করে)।

বাংলা ট্রিবিউন: রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ধারনা করা হচ্ছে পৃথিবীতে খাদ্য সংকট দেখা দেবে, এক্ষেত্রে জিএমও কীভাবে কাজে লাগানো যায়?

রিচার্ড জন রবার্টস: কোনও কিছুই খুব দ্রুত পরিবর্তন হবে না। শুনতে খুব ভাল লাগে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জিএমও আরও ভালো খাদ্য পেতে সহায়তা করবে যাতে আরও ভাল ফসল উৎপাদন করা যায়। এমনকি দ্রুত ফসল উৎপাদনে কার্যকর এবং জলবায়ু রক্ষায় কাজ করে। সঠিক জিন সঠিক ফসলে প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের খাদ্যের জোগান দেওয়া যায় কিংবা জলবায়ুকে রক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীকে আরও উন্নত করা সম্ভব।

রিচার্ড জন রবার্টস (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

মূলত আমি চেষ্টা করছি প্রচার করার জন্য যে জিএমও নিরাপদ। এটি নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ইউরোপে এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি এবং তারা সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। সবাইকে ভীত হওয়ার কোনও ভিত্তি এখানে নেই। ৪০ বছর ধরে জিএমওভিত্তিক ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। কোনও ধরনের দুর্ঘটনা কিংবা কোনও সমস্যা হয়নি কোথাও।

বাংলা ট্রিবিউন: অনেক কথাই বলা হয় এই ধরনের পদ্ধতি নিয়ে, কতটুকু নিরাপদ এই ধরনের ফসল?

রিচার্ড জন রবার্টস: এটা পুরোপুরি নিরাপদ। এর পেছনে যে ষড়যন্ত্র আছে সেটি আমি বুঝানোর চেষ্টা করি। ইউরোপিয়ানরা পশুপাখিকে জিএমওভিত্তিক খাবার খাওয়ায়। প্রায় সব পশু পাখি জিএমও খাবার খায়। যদি প্রাণীরা খেয়ে নিরাপদ থাকতে পারে তাহলে আপনি কেন না? নেতিবাচক যা বলা হচ্ছে– সেটি একদম বাজে কথা।

রিচার্ড জন রবার্টসের সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক সাদ্দিফ অভি (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশকে তাহলে কী পরামর্শ দিবেন? 

রিচার্ড জন রবার্টস: জিএমও দ্বারা উৎপাদিত ফসল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খুবই সহজে উৎপাদন করা যায় এবং অনেক দেশেই তা তৈরি করে অপেক্ষা করছে সরকারের অনুমোদনের জন্য। পশ্চিমা দেশগুলোর বড় বড় কৃষি পণ্যের প্রতিষ্ঠান জিএমওকে কাজে লাগিয়ে ফসল তৈরিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, কারণ তাদের আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এটি অনেক সস্তা। তবে সেই তুলনায় অনেক বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে একটি নীতিমালা তৈরিতে। একা একটি মানুষের পক্ষে তা সম্ভব না। তবে যদি সরকারের নীতিমালা পরিবর্তন হয়, যেটা অবশ্যই করা উচিত, তাহলে সেটা বিজ্ঞানীদের জন্য খুবই সহজতর হয় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। নীতিগত পরিবর্তন আনলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আমি একই পরামর্শ বাংলাদেশ সরকারের ক্ষেত্রেও দিতে চাই। বাংলাদেশে উৎপাদিত ‘বিটি বেগুণ’ অনেক সফলতা পেয়েছে।

রিচার্ড জন রবার্টস (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

প্রসঙ্গত, স্যার রিচার্ড জন রবার্টস ১৯৪৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ব্রিটিশ বায়োকেমিস্ট এবং অণুজীববিজ্ঞানী। ১৯৯৩ সালে তিনি ফিলিপ অ্যালেন শার্পের সাথে ইউক্যারিওটিক ডিএনএতে ইন্ট্রন আবিষ্কার এবং জিন-স্প্লাইসিং প্রক্রিয়ার জন্য ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নিউ ইংল্যান্ড বায়োল্যাবসে কাজ করছেন।

১৯৬৯-১৯৭২ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল গবেষণা করেন। ১৯৬৯ সালে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার আগে ডিএনএ কাঠামোর সহ-আবিষ্কারক এবং সহকর্মী নোবেল বিজয়ী জেমস ডেভি ওয়াটসন নিয়োগ করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ফ্রেড স্যাঙ্গারের সাথে কাজ করে প্রথমবারের মতো এমআরসি ল্যাবরেটরি অফ মলিকুলার বায়োলজি পরিদর্শন করেছিলেন। এছাড়া তিনি আরএনএ স্প্লাইসিং আবিষ্কার প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি নিউ ইংল্যান্ড বায়োল্যাবসে চলে যান।

রবার্টস ১৯৯৫ সালে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো (এফআরএস) নির্বাচিত হন এবং একই বছর ইউরোপীয় আণবিক জীববিজ্ঞান সংস্থার (ইএমবিও) সদস্য নির্বাচিত হন।

/এমএস/
সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
সরকারের ১০০ দিনে নানা চ্যালেঞ্জ
সরকারের ১০০ দিনে নানা চ্যালেঞ্জ
নৌকা নিয়ে দ্বিমত থাকলে তাদের নিয়ে কাজ করবো না: গণপূর্তমন্ত্রী
নৌকা নিয়ে দ্বিমত থাকলে তাদের নিয়ে কাজ করবো না: গণপূর্তমন্ত্রী
কেরানীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য গ্রেফতার
কেরানীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য গ্রেফতার
ড. মাহবুব উল্লাহর ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন 
ড. মাহবুব উল্লাহর ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন 
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই