রংপুরে দায়ের করা মানহানির মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর পৌনে দুটার দিকে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) কায়সারুল ইসলামের আদালতে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারক।এরপর তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনটা ১০ মিনিটে ব্যারিস্টার মইনুল ইসলামকে রিসিভ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল আলম বাংলা ট্রিবউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলার বলেন,‘তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে সাধারণ বন্দিদের মতো রাখা হবে।’
মইনুল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জামিন শুনানির শুরুতে বলেন, ‘স্যার, (বিচারক) মামলাটি কী এবং কোন ধারার মামলা আমাদের কাছে কিছুই নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যার, (বিচারক) আপনাকে আগে জানতে হবে এটা কী মামলা, জামিনযোগ্য ধারার নাকি, জামিন অযোগ্য ধারার এটা দেখতে হবে। জামিনযোগ্য ধারার হলে একরকম, আর জামিন অযোগ্য ধারার হলে আরেক রকম আদেশ দেবেন।’
তখন বিচারক বলেন, ‘এটা রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের মামলা, যার নম্বর ৭৯৭, দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার মামলা।
তারপর আসামি মইনুল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতকে জিজ্ঞাসা করেন, মইনুলের বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা আছে কিনা? এখানে অন্য থানার প্রসিকিউসনের পুলিশ দেখা যাচ্ছে।’
বিচারক বলেন,‘না। ওনার বাসা ওয়ারি থানার এলাকায় হওয়ায় ওই থানার পুলিশ আছে। বাকিরা নিরাপত্তার জন্য এখানে (কোর্টে) আছেন।
সানাউল্লাহ মিয়া শুনানিতে আরও বলেন, ‘এ মামলার আসামি মইনুল হোসেনের পক্ষে শুনানি করবেন তার আপন মামা খন্দকার মাহবুব হোসেন। তবে এ মামলাটি একটি সিআর মামলা, বাদী লিলি মায়া বেগম। উনি মামলা করেছেন রংপুর। মামালর ঘটনাস্থল হলো ঢাকায়। ওইখানে তো বাদীর কোনও মানহানি হয়নি। মাননীয় আদালতের কাছে আমরা জামিন চাই।’
আসামি মইনুল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী মোসলেউদ্দিন জসিম শুনানি করে বলেন,‘ফৌজদারি কার্যবিধি ৮৬ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও আসামি অন্য কোনও জুরিসডিকশন এলাকার জামিনযোগ্য ধারার মামলায় গ্রেফতার হন, তাহলে পুলিশ অথবা ম্যাজিস্টেট নিজ মুচলেকায় জামিন দিতে পারেন। যেহেতু তাকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেহেতু জামিনযোগ্য ধারায় তাকে জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার রয়েছে।’
আসামি মইনুল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন,‘তিন ঘণ্টা আগে মামলা করা,তারপর গ্রেফতার।এটা রাজনৈতিকভাবে করা। যেহেতু জামিনযোগ্য ৫০৬ ধারার মামলা, আমাদের নিবেদন— তাকে বয়স,অসুস্থতা বিবেচনায় জামিন দেওয়া হোক।’
এদিকে শুনানির সময় পুলিশ ও আইনজীবীদের আদালতের ভেতরে প্রবেশ করা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। তখন আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করলে বিচারক শান্ত হতে বলেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার কারণে পুলিশ আদালতে বেশি লোক ঢুকতে দেয়নি। আর এখানে তো সিনিয়র আইনজীবীরা আছে।’ পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে,আসামি মইনুল হোসেনের জামিনের বিরোধিতা করে আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ শুনানিতে বলেন, ‘উনি একজন নারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন বলেছেন। এটা সবাই সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছেন। তিনি নারী সমাজকে কলঙ্কিত করেছেন।’
কাজী নজিবুল্লাহ হিরু জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘মইনুল হোসেন শুধু মাসুদা ভাট্টিকে অপমানিত করেননি। তিনি সারা নারীসমাজকে অপমানিত করেছেন। আজকে কিছু কিছু নারী অগ্রসর হচ্ছে, তাদেরকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এরপর ওনাকে বলা হলো— ‘আপনি ক্ষমা চান’। উনি বলেছেন— ‘আমি পার্সোনালি ফোন করেছি’। তিনি পুরো নারীসমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরোসমাজ।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মইনুল হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে দুপুর একটার দিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে একটা পাঁচ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন।
সোমবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রবের বাসা থেকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। রংপুরে দায়ের করা মানহানির একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্মকমিশনার মাহবুব আলম বাংলা ট্রিবিউন জানান, রংপুরের একটি মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি তিনি। তাকে সেই পরোয়ানায় গ্রেফতারের পর ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর বেসরকারি ৭১ টেলিভিশনের একটি টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে নারী সাংবাদিক ও সম্পাদকরা বিবৃতি দিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলেন। তিনি এরপর দুঃখপ্রকাশ করে লিখিত ক্ষমা চাইলেও তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এরপর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন মাসুদা ভাট্টি। পরে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে।
তবে মাসুদা ভাট্টির ও জামালপুরের মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। কুড়িগ্রামে দায়ের করা মামলায় আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেন।