X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গিবাদের উৎস খুঁজতে কাউন্টার টেররিজমের দিকেই মনোযোগ পুলিশের

জামাল উদ্দিন
২৩ জুন ২০১৬, ২৩:১২আপডেট : ২৪ জুন ২০১৬, ১৬:৪৭

জঙ্গি জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের টার্গেট কিলিংয়ের উৎস খুঁজতেই গলদঘর্ম পুলিশ। তাই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিটের দিকেই এখন বেশি মনোযোগ পুলিশের। প্রশিক্ষণ, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সব ধরনের সক্ষমতা বাড়াতেই কাজ চলছে এ ইউনিটে। গত ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গি-সন্ত্রাসী দমনে গঠিত ডিএমপি’র বিশেষায়িত এই ইউনিট চালু করা হয়।
জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে দীর্ঘদিন থেকেই একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। গত কয়েক বছরে জঙ্গিবাদের উত্থানে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনের বিষয়টি আরও জরুরি হয়ে পড়ে। সন্ত্রাবাদে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ, অপারেশন পরিচালনা, মামলা রুজু ও তদন্ত, তদন্তের আগে সন্ত্রাসীদের পর্যবেক্ষণে রাখাসহ জঙ্গি সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম মনিটরিং করতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়।
সিটিটিসির চারটি বিভাগ রয়েছে। ‘স্পেশাল অ্যাকশন ডিভিশন’, ‘কাউন্টার টেররিজম ডিভিশন’, ‘ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ডিভিশন’ ও ‘সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি ডিভিশন’। একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি, চারজন উপ-কমিশনার (ডিসি), ১০ জন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি), ২০জন সহকারী কমিশনার ও ৪০ জন ইনসপেক্টরসহ  ছয়শ’র বেশি পুলিশ সদস্য কাজ করবেন সিটিটিসিতে।

সব বিভাগের অপারেশন ও তদন্ত কাজে সহযোগিতা দেওয়া স্পেশাল অ্যাকশন ডিভিশনের কাজ। সোয়াত টিম, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ইউনিট, প্র্যাকটিক্যাল সুইটিং, কে-৯ নামের ডগ স্কোয়াড, আর্মস সংশ্লিষ্ট সব বিষয় এই ডিভিশনের অধীনে থাকবে। একইসঙ্গে ডিএমপি, ডিবি ও থানার যেসব টিম আছে তাদের অপারেশনাল কাজেও সহযোগিতা করবে তারা। ভিভিআইপি, যেকোনও ভেন্যুতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামগুলোতে চাহিদা মাফিক সহযোগিতা দিয়ে যাবে এ ডিভিশনের সদস্যরা।

জঙ্গি সংগঠনগুলোর খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিষয়ে তদন্ত ও আগাম তথ্য সংগ্রহ, ঘটনা ঘটে গেলে মামলা, অ্যারেস্ট ও তদন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি করবে কাউন্টার টেররিজম ডিভিশন। আন্তঃদেশীয় অপরাধ নিয়ে কাজ করবে ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ডিভিশন। ইমেইল ও ব্যাংকিং চ্যানেলে যেসব অপরাধ হয়ে থাকে সেগুলো দেখবে এ ডিভিশন। একইসঙ্গে ইন্টারনেট ট্র্যাফিকিং বিষয়গুলোও দেখবে। বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা, জাল নোট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির যে বিষয়টি সেটাও আন্তঃদেশীয় অপরাধ। বাংলাদেশের বাউন্ডারির বাইরে যে অপরাধগুলো যাবে সেগুলো এ ডিভিশন দেখবে।

