X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিজামীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ মে ২০১৬, ১১:৪০আপডেট : ০৫ মে ২০১৬, ১৬:৫৮

নিজামীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ সব ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শুরু হয়।

নিজামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ হলো:
একাত্তরের ৩ আগস্ট নিজামী চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে শহর ছাত্রসংঘের এক সুধী সমাবেশে পাকিস্তান রক্ষার পক্ষে বক্তব্য দেন। ওই সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি আবু তাহের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার আদেশ দেন। সভায় উপস্থিত থেকেও আবু তাহেরের বক্তব্যের বিরোধিতা না করে নিজামী তাতে মৌন সম্মতি দেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ, একই বছরের ২২ আগস্ট নিজামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল-মাদানি স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি এ সভায় দলীয় নেতাকর্মীদের স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তারা সারাদেশে সংগঠিত হয়ে অপরাধ করতে থাকেন।

পরবর্তী অভিযোগ বলছে, একাত্তরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসমাবেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন নিজামী।

আরও পড়ুন: চূড়ান্ত বিচারে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল

চতুর্থ অভিযোগ অনুসারে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যশোর বিডি হলে ছাত্রসংঘের সভায় তিনি জিহাদের সমর্থনে বক্তব্য দেন। নিজামী ওই সভায় বক্তব্য দিয়ে নিরীহ স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের হত্যার নির্দেশ দেন।

শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগ হলো, ১৪ মে নিজামীর নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদররা পাবনার ডেমরা ও বাউসগাতি গ্রাম ঘেরাও করে। এরপর সাড়ে চার শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে এক জায়গায় জড়ো করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে নারীদের ধর্ষণও করা হয়।

পরবর্তী অভিযোগ অনুসারে, নিজামীর নির্দেশে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় একই বছরের ৮ মে পাবনার সাঁথিয়া থানার করমজা গ্রামে লোক জড়ো করে নির্বিচারে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়। নারীদেরও ধর্ষণ করা হয়।

এরপর একই বছরের ২৭ ও ২৮ নভেম্বর পাবনার সাঁথিয়া থানার ধোলাউড়ি গ্রামে ডা. আবদুল আওয়ালের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখান থেকে চারজনকে ধরে নিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে শাহজাহান আলী নামে একজনকে গলা কেটে ফেলে রাখা হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।

নিজামীর বিরুদ্ধে অষ্টম অভিযোগে বলা হয়, ঈশ্বরদী থানার আটপাড়া ও বুথেরগাড়ি গ্রামে ১৬ এপ্রিল হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তী অভিযোগ অনুযায়ী, ১০ জুন আতাইকুলা থানার মাতপুর গ্রামের মাওলানা কছিমউদ্দিনকে ধরে নিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।

দশম অভিযোগ অনুসারে ৯ আগস্ট পাবনা শহরের নূরপুর ওয়াপদা মোড় থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাজেদসহ দু’জনকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পাবনা সুগার মিলের পাশে লাশ ফেলে রাখা হয়। পরবর্তী অভিযোগ অনুসারে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বেড়া থানার বিছাখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়। নিজামীর বিরুদ্ধে ১২ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ উস্কানির অভিযোগ।

আরও পড়ুন: এই নিজামীই সেই নিজামী

১২ নম্বর অভিযোগ মতে, একাত্তরের আগস্টের কোনও এক সময় সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মে মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শারীরিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপনের পর সেখানে গোলাম আযম ও নিজামী নিয়মিত যাতায়াত করতেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করতেন। তারই ফসল হিসেবে সারাদেশে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

এরপর ৩০ আগস্ট রাতে পুরনো এমপি হোস্টেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পে বন্দি জালাল, রুমী, বদিসহ বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন মতিউর রহমান নিজামী। এরপর তাদের হত্যা করা হয়।

১৫ নম্বর অভিযোগে বলা হচ্ছে, একই বছরের ৫ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাবনার সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্পে মাঝে মধ্যে নিজামী যেতেন। সেখানে তিনি রাজাকার কমান্ডার সামাদ মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য শলাপরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন।

শেষ অভিযোগ ছিল, আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজামী একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

/ইউআই/এমএনএইচ/আপ-এমও/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
কতটা এগোলো সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপনে মার্কিন উদ্যোগ?
কতটা এগোলো সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপনে মার্কিন উদ্যোগ?
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির