X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

শফীপুত্র আনাসের তৎপরতায় কোণঠাসা বেফাক-হেফাজত-হাটহাজারী মাদ্রাসা

চৌধুরী আকবর হোসেন
২১ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৫২আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৪৮

 

আহমদ শফী ও তার ছেলে হাটহাজারী মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের (বেফাক) ওপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে হেফাজত আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আহমদ শফী বর্তমানে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তার এই  অসুস্থতার সুযোগে কোনও নিয়মনীতি না মেনেই হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করছেন আনাস মাদানী। তবে হেফাজত আমিরের ছেলে হওয়ায় প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না ভুক্তভোগীরা।

আনাসের বাবা আহমদ শফী দেশের প্রবীণ কওমি আলেম। একইসঙ্গে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের (হাটহাজারী মাদ্রাসা) মহাপরিচালকও। এছাড়া তিনি হেফজতের আমির ও বেফাকের চেয়ারম্যানের দায়ীত্বেও রয়েছেন।

সূত্র জানায়, আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে মাদ্রাসার প্রশাসনিক তদারকিতে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। একাধিকবার তাকে দেশে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিজের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় আহমদ শফী দফতারিক কাজে  ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর ওপর নির্ভর হয়ে পড়েন। এই সুযোগে মাওলানা আনাস মাদানী হাটহাজারী মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও বেফাকে নিজের বলয় বাড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

শাহ আহমদ শফী নিজের একক সিদ্ধান্তে ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মাদ্রাসার মহাপরিচালকের ছেলে হিসেবে তিনি প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। তার সুপারিশের ভিত্তিতে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ, বরখাস্ত করা হয় প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে।

সূত্র জানায়, হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীর প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদকে কোনও নোটিশ ছাড়াই ২৮ আগস্ট হঠাৎ দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর প্রভাব, মাদ্রাসার ভেতরে প্রশাসনিক অনিয়মের বিষয়গুলো আলোচনায় আসে। মাওলানা আনাস মাদানীর প্রভাবে কোনও কারণ দর্শানো ছাড়াই কমপক্ষে ১১ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে বিনা কারণে মৌখিক নির্দেশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা হাফেজ কাছেম (সহযোগী পরিচালক ও মুহাদ্দিস, মাওলানা রশীদ আহমদ ফয়জী, মাওলানা আবু তৈয়ব আব্দুল্লাপুরী (শিক্ষক প্রতিনিধি), মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ ওসমান, মাওলানা তরীকুল ইসলাম, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা মাহবুবুর রশীদ, মাওলানা তৌহিদুল ইসলাম, মাওলানা হাফেজ ইসমাঈল, মাওলানা হাবীবুল্লাহ সোহাইল, মাওলানা হাফেজ আব্দুর রশীদ।

সূত্র জানায়, হাটহাজারী মাদ্রাসার গঠনতন্ত্র ‘রোয়েদাদে দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম’-এর ১৪ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপ-ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘নিয়োগ, বরখাস্ত, পদ বণ্টনসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট সব সিদ্ধান্ত মজলিসে শুরা গ্রহণ করবে।’ এছাড়া হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ দেশের সব কওমি মাদ্রাসা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের নীতিমালার অনুসরণ করে থাকে। দারুল উলুম দেওবন্দের গঠতন্ত্র ‘দস্তুরে আসাসী’এর ৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ৭ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপ-ধারায় উল্লেখ আছে, ‘সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ, বরখাস্ত, পদোন্নতি, পদাবনতি, বেতন নির্ধারণ, দায়িত্ব বণ্টন, দায়িত্ব পরিবর্তন শুরা কমিটি নির্ধারণ করবে।’

সূত্র জানায়, মাদ্রাসার গঠনতন্ত্রে প্রতি বছর শুরা বৈঠক করার উল্লেখ থাকলেও ২০০২ সালের পর ২০১২ পর্যন্ত শুরা কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। এরপর ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরা কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি।এই সময়ের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ, বরখাস্ত সবই হয়েছে মহাপরিচালকের একক সিদ্ধান্তে। আর মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফীর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে আনাস মাদানী নিজের সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রভাবিত করেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরার বৈঠকে কমপক্ষে ৮-১০ জন সিনিয়র শিক্ষককে টপকে শফীপুত্র আনাস মাদানিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী মজলিসে শুরার বৈঠকে সদস্যরা ছাড়াই অন্য কেউ উপস্থিত থাকার সুযোগ না থাকলেও শুরা সদস্য না হয়েও বৈঠকের উপস্থিত ছিলেন আহমদ শফীপুত্র আনাস মাদানী।

জানা গেছে, ১৯০১ সালে শায়খুল ইসলাম মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রহ.) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের (হাটহাজারী মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠা করেন।বর্তমানে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৪০ জন, কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩৫ জন।

২০১২ সালে কোনও ধরনের কারণ দর্শনোর নোটিশ ছাড়াই মৌখিক নির্দেশে চাকরিচ্যুত করা হয় মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ ওসমানকে। তিনি মাদ্রাসার হেফজখানার শিক্ষক ছিল। দীর্ঘ ১২ বছর হাটহাজারী মাদ্রাসায় চাকরি করার পর তিনি জানতে না কী কারণে তাকে চাকরি হারাতে হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে হাফেজ মুহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসাগুলোতে চাকরির নিয়োগ, বরখাস্ত বিষয়ে কোনও নিয়মনীতি নেই। তবে কোনও কারণ ছাড়াই কাউকে মুখের কথায় চাকরিচ্যুত করাটা অন্যায়।’

হেফাজত আমিরের ছেলে হওয়ায় প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘আহমদ শফী অসুস্থ। তিনি ছেলের ওপর নির্ভরশীল।এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার ছেলে আনাস মাদানী নিজের সিদ্ধান্ত বাবার সিদ্ধান্ত বলে চাপিয়ে দেন। অন্যদিকে বাবার কাছেও নানা রকম ভুল তথ্য তুলে ধরেন। মূলত আহমদ শফীর পর মাদ্রাসা, হেফাজত—এসব ক্ষেত্রে নিজের নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে যাদের বাধা মনে করছেন, তাদের সরিয়ে দিচ্ছেন আনাস মাদানী।’   

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাওলানা আনাস মাদানী। তিনি বলেন, ‘আমি আহমদ শফীর ছেলে, এটাই আমার অপরাধ। এ জন্য নানাভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি মাদ্রাসা পরিচালনা করি না। মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য কমিটি আছে। শুধু তাই নয়, আহমদ শফী নিজেও একক কোনও সিদ্ধান্ত নেন না, তিনি মজলিসে শুরা ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন।’

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
তীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগতীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া