X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যার পর এএসপির লাশ ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা

নুরুজ্জামান লাবু, আমানুর রহমান রনি ও রাফসান জানি
২১ জুন ২০১৭, ২২:১০আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ২২:৩৩

এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদার উত্তরার বাসা থেকে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মিজানুর রহমানকে তুলে নিয়ে হত্যার পর লাশ বেড়িবাঁধে ফেলে গেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘তার গলায় একটি কাপড় পেঁচানো ছিল। গলায় দাগও রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। কারা এবং কেন তাকে হত্যা করেছে তা জানার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবকটি সংস্থা মাঠে নেমেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাইক্রোবাসযোগে ছিনতাইকারী কোনও চক্র জড়িত। কারণ নিহত এএসপির দু’টি মোবাইল ফোন দুর্বৃত্তরা রেখে গেলেও তার মানিব্যাগটি পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘উত্তরার বাসা থেকে বের হওয়ার পর কোনও এক সময়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারপর হয়তো লাশটি বেড়িবাঁধের ওই স্পটে ফেলা দেওয়া হয়। কারা এবং কেন তাকে হত্যা করেছে তা জানার চেষ্টা এবং জড়িতদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’
বুধবার (২১ জুন) রাজধানীর রূপনগর থানাধীন মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার বোটক্লাব এলাকার রাস্তার পাশ থেকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয়রা একটি ঝোপের আড়ালে অজ্ঞাত একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ডিএমপির রূপনগর ও সাভার থানা পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। ঘটনাস্থল ডিএমপি এলাকায় হওয়ায় রূপনগর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গে বুধবার রাত ৯টার দিকে গিয়ে নিহত এএসপির কোনও স্বজনকে দেখা যায়নি। মর্গ সহকারী সেকেন্দার আলী জানিয়েছেন, আগামীকাল সকালে নিহত এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হবে।
পুলিশের এই কর্মকর্তাকে হত্যার বিষয়ে রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম বলেন, ‘তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যার পর বেড়িবাঁধ এলাকায় তার লাশ ফেলে গিয়েছে। আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখেই ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।’

এএসপি মিজানের লাশ উদ্ধারকারী রূপনগর থানার একজন কর্মকর্তা জানান, নিহতের প্যান্টটি ছিল পুলিশের ইউনিফর্ম। আর গায়ে ছিল চেক শার্ট। পকেট থেকে তার দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। মোবাইল ফোন থেকে স্বজনদের ফোন দিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার সঙ্গে একটি ব্যাগও ছিল। ব্যাগে পুলিশের ইউনিফর্মের শার্ট ছিল। ব্যাগের কাপড় একটু এলোমেলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাগে কেউ কিছু খুঁজেছে। এছাড়া তার পকেটের মানিব্যাগটি পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে এমন বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে, যারা ভোরের দিকে শহরজুড়ে প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস নিয়ে ছিনতাই করে বেড়ায়। ঢাকার বাইরে থাকা আসা লোকজনের কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে তারা সব লুটে নেয়। কখনও কখনও টার্গেট করা ব্যক্তিকে জোর করে গাড়িতে তুলে সব কেড়ে নিয়ে নির্জন স্থানে নামিয়ে দেওয়ার নজিরও রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বুধবার এএসপি মিজানুরের চন্দ্রা এলাকায় ডিউটি করার কথা ছিল। ঈদকে কেন্দ্র করে রাস্তায় যানজট কমাতে সকাল সকাল কর্মস্থলে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন তিনি। নিজের নামে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ না থাকায় ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ব্যবহার করতেন এই কর্মকর্তা। আগের দিন মঙ্গলবার (২০ জুন) তিনি গাড়িটি সাভারে হাইওয়ে পুলিশের সাভার সার্কেল কার্যালয়ে রেখে এসেছিলেন। এ কারণে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি পাবলিক পরিবহনে সাভার যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই তিনি দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন। ঢাকা মেডিক্যালে মর্গে এএসপি মিজানুর রহমানের লাশ দেখতে এসছেন স্বজনরা
রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, নিহত মিজানুর রহমান তালুকদারের গলায় কাপড় দিয়ে পেঁচানো ছিল, সেটি গার্মেন্টের ঝুট কাপড়। ব্যাগে ব্যক্তিগত গাড়ির চাবিও পাওয়া গেছে তার। অর্থাৎ সাভারে গিয়ে গাড়ি নিয়ে ডিউটিতে যাওয়ার কথা ছিল তার।
পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত মিজানুর রহমান তালুকদারের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকার আলিভুখা গ্রামে। ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন তিনি। ১৯৮৯ সালে উপ-পরিদর্শক হিসেবে পুলিশে যোগদান করা মিজানুর রহমান বছর তিনেক আগে এএসপি হিসেবে পদোন্নতি পান। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই সন্তানের জনক তিনি। তার বড় মেয়ে সুমাইয়া উত্তরার একটি স্থানীয় কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। আর ছোট ছেলে মুশফিক প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
নিহত মিজানুর রহমানের ভাগ্নে শামীম শেখ জানান, তারা বুঝতে পারছেন না কে বা কারা তার খালুকে হত্যা করেছে। তার খালুর সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা ছিল কিনা তা তারা বলতে পারছেন না। ছোট ভাই শামীম জানান, তার ভাইয়ের পরিবারে কোনও ঝামেলা ছিল না। তাদের পরিবার ছিল সুখী পরিবার। এমনিতেই কোনও শত্রু থাকার কথা জানাতে পারেননি তিনি।

হত্যার আগে ধস্তাধস্তির চিহ্ন

এএসপি মিজানুর রহমানকে হত্যার আগে ধস্তাধস্তি হয় বলে জানিয়েছেন এই লাশের সুরতহালকারী রূপনগর থানার এসআই আলমগীর কবীর। সুরতহাল রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, নিহত এএসপির দুই গালে ছিলা জখম রয়েছে। এছাড়া মাথাতেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তাকে কোনও মাইক্রোবাসে তোলার পর প্রথমে তাকে মারধর করা হয়। পরে আকাশি রঙের গার্মেন্ট ঝুট কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়। এ কারণে তার গলায় কালো জখমের দাগ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন
মিরপুরের বেড়িবাঁধ থেকে এএসপির লাশ উদ্ধার

/এসএমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
রাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
‘জেসির অভিজ্ঞতা বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
‘জেসির অভিজ্ঞতা বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