X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বোনের কিডনিতে বাঁচার স্বপ্ন রওশন আরার

তাসকিনা ইয়াসমিন
২৫ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:০৩আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:২১

রওশন আরা

বাম পাশের কিডনিতে অস্ত্রোপচারের পর সিটিস্ক্যানে দেখা যায়, দুটো কিডনিই নেই তার। অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। তাই রওশন আরাকে (৫৫) নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা। এই অবস্থায় নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি এখন।

বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে রওশন আরাকে দেখতে গেলে তার ছেলে শরিফ শিকদার জানান, তার মায়ের (রওশন আরার) শরীরের বাম পাশ পুরোটা অবশ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়েছে।

শরীফ শিকদার বলেন, ‘দুপুরে মায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে হাই ডিপেন্ডেন্সি কেয়ার ইউনিট (এইচডিইউ-তে নেওয়া হয়। তার অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। তার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।’  

মায়ের ব্যাপারে শরিফ শিকদার আরও বলেন, ‘আমার মায়ের একটি কিডনি অস্ত্রোপচারের পর সিটিস্ক্যানে তার দুই কিডনিই দেখতে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে একদিন পর পর ডায়ালাইসিস করতে হয়। যে চিকিৎসকের অধীনে মায়ের চিকিৎসা চলছে, তিনি মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তার কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’  

সরেজমিনে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর ইউরোলজি বিভাগের ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন রওশন আরা। তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তিনি এখন আর উঠে বসতে পারেন না। তার বাম পাশ পুরোটাই অবশ হয়ে ফুলে গেছে। কিডনি অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তার প্রস্রাব বন্ধ আছে। এরপর গত কয়েকদিন ধরে তার পায়খানাও বন্ধ হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে তার শরীরে। তিনি এখন পুরোপুরি শয্যাশায়ী। তবে আশাহত হন পরিবার। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাওয়া রওশনের নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন পরিবারের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে রওশন আরার ছেলে শরিফ শিকদার বলেন, ‘আমার খালার কিডনি মাকে দেওয়া হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরইমধ্যে খালার বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।’

তবে কিডনি প্রতিস্থাপনে দেরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শরিফ শিকদার আরও বলেন, ‘আমার মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমার মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে চিকিৎসক দেরি করছেন। তারা আইনি সমস্যার কথা বলছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমার মা মারা যাবেন।’  

এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউ-এর ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখন তাকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য রেডি করছি। ডোনারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অলরেডি কমপ্লিট হয়ে গেছে। উনারও (রওশন আরার) প্রায় ৫০ ভাগ পরীক্ষা হয়ে গেছে। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তাকে স্থিতিশীল অবস্থা আনার পরই তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা যাবে।’

রওশন আরার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ডা. হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এখন ভাল আছে। আরও তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস লাগবে তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে। তার শরীরে রক্ত দেওয়া শেষ হওয়ার পর তিন সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা তাকে রক্ত দেবো না। তাকে আরও এক-দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর তিন সপ্তাহ রক্ত দেওয়া বন্ধ রেখে একটি রক্ত পরীক্ষা করব আমরা। এরপর সেই রিপোর্টটি নেগেটিভ আসলে তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হবে।’ 


রওশন আরার আরেক ছেলে রফিক শিকদার মায়ের এই অবস্থায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মায়ের অবস্থা মোটেও ভাল না। আজ  (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে তার জ্ঞান নেই। গত রাত থেকে তার পেটটা ফুলে গেছে। এরইমধ্যে তার স্ট্রোক জাতীয় কিছু একটা হয়ে গেছে। বিশেষ করে কিডনি না থাকা রোগীদের ডায়ালাইসিস করতে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। ১৫-২০ দিন আগে নাকি তার ডায়ালাইসিস করার সময় এটা একবার হয়েছে। গতকালও নাকি তার এই ঘটনা ঘটেছে। তাই তাকে এইচডিইউতে রাখা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা মায়ের ব্যাপারে দায়-স্বীকারমূলক দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রথমদিকে বলেছিলেন- আমার মায়ের কিডনি আছে, তবে নন ফাংশনাল হওয়ার কারণে নন ভিজ্যুয়ালাইজড। পরবর্তীতে যখন দেখা গেলো যে- এই যুক্তি দিয়ে এই মানুষদের বোঝানো যাবে না, তখন আমাদের বলল যে- আপনারা আপনাদের মাকে সুস্থ দেখতে চান কিনা? এরপর তারা বলে যে- কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবো। তখন আমরা জানতে চাই, একটা কিডনি কাটতে গিয়ে কি দুটোই কাটা হয়ে গেছে? তখন বলেছে- এটা ভুল করে হতে পারে বা আপনার মায়ের কিডনি অন্যরকম ছিল, সেটা হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি ডাক্তাররা। তারাও ভুল করে থাকতে পারেন।এরপর তারা আমার খালার কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপনের কথা বলেছেন।’  

রফিক শিকদার বলেন, ‘যেহেতু আমার মা, আমি সবার আগে মাকে সুস্থ দেখতে চাই। এই কারণে আপাতত মায়ের সুস্থ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’  






প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর রওশন আরার বাম কিডনি অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। এসময় তার ডান কিডনিটি কেটে ফেলা হয়েছে কিনা তা তদন্তের জন্য বিএসএমএমইউ-এর সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে। এছাড়াও কমিটিতে আছেন বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম খুরশিদুল আলম, নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক অসীম কায়েস, রেডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, সার্জারি বিভাগের ডিন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বিএসএমএমইউ’র অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম। এছাড়া তার চিকিৎসা পরিচালনার জন্য ছয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত বোর্ডের রিপোর্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি করে দেওয়ার পর তারা আর কোনও রিপোর্ট দেয়নি। আমার কাছে এর বেশি আর তথ্য নেই। তবে আগামী শনিবার অফিসে এসে আমি রোগীর ব্যাপারে ও তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ব্যাপারে খোঁজ নেব।’ 

এ সংক্রান্ত খবর: 

বাম কিডনি ফেলা হলো, ডানেরটা কোথায়!

দুই কিডনিবিহীন রোগীকে নিয়ে কী করবে বিএসএমএমইউ?

 

 

 




 

 

/টিওয়াই/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে