X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

কারাবন্দি অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন যেসব নেতা

জামাল উদ্দিন
২০ জুন ২০১৮, ১২:৫২আপডেট : ২০ জুন ২০১৮, ১৯:০৭

কারাবন্দি অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন যেসব নেতা
এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দেশের অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও ব্যবসায়ীরা কারাবন্দি হয়েছিলেন। তাদের অনেকেই তখন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে।

কারা সূত্র জানায়, ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী কারাবন্দি হয়েছিলেন। তখন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন অসুস্থ। তাদেরকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ), স্কয়ার, বারডেম ও ল্যাবএইড-এ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্কয়ার হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল ও মোহাম্মদ নাসিমকে ল্যাবএইড হাসপাতালে আর শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেককেই বিএসএমএমইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।
সে সময়ে অন্তরীণ থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অনুমতি নিয়ে রেখেছিল কারা কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিদর্শনও করেছিল কারা কর্তৃপক্ষ। যদিও পরে আর তাকে সেখানে যেতে হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক বন্দিকেই বারডেমে ভর্তি করতে হয়। সেটাতো সরকারি হাসপাতাল নয়।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজির (উপ-মহাপরিদর্শক) দায়িত্ব পালন করেন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। বেসরকারি হাসপাতালে কারাবন্দিদের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘যদি আপনি জেল কোডের কথা বলেন, তাহলে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জেল কোডের বিধানমতে তাকে প্রথমে কারাগারের ডাক্তার পরীক্ষা করেন। কারাগারের ডাক্তার পরীক্ষার পর যদি মনে করেন রোগীর অসুস্থতা এত বেশি যে তাকে কারাগারের বাইরের হাসপাতালে নিতে হবে, তখন সাধারণত রোগীর চিকিৎসা ও নিরাপত্তার সব ধরনের সুবিধা আছে এমন সরকারি কোনও হাসপাতালে তাকে পাঠানো হয়। যেমন বিএসএমএমইউতে প্রিজন সেল রয়েছে। দেশসেরা চিকিৎসকরাও সেখানে আছেন। তাই কারা কর্তৃপক্ষ এমন হাসপাতালের কথা আগে বিবেচনা করে।’

‘ তবে যে রোগের চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে সে সুবিধা সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালে আছে কিনা সেটাও যাচাই করা হয়। না থাকলে তখন কোনও প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কথা চিন্তা করা হয়,’ বলেন তিনি।

‘আবার এমন নজিরও আছে যে আসামি রোগী তিনি ভিআইপি পর্যায়ের। সেক্ষেত্রে তিনি আবেদন করলে কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে রাখেন। তখন রোগীর পছন্দমতো হাসপাতালে নেওয়া যেতে পারে। কারা কর্তৃপক্ষ নিজে থেকে কোনও কিছু করে না। এটা সরকার করে,’ জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মেজর হায়দার বলেন, ‘সরকার যদি মানবিক কারণে বিবেচনা করে, তাহলে সেটা দিতে পারে, অতীতে সেটা দেওয়া হয়েছে। যার কারণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কয়ারে (স্কয়ার হাসপাতাল) যেতে পেরেছিলেন। আওয়ামী লীগের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি ( আব্দুল জলিল) ল্যাবএইডে (ল্যাবএইড হাসপাতাল)যেতে পেরেছিলেন। সে সময়েই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালের অনুমতি নিয়ে রেখেছিল।’
কিন্তু, বর্তমানে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এখন তিনি সেই সুবিধা পাবেন কিনা জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের সাবেক এই উপ-মহাপরিদর্শক বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত হলেই তিনি এটা পাবেন, ওটা পাবেন না তা কিন্তু নয়। বন্দির ক্ষেত্রে যে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় সেগুলো হচ্ছে, বাসস্থান, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা। সাজাপ্রাপ্ত হলে বন্দিকে এগুলো দেওয়া যাবে না এ ধরনের নজির নাই।’

তিনি বলেন, ‘ফাতেমা যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেলখানায় রইলো, এটা তো বিধিতে নাই। এটা আদালত আদেশ দিয়েছেন। সরকারপক্ষ এটা নিয়ে আপিল করেনি। উদারতা দেখিয়েছে। ফলে ফাতেমা থাকছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। চিকিৎসার বিষয়ে আদালত সাধারণত অনুমতি দিয়ে থাকেন যে রোগীর যথাযথ চিকিৎসা করা হোক। মানবিক বিবেচনায় যেকোনও চিকিৎসা করানো যেতে পারে।’
মেজর (অব.) হায়দার বলেন, ‘অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার পর তখন আমি মোহাম্মদ নাসিমকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। তখন বলা হচ্ছিল যে অমুকের পারমিশন লাগবে। আমি বললাম পারমিশন পরে, আগে চিকিৎসা।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি অসুস্থ হওয়ায় বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ এবং সরকার তাকে কারা বিধি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তাব করলে তাতে সম্মত হননি খালেদা জিয়া। এ নিয়ে বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবারও (১১ জুন) খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির দুজন নেতা। এ সময় ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রয়োজনে তার দল ও পরিবার বহন করবে বলেও প্রস্তাব দেওয়া হয়। সে সময়ে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা গ্রহণে রাজি না হলে সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) তাকে চিকিৎসা গ্রহণের প্রস্তাব দেবেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

পরে সেদিনই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি ক্লিয়ারলি বলছি সরকারিভাবে সর্বোচ্চ যেখানে যাওয়া যায় সেই চেষ্টা করছি। আমি মনে করি বিএসএমএমইউ না হলে তার সিএমএইচে যাওয়া উচিত।’ আর নিজ খরচে ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘এটার কোনও যুক্তি আছে বলে আমার মনে হয় না। সিএমএইচের মতো জায়গায় না যাওয়ার কোনও যুক্তি নাই। ইউনাইটেডের চেয়ে সিএমএইচে সুযোগ-সুবিধা বেশি।’

সে সময়ে যেসব রাজনৈতিক নেতা কারাবন্দি ছিলেন তাদের অনেকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি নিয়ে সরাসরি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে মন্তব্য করতে চাননি।

তবে ঈদের ছুটি শেষে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সোমবার (১৮ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সামরিক পরিবারের একজন হয়ে সিএমএইচে কেন তিনি (খালেদা জিয়া) ট্রিটমেন্ট নিতে সংশয়ে আছেন, কেন তার এখানে শঙ্কা, কেন সিএমএইচ নয়?’ গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবজেলে থাকা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা হয়েছিল স্কয়ার হাসপাতালে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তখন যদি আমাদের নেত্রীকে সিএমএইচে অ্যালাউ করা হতো, তাহলে তিনি স্কয়ারে যেতেন না। এটা হলো সত্য। আমাদের নেত্রীর সিএমএইচে যদি চিকিৎসা করার সুযোগ থাকতো, তাহলে তিনি স্কয়ারে কেন যাবেন।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার তো মনে হয় বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার চেয়ে আন্দোলনের ইস্যু খোঁজার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’

অন্যদিকে, একইদিনে ( সোমবার, ১৮ জুন) বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা তো বলিনি নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আর সেনাবাহিনীর হাসপাতাল হলো সিএমএইচ, সেই সিএমএইচের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নাই, সিএমএইচে যাবেন না, এতে অনেকে মনে করে তিনি অসুস্থ নন। কারণ, অসুস্থ লোক কোন হাসপাতালে যাবে সেই সময়ক্ষেপণ করে তার নিজের শরীর খারাপ করতে পারে না।’ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রীকে যেখানে নেওয়া হতো সেখানেই তিনি যেতেন। কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে গিয়েছিল স্কয়ার হাসপাতালে। যদি বলতো যে আপনি আরেক জায়গায় যান, তিনি যেতেন। কাজেই খালেদা জিয়ার বর্তমান চিকিৎসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার সঙ্গে তুলনা চলে না ।’

/জেইউ/টিএন/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি