ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় যেসব সমস্যা রয়েছে, তার ৮০ শতাংশের জন্য ঢাকা ওয়াসা দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থার কাউন্সিলররা। এ জন্য তারা ওয়াসাকে আরও জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ডিএসসিসি’র একাদশ বোর্ড সভায় তারা এ অভিযোগ করেন। এসময় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানও উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
সভায় ডিএসসিসি’র বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা সুপেয় পানি, সুয়ারেজ ব্যবস্থা, ওয়াসার বিকল পাম্প ও জলাবদ্ধতার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। বিভিন্ন সময় অভিযোগ করা হলেও ঢাকা ওয়াসা তা আমলে নেয় না, বিষয়টি উল্লেখ করে অনেক কাউন্সিলর সভায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
পরে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন,‘আমরা কোনও দোষারোপ করতে চাই না। অতীতের সব ভুল বোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, ওয়াসা আমাদের সহযোগিতা করবে।’
এর আগে শুরুতেই মেয়র সাঈদ খোকন অভিযোগ তুলে বলেন, ‘ডিএসসিসি এলাকার পুরনো ঢাকায় সুপেয় পানির অভাব এবং কিছু কিছু এলাকার পানিতে গন্ধ আসে।’
কোন কোন এলাকায় পানি নিয়ে কী সমস্যা, এ বিষয়ে উন্মুক্ত বক্তব্যের সুযোগ আসলে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল বলেন, ‘কেএম আদম লেনে দু’টি পানির পাম্প নষ্ট। এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে খাবার পানি পায় না। ওয়াসাকে বারবার অভিযোগ জানালেও তারা কোনও কথা কানে তুলে না।’
২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন সেগুনবাগিচা এলাকার সমস্যা তুলে ধরে বলেন, ‘সেগুনবাগিচা এলাকায় দুই বছর আগে জলাবদ্ধতা ছিল না। আর এখন বৃষ্টি হলে হাটু পানি হয়ে যায়। এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আশপাশসহ ওই এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতে পানির গতি খুবই কম।’
কাউন্সিলর ওমর বিন তামিম বলেন, ‘ওয়াসা ড্রেন পরিষ্কার করে আর ময়লা রাস্তায় ফেলে চলে যায়। এ সমস্যার জন্য এলাকাবাসী কাউন্সিলরদের গালাগালি করে। কিন্তু ওয়াসাকে ময়লা সরাতে বললেও তারা ময়লা সরায় না। ফলে ড্রেনের ময়লা ড্রেনে চলে যায়।’ এমন অভিযোগ অধিকাংশ কাউন্সিলদের।
এদিকে ২৭, ৫২, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা তাদের অভিযোগে বলেন, ওয়াসাকে এলাকার সমস্যা বারবার জানানো হয়, কিন্তু তারা এ বিষয় কানে নেয় না। এসময় ওয়াসা এমডি’র কাছে তার অফিসের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাউন্সিলররা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, ‘এরপর থেকে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কাউন্সিলরদের কাছে ফান্ড দেবো। তারা পরিষ্কার করবেন।’
৪৫,৪৬ ও ৪৭ ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর হেলেনা আক্তার বলেন, ‘পানির সমস্যা দেখতে আমার এলাকা ঘুরি। অনেক সময় এলাকাবাসী হাড়ি-পাতিল নিয়ে মিছিলসহ আমাদের ঘিরে ধরে। কিন্তু এই সমস্যা আমাদের না। তবুও জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। পানিতে দুর্গন্ধ, পানির পাইপ অনেক নিচে চলে গেছে। পানি পাওয়া যায় না, জলাবদ্ধতা এসব অভিযোগ ওয়াসার কাছে দিলে তারা কথা কানে নেয় না।’
সভা থেকে অন্যান্য কাউন্সিলরদের সমস্যা ও অভিযোগ লিখিতভাবে মেয়রের কাছে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সভা শেষে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘পানি না পাওয়া এবং নোংরা পানির সমাধান শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে করতে হবে ওয়াসাকে। ভুল বোঝাবুঝি পেছনে ফেলে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবের কাজ ওয়াসাকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিতভাবে করবো।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলালসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: