X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিস্থিতি আমাকে রাজনীতি নিয়ে লিখতে বাধ্য করেছে: অরুন্ধতী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ মার্চ ২০১৯, ০১:২০আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৫:৫৫

ছবিমেলা আয়োজিত অনুষ্ঠানে অরুন্ধতী রায়

পরিস্থিতিই রাজনীতি নিয়ে লিখতে বাধ্য করেছে—নিজের লেখালেখি নিয়ে বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেছেন বুকার জয়ী ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায়। ‘গড অব স্মল থিং’-এর বুকার পুরস্কার জেতা, জনপ্রিয়তা, পাঠকপ্রিয়তা এমনই জায়গায় উপনীত হয়েছে যে সাহিত্যের ভেতর দিয়ে রাজনীতিকে দেখতে গিয়ে তিনি দিনে দিনে রাজনীতি বিষয়ে আরও নিবিষ্ট হয়েছেন, সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে না জড়ালেও সাহিত্যের ভেতর দিয়ে তার রাজনীতি সম্পৃক্ততা আরও বেড়েছে। অরুন্ধতী বলেন, সে সময় চারপাশে যা ঘটছে আমার অন্য কোনও চয়েস ছিল না। রাজনৈতিক লেখালেখির বাইরে কিছু ভাবার ছিল না। ‘দ্য এন্ড অব ইমাজিনেশন’ তার প্রথম এ ধরনের লেখা উল্লেখ করে অরুন্ধতী বলেন, ‘সে সময় এতো ঘৃণা, এতো জাতীয়তাবাদী চিন্তা, নিউক্লিয়ার যুদ্ধ, আমার অন্য কোনও চয়েস ছিল না বলেই এই লেখার মধ্য দিয়ে আমি অন্য জগতে পা রাখলাম।’
মঙ্গলবার (৫ মার্চ ) বুকার জয়ী ভারতীয় লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায় রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ছবিমেলা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের চলমান সংকটগুলো নিয়ে তিনি লিখবেন কিনা বলতে গিয়ে এই লেখক বলেন, কোনও কিছু নিয়ে লেখার জন্য সে বিষয়ে অনেক কিছু পড়ে, সেই স্থান ভ্রমণ করে তারপর তিনি লেখার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে এখনই নয়, বাংলাদেশে পরবর্তীতে এসে, এখানকার বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবেন এবং লিখবেন তিনি।
গত রবিবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে তার কাজের গুণমুগ্ধ পাঠকদের সামনে নিজের বই ও অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন এই লেখক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈষম্য, এনজিওর কর্মকাণ্ডকে সামনে রেখে সরকারের ব্যর্থতার আড়ালসহ কথা বলেছেন অনেক ইস্যুতে। উপস্থিত দর্শকের প্রশ্নের জবাবেও উঠে এসেছে নানা বিষয়।
এর আগে তাকে নিয়ে ছবিমেলার ‘ আটমোস্ট এভরিথিং’ নামের অনুষ্ঠানটি হবে কিনা তা নিয়েই ছিল দিনভর সংশয়। সকাল থেকে নানা নাটকীয়তা, অনিশ্চয়তার মধ্যে ভেন্যু বদল করে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন আয়োজকরা। মঙ্গলবার হঠাৎ পূর্বনির্ধারিত ভেন্যুতে অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে পুলিশ জানানোর পরপরই মাইডাস সেন্টারে এর আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় এই অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও অনুমতি সংক্রান্ত নানা জটিলতায় তা সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শুরু হয়। এর আগে ৬টা ৪০ মিনিটে অরুন্ধতী রায় মাইডাস অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন। এ সময় তাকে স্বাগত জানান আলোকচিত্রী ও ছবিমেলার অন্যতম আয়োজক শহিদুল আলম। তিনি অরুন্ধতীকে প্রশ্ন করেন, ‘কেন আপনি এখানে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনার জন্য, আপনাদের সবার জন্য’।
কথোপকথনের সময় অরুন্ধতীকে সঞ্চালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রশ্ন করেন, ‘বলা হচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, জিডিপি বাড়ছে। এটাকে গুরুত্ব দিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে অরুন্ধতী রায় কী বলবেন?’
জবাবে অরুন্ধতী বলেন, ‘২০ বছর আগে হয়তো এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগে হয়তো অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা, চাকরির নিশ্চয়তা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ভারতে শীর্ষ ৯ জন ধনীর কাছে যে পরিমাণ অর্থ রয়েছে তা দেশটির ৫ কোটি জনগণের অর্থের সমান। মুকেশ আম্বানি এখনও তার ব্যবসা বাড়িয়ে চলেছেন। তেল থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসা আছে তার। পুরো ভারতই যেন আম্বানি গ্রুপের। এমন অবস্থায় যদি আপনি কোনও সাধারণ মানুষকে বলেন যে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাতিরে’ কাজ করুন। তখন প্রশ্ন উঠতে পারে কার উন্নয়ন?
তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য নয়, বরং মুক্তবাজারে নিজেদের স্থাপন করেই শিল্পীরা নিরাপত্তা পেয়েছেন। এবং এটা যেকোনও সেন্সরশিপের চেয়ে ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে অরুন্ধতী বলেন, ২০১৫-১৬ সালে ভারতের অনেক লেখক-সাহিত্যিক তাদের জাতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে এখন সাহিত্যিক ও শিল্পীদের এমনভাবে বোঝানো হয়েছে যে মুক্তবাজারেই তাদের স্থান। বেস্টসেলার কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকা জরুরি। তাদের শিল্প এখন পণ্য হয়ে গেছে। যদি আপনার চারপাশে কী হচ্ছে সেই বাস্তবতার প্রতিফলন কোনও শিল্পে না থাকে তবে সেটা আমার কাছে শিল্প না। শহিদুল আলম বলেন, গতবার আমরা যখন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করি তখন মনে হচ্ছিল খুবই কঠিন হবে কাজটি। তখন আপনি মস্কো ছিলেন।

ঠিক কেন সেখানে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে অরুন্ধতী বলেন, ‘‘আমি সেখানে স্নোডেনের সঙ্গে দেখা করি। আমাকে দেখে তিনি চমকে যান। বলেন আপনি কেন এখানে? আমি প্রশ্ন করি, ‘আপনি কীভাবে মার্কিন মেরিনে যোগ দিলেন?’ তিনি বলেন, ‘আমি আসলে ইতিহাসের অংশ হতে চেয়েছিলাম।’ অরুন্ধতী বলেন, সবাইকে প্রথমেই এই স্বপ্ন দেখানো হয়। তবে স্নোডেন এক জায়গায় দারুণ মন্তব্য করেছেন। আসলেই দারুণ। কয়েক বছর আগে তিনি বাঁশি বাজিয়েছিলেন। সেটার ফল এখনও আছে। আমরা এখন নিশ্চিত করে জানি যে সরকারের কাছে আপনার সব তথ্যই আছে। বায়োমেট্রিকসহ নানা প্রক্রিয়ার কথা বলে আপনার সব ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। যেকোনও কিছুই করতে পারবেন তারা। এটা ভালো হতে পারতো যদি বৈধ রাজনীতি বজায় থাকতো।’’
কেবল ভোটাধিকার প্রয়োগে গণতন্ত্র আসে না বলে উল্লেখ করেছেন লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায়। তিনি মনে করেন, গোটা উপমহাদেশের গণতন্ত্রের চিত্র এক। গণতান্ত্রিক চর্চা ভিন্ন হলেও চিত্রটা কেমন করে যেন মিলে যায়।
কেবল ভোটাধিকার গণতন্ত্র না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোট এলে রাজনীতিবিদরা এসে তাদের উন্নয়নের বয়ান দিয়ে ভোট চাইবেন, এটাই কি গণতন্ত্র। তার মতে, গণতন্ত্র এভাবেই নষ্ট হয়ে যায়।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে এ সম্পর্কিত বই থেকে তিনি পড়ে শোনান। নিজের বই মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেজ নিয়ে অরুন্ধতী বলেন, গড অব স্মল থিংস প্রকাশের পর কখনোই মনে হয়নি আমার আবার একটি বই লিখতে হবে। আমি কাশ্মিরের মতো জায়গায় যেতে পারি এবং সেখানকার রাজনীতি বুঝতে পারি। কিন্তু সেটি নিয়ে আমি লিখতে পারি না। কারণ, সেখানে শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা নিয়ে লিখতে পারি না, আমার আরও অনেক কিছু লেখার আছে, তাদের জীবন, চলার ধরন…। আমি প্রথমেই তাদের ইংরেজি বর্ণমালা নিয়ে লিখি।’’ এ সময় কাশ্মির নিয়ে ৬ মিনিটের একটি ফিল্ম দেখানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার একাত্মতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অরুন্ধতী বলেন, ‘‘আমাদের আসলে আমি বাংলাদেশি তুমি ভারতীয় ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তারা এটাই চায়। আমাদের আলাদা করতে। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ কেমন, ভারতে জাতীয়তাবাদ কেমন সেটা অতিক্রম করে আমাদের এমন একটা অবস্থানে পৌঁছাতে হবে, যেখানে সবাই এক থাকি। নদীর পানিবণ্টন নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিরাজমান পানিবণ্টন প্রক্রিয়াকে তিনি সমর্থন করেন না।’
মুক্তমনা লেখকরা তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নির্মাণে লড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাজারো সমস্যার পর লেখকরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনও জেতেন, কখনও তারা হারেন। আর হারের পর কখনও ঘর ছাড়তে হয়। বিষয়টা নোংরা।

/এমএইচ/ইউআই/ওআর/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা