X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিখিল হত্যাকাণ্ডের রহস্য কোথায়?

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
০৩ মে ২০১৬, ২০:০৪আপডেট : ০৩ মে ২০১৬, ২০:২৯

নিখিল চন্দ্র টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ডুবাইল বাজারে নিজ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দুর্বৃত্তদের চাপাতির এলোপাতাড়ি কোপে খুন হন নিখিল চন্দ্র জোয়াদ্দার (৫০) নামের এক দরজি। হত্যাকাণ্ডের পরপরই কথিত আইএস দায় স্বীকার করলেও তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা, নিখিল অতি সাধারণ পরিবারের একজন মানুষ ছিলেন। তার মতো একজন মানুষ আইএসের টার্গেট হতে পারেন এটা তার স্বজনসহ অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। প্রশাসনও আইএসের অস্তিত্ব মানতে নারাজ। তা হলে এই হত্যার রহস্য কোথায়?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যার রহস্য উদঘাটনে নানা দিক খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় রবিবার ভোরে ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ডুবাইল বাজার এলাকার নলিনী কান্ত জোয়াদ্দারের চার ছেলের মধ্যে বড় নিখিল। পেশায় দরজি। ডুবাইল বাজারের সুতি-কালী বাড়ি রোডের সর্বশেষ দোকানটি তার। স্ত্রী ও দু’মেয়ে কবিতা ও বন্যাকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। বড় মেয়ে কবিতাকে বিয়ে দিয়েছেন শেরপুরে কাপড় ব্যবসায়ী ছেলের সঙ্গে। ছোট মেয়ে বন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন টাঙ্গাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ছেলের সঙ্গে। দরজির কাজ করেই চলত তার সংসার।
আরও পড়তে পারেন: কাঠগড়ায় অস্থির শামসুদ্দিন

নিখিলের অন্য ভাই পেশায় গাড়ি চালক টুংকু স্ত্রী ও এক ছেলে এক মেয়ে রেখে ৭-৮ বছর আগে আত্মহত্যা করেন। প্রায় ২ বছর আগে অপর ভাই ভোলা মারা যান। অতিরিক্ত নেশার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তার রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে । তিনি সিনেমা হলে কাজ করতেন। বর্তমানে জীবিত রয়েছেন পেশায় রাজমিস্ত্রি গোপাল নামের এক ভাই। তারও  একটি  মেয়ে রয়েছে। তবে তিনি খানিকটা অস্বাভাবিক।

৩৩ শতাংশ বসত ভিটার ওপর নিখিলের চার ভাই প্রত্যেকেই আলাদাভাবে বসবাস করে আসছেন। বসত ভিটারই রাস্তার পাশে নিখিল এবং ভোলা দুই ভাই মিলে দুইটি দোকান নির্মাণ করেন। একটিতে নিখিল ব্যবসা করতেন। ভোলার দোকান ভাড়া দেওয়া ছিল। এছাড়া আবাদি জমি রয়েছে ৫৪ শতাংশ।
২০১২ সালে ২৮ এপ্রিল নিখিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তিনি মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জনতা চড়াও হয় তার ওপর। এক পর্যায়ে আলমনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে গোপালপুর থানায় মামলা করলে ২০১২ সালের ২ মে নিখিলকে গ্রেফতার করে গোপালপুর থানা পুলিশ। ২ মাস ২৪ হাজতবাসের পর জামিনে বেরিয়ে আসেন নিখিল। কিছুদিন পরই নিজের অংশের সম্পত্তি লিখে দেন দুই মেয়ের নামে।
এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে ডুবাইলসহ এর আশেপাশের মানুষ হতবাক হয়ে গেছেন। এলাকায় নিখিলের মৃত দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নেশার অভিযোগ থাকলেও নিখিল কোনও দিন এসবের কাছে যাননি। কারো সঙ্গে জোর গলায় কথাও বলেননি।
নিহতের শ্যালক অমল ভৌমিক বলেন, তিনি ছিলেন সহজ সরল মানুষ। আপন মনে কাজ করতেন। কোনও দিকে যেতেন না। মাঝে মধ্যে মেয়েদের বাড়িতে যেতেন। এমনকি আমাদের বাড়িতেও তেমন একটা আসতেন না।

তিনি জানান, দুই তিন বছর আগে নবীজিকে অবমাননার বিষয়ে একটা প্রেসার ছিল তার ওপর। তখন লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। হয়তো তখনই মনে ভয় জেগেছিল। এরপরই তার অংশের জমি দুই মেয়ের নামে লিখে দেন।
অমল ভৌমিক আরও বলেন, তিনি এলাকাবাসীর কাছে আইসা সারেণ্ডার করছিলেন, মামলাটা মিটমাটও হইয়া গেছিল। কিন্তু তারপরও আসলে কি হইল তা তদন্ত ছাড়া বলা ঠিক হবে না।
নিখিলদের সম্পত্তির ওপর কারও নজর আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাকতেও পারে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনিই একটু সুস্থ ছিলেন। দুই ভাই মারা গেছে আর এক ভাই একটু অ্যাবনরমাল। এমনও হইতে পারে এই লোকটা সুস্থ আছে, এরে সরাই দিতে পারলে এই বাড়িটা পাওয়া যাবে।

আরও পড়তে পারেন: সামরিক সরকারের জারি করা দুই অধ্যাদেশ রক্ষায় সংসদে বিল পাস

নিহতের ছোট মেয়ে বন্যা বলেন, একদিনের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। খুনিরা আগে থেকেই খেয়াল রাখত কখন দোকানে লোকজন থাকে না। দুপুরে খাওয়ার সময় দোকানে কেউ থাকত না। খুনিরা ওই সময়টাই বেছে নিয়েছে বাবাকে হত্যা করতে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গোপালপুর থানা সভাপতি হরিপদ দে মঙ্গল বলেন, এটা সাম্প্রদায়িক কোনও ঘটনা নয়। সারা দেশে যেভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটছে এটাও তারই একটি ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যখন বলছেন আইএস নাই, তা হলে আমরাও বলছি আইএস নাই। আমরা আতঙ্কে আছি।
নিখিলের হত্যাকাণ্ডে আইএসের দায় স্বীকার ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার বলেন, এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না। আইএসের কোনও অস্তিত্ব নেই।
এদিকে নিখিলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। রবিবার সকালে পরিবারটির প্রতি সমবেদনা জানাতে আসেন কৃষক শ্রমিক লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। এ সময় তিনি সরকারের কাছে দ্রুত হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি না খেলার আহ্বান জানান।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেলযোগে তিন যুবক ডুবাইল বাজারে নিখিলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসে। পরে কথা বলার জন্য ডেকে নিয়ে দোকানের উল্টো দিকে রাস্তার পাশে নিয়ে যায় নিখিলকে। সেখানে নিখিলকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

 

/এমএসএম/এজে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১১ বছর পর এভারেস্ট ছুঁলেন আরেক বাংলাদেশি
১১ বছর পর এভারেস্ট ছুঁলেন আরেক বাংলাদেশি
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
সালথা উপজেলায় ওয়াদুদের প্রার্থিতা বহাল, নির্বাচনে বাধা নেই
সালথা উপজেলায় ওয়াদুদের প্রার্থিতা বহাল, নির্বাচনে বাধা নেই
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক