X
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সব অ্যাম্বুলেন্সই অ্যাম্বুলেন্স নয়, আছে ঝুঁকিও

জাকিয়া আহমেদ
২০ মে ২০১৬, ০৭:২১আপডেট : ২০ মে ২০১৬, ১৩:৩৪

এসব অ্যাম্বুলেন্সের বেশিরভাগই মানসম্মত নয়

যেসব গাড়ির রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ,  কাগজপত্রেরও ঠিক নেই,  সেসব গাড়িকেই অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেদারসে ব্যবসা করছেন কিছু মাইক্রোবাসের মালিক। অথচ এতে নেই অক্সিজেনসহ রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা। আর এসব সম্ভব হচ্ছে শুধু এ সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকার কারণে এবং এই নীতিমালার কাজ ঝুলে আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।

কারণ অ্যাম্বুলেন্সটি তৈরির সময় মানা হয়নি সঠিক নিয়ম, ফলে সাইরেনের শব্দ খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে রোগীর কানে-যেটা তার জন্য মঙ্গলজনক নয় বলে জানালেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন- অব্যবহৃত মাইক্রোবাসই যখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় তখন সেগুলোকে মেরামত করে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর না আছে ফিটনেস সার্টিফিকেট, না আছে রুট পারমিট স্টিকার।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের সামনে যেসব অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই মানসম্মত নয় এবং বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্সও নেই কিংবা বৈধ নয়। নেই লাইফ সাপোর্ট, নেই এতে চিকিৎসকের উপস্থিতি,কার্ডিয়াক মনিটর ও গ্যাস সিলিন্ডার, আর থাকলেও সেটা থাকে খালি। এসব দেখার কেউ নেই, নেই আলাদা কোনও আইন । মুমূর্ষু একজন রোগীর জন্য এসব অ্যাম্বুলেন্স মোটেই নিরাপদ নয়। আর এ বিষয়ে যথাযথ নজর না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবার নামে চলছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নজরদারির অভাবেই অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে, তাই সরকারেরই উচিত এ দিকে নজর দেওয়া।

এছাড়া নেই অ্যাম্বুলেন্স নিবন্ধনের জন্য আইন বা বিধিমালা। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অ্যাম্বুলেন্সের নিবন্ধন দিলেও তাদের তদারকির অভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ৭৫ ডেসিবল হলেও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দের মাত্রা ১০০ থেকে ১২০ ডেসিবল। এই অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ পথচারীদের জন্যও ক্ষতিকারক বলে জানালেন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবীর।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিবেশ অধিফতরের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অংশীদারিত্বমূলক কর্মসূচির অধীনে নতুন করে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করছি ঢাকাসহ সাতটি বিভাগীয় শহরে। সেখানে একটা সুপারিশ দেওয়া হবে যে- অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির সাইরেনকে আরও সহনীয় করে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা। শুধু লাইটটা ব্যবহার করেও এগুলো চলতে পারে, কিংবা আর একটু সহনীয় পর্যায়ে শব্দ ব্যবহার করে অথবা কিছু সময় পর পর শব্দ দিয়ে। কারণ, অ্যাম্বুলেন্সের যে শব্দ আমরা শুনতে পাই সেটাও রোগীদের জন্য বিপজ্জনক বলেই মনে করি। তিন-চার কিলোমিটারজুড়ে চলতে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের ওই বিকট শব্দ একজন হার্টের কিংবা স্ট্রোকের রোগীর জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যেকোনও সাধারণ যানবাহনের মতোই অ্যাম্বুলেন্সকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে লাইসেন্স পেতে যে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা উচিত সেটা দেখা হয় না। ফলে যে কেউ ইচ্ছে করলেই একটা মাক্রোবাসকে জোড়াতালি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এগুলো দেখা দরকার, কিন্তু কে দেখবে?

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে কথা হয় অ্যাম্বুলেন্স চালক মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, আগে এটি অন্য কাজে ব্যবহৃত হতো, তিনি কিনে নেওয়ার পর এখন অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে এজন্য কোথাও আবেদন করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের গাড়ির অনুমোদন রয়েছে আর অ্যাম্বুলেন্স বানানোর পর কোথাও আবেদন করেননি এবং কেউ তাকে কখনও কিছু বলেননি এমনকি পুলিশও ধরেনি।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) শেখ মো. মাহবুব-ই রাব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা লাইসেন্স দেই, তবে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে গাড়িতে কী কী থাকার কথা বা আছে কী নেই সেটা দেখা হয় না আমাদের।

অপরদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা.এ কে এম সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের লাইসেন্স দেয় বিআরটিএ- এটি তাদের বিষয়। আর বিষয়টির সঙ্গে অনেক এজেন্সিও জড়িত। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নীতিমালা এতদিন না থাকলেও এখন একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে, এরইমধ্যে সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। নীতিমালা হয়ে গেলে অ্যাম্বুলেন্স  ব্যবসা  নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে আশা করি।

আরও পড়ুন:  

সব অ্যাম্বুলেন্সই অ্যাম্বুলেন্স নয়, আছে ঝুঁকিও ৬ জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ডিএমপির ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

সব অ্যাম্বুলেন্সই অ্যাম্বুলেন্স নয়, আছে ঝুঁকিও  যানজটে দুর্ভোগ: সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক বন্ধে উকিল নোটিশ

সব অ্যাম্বুলেন্সই অ্যাম্বুলেন্স নয়, আছে ঝুঁকিও  অন্তত ৭ অপরাধে সেলিম ওসমানের বিরেুদ্ধে অভিযোগ আনা যেতে পারে

 

/এএইচ/আপ- এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এনসিপির যুবসংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তির’ আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল
এনসিপির যুবসংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তির’ আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল
ভারতের বাঁধের প্রভাবে ‘বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি’ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি
ভারতের বাঁধের প্রভাবে ‘বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি’ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি
দুই প্রবাসীকে অপহরণ ৩৬ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ 
দুই প্রবাসীকে অপহরণ ৩৬ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ 
রাকিবুলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
ইমার্জিং ওয়ানডে সিরিজরাকিবুলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক করে জরুরি নির্দেশনা মাউশির
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক করে জরুরি নির্দেশনা মাউশির
ফ্যাক্টরি পোড়ানোর হুমকি দেওয়া সেই বিএনপি নেতাকে বিমানবন্দর থেকে আটক
ফ্যাক্টরি পোড়ানোর হুমকি দেওয়া সেই বিএনপি নেতাকে বিমানবন্দর থেকে আটক
কমলো স্বর্ণের দাম, কার্যকর শুক্রবার থেকে
কমলো স্বর্ণের দাম, কার্যকর শুক্রবার থেকে
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ অনুমোদন
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ অনুমোদন
বাংলাদেশসহ ৫ রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশের অনুষ্ঠান স্থগিত করলো ভারত
বাংলাদেশসহ ৫ রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশের অনুষ্ঠান স্থগিত করলো ভারত