বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
স্কয়ার হাসপাতালে নূরজাহান বেগমের লাশের পাশে ছিলেন তার দুই মেয়ে, মেয়ে জামাই, নাতি-নাতনিরা ।
নূরজাহান বেগমের বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন জানান, হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার পর তার মায়ের লাশ নিজ বাসভবন নারিন্দাতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বাদ জোহর প্রথম জানাজা এবং পরে গুলশান-১ নাম্বার জামে মসজিদে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা হবে। ফ্লোরা নাসরিন আরও জানান, তার মা নূরজাহান বেগমের শেষ ইচ্ছানুযায়ী মিরপুরের বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পিতা নাসির উদ্দিনের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। এর আগে বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও শ্বাসকষ্টের কারণে গত ৫ মে নূরজাহান বেগমকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৮ মে শনিবার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
নূরজাহান বেগম বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এবং সাহিত্যিক। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী বিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা 'বেগম' এর সূচনা থেকেই সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নূরজাহান বেগম চাঁদপুরের চালিতা তলীতে ১৯২৫ সালের ৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন। মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। নূরজাহান বেগমের স্বামী ছিলেন সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই)। তিনি পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তার পরিবার ১৯২৯ সালে গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় চলে আসে। ‘সওগাত’ পত্রিকার দফতর ১১ নম্বর ওয়েলসলি স্ট্রিটের দোতলা বাড়িতেই তারা থাকতেন। এই অফিসেই নিয়মিত সাহিত্য মজলিস বসত। যেখানে কাজী নজরুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, হবীবুল্লাহ বাহার, ইব্রাহীম খাঁ, কাজী মোতাহার হোসেনসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব অংশ নিতেন। এই সাহিত্য মজলিসের নিয়মিত শ্রোতা হয়ে ওঠেন নূরজাহান বেগম নূরী। তারা তাকে নূরী বলেই ডাকতেন। এই ব্যক্তিবর্গ নূরীর মানস গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে পরিণত নূরজাহান বেগম বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেন।
নূরজাহান বেগম ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে তিনি আইএ এবং ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
নারীর উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য নূরজাহান বেগম ১৯৯৭ সালে রোকেয়া পদক পান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম পত্রিকার সম্পাদক নুরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উয়িং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
সোমবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন নূরজাহান বেগম।
এক শোক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মৃত্যুতে জাতি আজ এক মহিয়সী নারীকে হারালো। উপমহাদেশের নারী জাগরণে যিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শেখ হাসিনা মরহুমার শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
আরও পড়ুন: সেই চেনা অচেনা ‘বেগম’
বাবা ও নজরুলের সান্নিধ্যে নূরী’র বেগম সম্পাদক হয়ে ওঠা
ছবি: জাকিয়া আহমেদ
/জেএ/এপিএইচ/