দুই কিডনি হারানো রওশন আরা (৫৫) এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার ছেলে রফিক শিকদার বলেন, ‘আমার মা এখন ভালো নেই। তার অবস্থা খুবই খারাপ। ধীরে ধীরে তার অবস্থা অবনতির দিকে গেছে। এখন তিনি আইসিইউতে আছেন। আমি তাকে দেখে এসেছি। অলরেডি ডেড হয়ে গেছে। তার একটা চোখ সামান্য একটু খোলা আছে। আর কোনও সাড়া নেই।’
রফিক শিকদার বলেন, ‘একজন মানুষ বেঁচে থাকলে যে সাড়া থাকে, সেটা নেই। মারা গেছে কী না, সেটাও বুঝতে পারছি না। অনেক সময় আইসিইউতে ভেন্টিলেশন লাগানো থাকলে পেট নড়াচড়া করে। কিন্তু, আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে; হয়ত বেঁচে নেই।’
চিকিৎসকের ব্যাপারে রফিক শিকদার বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, রোগীর অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত বেঁচে থাকলে মেডিক্যাল বোর্ড তাকে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। উনাদের কথা অনুসারে আমি যেটা বুঝতে পারছি, মাকে কোনোভাবে আর বাঁচাতে পারব বলে মনে করিনা। চিকিৎসক আমাদেরকে এই কয়দিন সান্ত্বনার বুলি শুনিয়ে শান্ত করেছিল। যেন আমরা কোনও পদক্ষেপ না নেই। মাকে আর সুস্থ করা যাবে না, এই আশঙ্কায় সময় কাটছে আমাদের।’
রফিক শিকদার বলেন,‘আমার মাকে দেখলে বুঝতে পারবেন, একজন মানুষ কতটা নিথর হয়ে লাশের মতো পড়ে থাকে। বুকের ওপরে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলাম এই কয়দিন।’
এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা তো তাকে ট্রান্সপ্লান্ট এর জন্য রেডি করে ফেলেছিলাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোগী ঘুমাচ্ছে। ওরা মনে করেছে যে, আগের রাতে রোগী পায়খানা করেনি; পরে হওয়ার পর ঘুমাচ্ছে। আমার সকালে কনফারেন্স ছিল। আমি সকালে দেখে গেছি রোগী ঘুমাচ্ছে। ছোট ছেলেটা আমাকে বলেমা ঘুমাচ্ছে। আমি দেখি তার পালস ও ব্লাড প্রেসার সব ভালো আছে। ১২টার দিকে আমার পিয়ন ফোন দিয়ে বলে রোগী ঘুম থেকে উঠছে না। তার স্বাভাবিক ঘুম মনে হচ্ছে না। এরপর নেফ্রোলজির প্রফেসর এসে তাকে দেখে সে অজ্ঞান। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সিটি স্ক্যান করানো হয়। পরে তাকে আইসিইউতে দিয়েছি। বৃহস্পতিবার রোগীর যে কন্ডিশন ছিল, আজও সেই কন্ডিশন আছে। এটা খুবই দুঃখজনক উনি বড় ধরনের স্ট্রোক করেছেন।’
আরও পড়ুন: বোনের কিডনিতে বাঁচার স্বপ্ন রওশন আরার
ট্রান্সপ্লান্ট প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, ‘ট্রান্সপপ্লান্টের তিন সপ্তাহ আগে ব্লাড দেওয়া বন্ধ করতে হয়। আমরা সেই প্রক্রিয়ায় আগাচ্ছিলাম। এখন যে অবস্থায় আছে জানি না কোন দিকে যায়! ডোনারের প্রায় সব টেস্ট কমপ্লিট করে ফেলেছি। কাল আমাদের মেডিক্যাল বোর্ড রোগীকে রিভিউ করবে।
আমি রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।’
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর রোগী রওশন আরার বাম কিডনিতে অস্ত্রোপচার করেন বিএসএমএমইউ এর চিকিৎসকরা। এরপর তার শরীরের অবস্থা খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখন সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে তার শরীরে কোনও কিডনিই নেই। সেই অবস্থা থেকে কিছুটা শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও পরে তার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি করেছে। একটি কমিটি আসলে কী ঘটেছে, তার তদন্ত করছে। অন্য কমিটি হলো- মেডিক্যাল বোর্ড, তারা রোগীর চিকিৎসা করছে। রওশন আরা’র সন্তানেরা মায়ের একটি কিডনি অস্ত্রোপচারের পর দুটি কিডনি কেন নেই, এই ব্যাপারে জানতে চান। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক তাদের সঙ্গে একটি লিখিত চুক্তি করে। সেখানে রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের সম্পূর্ণ খরচ বহনের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বাম কিডনি ফেলা হলো, ডানেরটা কোথায়!