আরেকটি হচ্ছে সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি ডিভিশন। এর কাজ হচ্ছে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত যত অপরাধগুলোর তদন্ত, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সাইবার পেট্রোলিং করা। ইন্টারনেটে কী হচ্ছে, সেটা এ বিভাগ দেখবে। তাদের টেকনিক্যালি সাবলম্বী করার জন্য ইকুইপমেন্ট ও সফটওয়্যার সাপোর্ট সবই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সিসিটিসি’র স্পেশাল অ্যাকশন ডিভিশনের প্রধান ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রসিকিউট। সিসিটিসির যথাযথ প্রসিউকশন সিস্টেমের  জন্য একটি বিশেষায়িত টিমের প্রয়োজন। কারণ, এটা একটি হার্ডকোর অর্গানাইজড ক্রাইম। তাই এই গ্রুপ সম্পর্কে সম্যক ধারণা কিংবা পর্যাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য না থাকলে তাদের দমন করা জটিল হয়ে পড়বে।

মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই জঙ্গি সংক্রান্ত অনেক পুরনো মামলার ফাইল খুঁজে বের করতে হয়। নতুন ঘটনার সঙ্গে পুরনো ঘটনার যোগসূত্র খুঁজে বের করতেই এর প্রয়োজন বেশি। পুরো চক্রকে শনাক্ত করা ছাড়াও মামলা, তদন্ত ও চার্জশিট দেওয়ার জন্যই একটি বিশেষায়িত সেটআপ জরুরি। তিনি বলেন, যখন চার্জশিট দিতে যাবেন, তখন যদি জানা যায়, সংশ্লিষ্ট জঙ্গির বাবা কোনও জঙ্গি সংগঠনের নেতা ছিলেন, তখন পুরো চিত্রটাই পাল্টে যাবে। সেই তথ্য চার্জশিটে থাকলে বিচার প্রক্রিয়া এক রকম হবে। না থাকলে আরেক রকম হবে। তাই এটা একটা গবেষণার বিষয়। তাই ডেটিকেটেডটিলি জঙ্গি মামলাগুলো তদন্ত করে সেগুলোর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং জঙ্গি সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো মনিটরিং করা,  গ্রেফতার ও জামিনপ্রাপ্তদের খোঁজ খবর রাখা তথা টোটাল প্যাকেজ নিয়ে কাজ করার জন্য এই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট গঠন করা হয়েছে।  কারণ পুলিশই অ্যারেস্ট করে, মামলা করে ও তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়।

সিসিটিসি’র স্পেশাল অ্যাকশন ডিভিশনের প্রধান ও অতিরিক্ত উপ- পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে জঙ্গি ইস্যু নিয়ে কাজ করছি। আমার মতো জঙ্গি ইস্যু নিয়ে আর কেউ কাজ করেনি। কারণ হচ্ছে আমি এটার সূত্র পেয়ে গেছি। সেটা ধরেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাবাদে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করাই তাদের মূল লক্ষ্য। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অপারেশন পরিচালনা, মামলা রুজু, মামলা তদন্ত এবং তদন্তের আগে সন্ত্রাসীদের পর্যবেক্ষণে রাখার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েই কাজ শুরু করেছে নবগঠিত তার ইউনিটটি।

কাউন্টার টেররিজমের গতি বাড়াতে বিভিন্নমুখী প্রশিক্ষণ ও কর্মশালাও চলছে। ডিএমপি’র ট্রেনিং একাডেমিমী থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী ডিএমপি ও সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স অ্যান্ড টেররিজম রিসার্চ (আইসিপিভিটিআর)-এর যৌথ আয়োজনে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কশপ অন টেররিস্ট থ্রেট অ্যান্ড রেসপন্স’ নামে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে। ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। যেন প্রথমবারের মতো জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের উৎস, কারণ ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো  ছাড়াও সন্ত্রাসবাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ধরন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের নবগঠিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক উন্নত দেশের আগ্রহ লক্ষণীয়। তারা নিজেরাই এই ইউনিটকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নিয়ে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদের উৎস, কারণ ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করাই তাদের প্রধান কাজ। দেশের শান্তি বিনষ্ট করে যারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতেই পুলিশের মধ্যে এই বিশেষায়িত টিম গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন: সেনাবাহিনীও তনু হত্যার বিচার চায়

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা