X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

করোনা ভাইরাসের বাহক মানুষও!

জাকিয়া আহমেদ
২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:৫৯আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২০, ২১:২৫





চীনের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনা ভাইরাস আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। রহস্যময় এই ভাইরাসের কোনও চিকিৎসা নেই। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির বিপরীতে তৈরি হয়নি কোনও ভ্যাকসিন। এ কারণে সাবধানতা অবলম্বন ও সচেতন থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে নজরদারিও জোরালো করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আজ (২২ জানুয়ারি) জরুরি বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যাডভাইজারি গ্রুপ। বৈঠকে বিষয়টি যদি ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ হিসেবে উঠে আসে তাহলে রোগটিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

জানা যায়, সম্প্রতি চীনের উহান শহরের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে নতুন করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেটি জাপান, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীনে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার একই পরিবারের তিন জন আক্রান্তেরও খবর পাওয়া গেছে, যাদের একজন উহানের সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এখান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। তবে দেশটির সরকারি হিসাবে সোমবার পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৩ জন। উহান ছাড়া বেইজিং ও সাংহাইতেও আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভাইরাসটি চীনের ১৩ প্রদেশে ছড়িয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ৪৪০ জন, আর মারা গেছেন ৯ জন। দুই দিনের মাথায় এত বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ভাইরাসটি ‘রেপিডলি স্প্রেড’ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন চিকিৎসা কর্মীও রয়েছেন।

এর আগে করোনা ভাইরাসের পরিবারভুক্ত মার্স ও সার্স ভাইরাস মহামারি আকার নিয়েছিল। একই পরিবারভুক্ত নতুন করোনা ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ভাইরাসের অন্যতম লক্ষণ হলো, জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া ও তীব্র শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকরা বলনে, তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে রোগী মৃত্যুবরণ করতে পারেন।

ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিপরীতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই কোরনা ভাইরাস বাংলাদেশে আসতেও পারে, তবে এর জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা চীন থেকে বা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ফ্লাইট এলে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি যাত্রীদেরও সাবধানে থাকতে হবে, তারা যেন বিমানবন্দর থেকে হেলথ কার্ড নিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, কারও যদি চীন ভ্রমণের ইতিহাস থাকে, তাহলে ১৪ দিনের ভেতরে আইইডিসিআরের হটলাইনে অথবা যেকোনও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

তিনি বাংলাদেশ থেকে চীনে যাওয়া যাত্রীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে শুরু হবে নববর্ষের ছুটি। তখন সেখানে অনেক মানুষের সমাগম হবে। আর তখন এই নতুন ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে ভাইরাসের উৎস কোনও প্রাণী। কারণ, নতুন ভাইরাসটিতে প্রথম আক্রান্ত হয়েছেন চীনের উহান শহরের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে।

এ কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। বিমানবন্দরে কর্মরতদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ডা. এস এম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশে চীনের উহান থেকে সরাসরি ফ্লাইট না থাকলেও বিমানবন্দরে বিশেষ স্ক্রিনিং শুরু করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এছাড়া চায়না, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে আসা কারও যদি জ্বর থাকে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করছেন।

বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতেও ইতোমধ্যে অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি রোগী পাওয়া যায় তাহলে তাদের পরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যেহেতু এর কোনও স্পেসিফিক চিকিৎসা নেই, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে সিম্পটোমেটিক চিকিৎসা চলবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই নতুন ভাইরাসটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এবং প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে যদি তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় তখনই রোগী মারা যায়।

এটা নতুন ধরনের ভাইরাস, এর কোনও ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি এবং চিকিৎসাও নেই। আর চিকিৎসা যেহেতু নেই, তাই এর প্রতিরোধ জরুরি। এজন্য আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যারা আসছেন তাদের বিমানবন্দর থেকেই মনিটরিংয়ের ভেতর রাখতে হবে।

আরও পড়ুন:
ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস, বিশ্বের সব দেশকে সতর্ক করলো ডব্লিউএইচও



/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!