X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সদরঘাটে আশ্রয়কেন্দ্র

শাহেদ শফিক
২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:২১আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ২০:৪৭

 

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য রাজধানীর সদরঘাটে একটি অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৮৪ হাজার বর্গফুট এলাকায় ছয় তলাবিশিষ্ট এই আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় আটশ’ থেকে এক হাজার মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা ও সহযোগিতা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে−এই সেবাকেন্দ্রটি থেকে নারী ও শিশুসহ সবার জন্য জরুরি চিকিৎসাসেবা, অসহায় মানুষের জন্য বৃদ্ধাশ্রম, পথবাসী নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও শিক্ষা কেন্দ্র, কম্পিউটার ল্যাব, মনোসামাজিক কাউন্সিলিং কেন্দ্র, শিশুদের জন্য প্রারম্ভিক বিকাশ কার্যক্রম (ইসিডি) ও দিবাযত্ন কেন্দ্র, শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক শিক্ষা সেশন রয়েছে।

এছাড়া শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য, বিনোদনের ব্যবস্থা এবং পথবাসী নারীদের জন্য আবাসন সুবিধাসহ জীবিকা উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি ভবনসংলগ্ন রয়েছে একটি উন্নতমানের প্রতিবন্ধীবান্ধব সেবাকেন্দ্র; একটি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিতকরণে রয়েছে একটি মাতৃদুগ্ধপান কেন্দ্র। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রয়েছে কমিউনিটিভিত্তিক মনোসামাজিক সহায়তা প্রদানের সুব্যবস্থা।

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সদরঘাটে আশ্রয়কেন্দ্র

সিটি করপোরেশন আরও বলছে−জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দারিদ্র্যের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে অসংখ্য মানুষ শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। শহরেও আছে অগণিত দরিদ্র আর উদ্বাস্তু মানুষ। মহাপ্রান্তিক এসব মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ লোক পথ বা ঝুপড়িবাসী, যারা খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থায় জীবনযাপন করেন। এরমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার লোক বসবাস অনুপযোগী বস্তিতে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি। 

বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে ২০১৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে নগরে জনগণের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৮ কোটি।এখনই উদ্যোগ না নিলে এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ থাকবে উদ্বাস্তু। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শুমারি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ। যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারই বস্তি, ঝুপড়ি অথবা রাস্তায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সদরঘাটে আশ্রয়কেন্দ্র

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষত পথবাসী মানুষের বিপন্নতার কথা চিন্তা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় সাজেদা ফাউন্ডেশন, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়াটার এইডের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে মানিকনগরে একটি পথবাসী সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। যার জন্য ভূমি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই কেন্দ্র হতে প্রতিদিন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকা উন্নয়ন, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সদরঘাটে প্রায় ৮৪ হাজার বর্গফুট এলাকায় ৬ তলাবিশিষ্ট একটি জলবায়ু উদ্বাস্তু সেন্টার নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে।

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সদরঘাটে আশ্রয়কেন্দ্র

 

যেসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে সদরঘাটের আশ্রয়কেন্দ্রে:

ছয় তলাবিশিষ্ট ভবনটির নিচতলায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক, গাইনি, শিশু, মেডিসিন, চর্ম ও দন্ত সেবা প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় তলার বাম পাশে রয়েছে ৭৫ জন বয়স্কর জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং ডান পাশের কক্ষগুলোর মধ্যে একটি প্রশিক্ষণ, একটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি মনোসামাজিক কাউন্সিলিং কেন্দ্র। এর একটি কক্ষে রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়।

ভবনের তৃতীয় তলার বাম পাশে রয়েছে দুই থেকে ছয় বছর বয়সী ৮৫ জন শিশুর জন্য প্রারম্ভিক বিকাশ কার্যক্রম (ইসিডি) ও দিবাযত্ন কেন্দ্র। এছাড়া ৭ থেকে ১০ বছরের শিশুদের শিক্ষাসহ সব শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। ডান পাশে ৮৫ জন স্কুলপড়ুয়া শিশুর জন্য শিক্ষা, শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক শিক্ষা সেশন রয়েছে। আর চতুর্থ ও পঞ্চমতলায় ৪৫২ জনের জন্য আবাসন সুবিধাসহ জীবিকা উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে। ভবনসংলগ্ন একটি উন্নতমানের প্রতিবন্ধীবান্ধব সেবাকেন্দ্র এবং পাবলিক টয়লেট এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিতকরণে রয়েছে একটি মাতৃদুগ্ধপান কেন্দ্র। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রয়েছে কমিউনিটিভিত্তিক মনোসামাজিক সহায়তা প্রদানের সুব্যবস্থা।

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সদরঘাটে আশ্রয়কেন্দ্র

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে কেন্দ্রটি ঘুরে দেখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এসময় তিনি সেখানকার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।

কেন্দ্রটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীভাঙনসহ নানা কারণে গৃহহীন হয়ে মানুষ শহরে আসছেন। তারা সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় দিনাতিপাত করছেন। আমরা চাই এসব অসহায় মানুষকে ফুটপাত থেকে সরিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্রটিতে নিয়ে আসতে। এখানে তাদের নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কেন্দ্রটিতে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহসহ পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। অসহায় মানুষের জন্য রয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। এই প্রকল্পটি শেষ করতে পেরে আমরা অত্যন্ত খুশি।’

পরবর্তী সময়ে যিনি নগরের দায়িত্বে আসবেন, তিনি অসহায় মানুষের স্বার্থে এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাঈদ খোকন।

/এএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা