X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

পর্দা নামলো বইমেলার, অপেক্ষা ১১ মাসের

হাসনাত নাঈম
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৩২আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:২১

 

বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি ও পুরস্কার বিজয়ীরা

বছরটা লিপইয়ারের হলেও একদিন পরে শুরু হওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ এর পর্দা নামলো ২৮ দিনেই। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১১ মাসের অপেক্ষার প্রহর শুরু হলো পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীকে উৎসর্গ করে ২ ফেব্রুয়ারি এই গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ পাঠকদের কাছে বইমেলা হিসেবে পরিচিত এ মেলায় শেষ দিন পর্যন্ত মোট বিক্রি হয়েছে ৮২ কোটি টাকার বই। এবারের বইমেলায় মানসম্পন্ন বই এসেছে ৭৫১টি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেন, ‘আজ আনন্দ ও বেদনার দিন। আনন্দ এই কারণে যে, আমরা সবাই মিলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ সফলভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি বেদনার এই কারণে যে, প্রাণের মেলায় আজ বেজে উঠেছে বিদায়ের রাগিণী। তবে মেলা শেষ হয়ে এলেও প্রাণে রয়ে যায় প্রাণেরই অনিঃশেষ রেশ। তাই আজ আমরা আনন্দকেই প্রধান করে তুলতে চাইছি।’

বইমেলায় শেষ দিনে পাঠকের ভিড়

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে তাঁকে উৎসর্গ করে আয়োজন করা এই গ্রন্থমেলা ছিল তাঁকে উৎসর্গিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। কারণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলা বিশ্বের দীর্ঘসময়ব্যাপ্ত জ্ঞানের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।’

স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একেডেমীর মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, দেখতে দেখতে এই মেলা একটি মাস পেরিয়ে এলো। ২০১৯-এর গ্রন্থমেলা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। সব আয়োজনই কিছু ত্রুটি থাকে, অমর একুশে গ্রন্থমেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের এবারের সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে আগামীর আয়োজন আরও সার্থক ও সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকবো এবং সে প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই আপনাদের সবাইকে সঙ্গে পাবো।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে, তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব একটুও কমেনি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর প্রমুখ।

বইমেলায় বিক্রি, মানসম্পন্ন বই নতুন বইয়ের সংখ্যা

বই বিক্রিতে আবারও নতুন রেকর্ড গড়লো অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০। এবার মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। যা গতবারের তুলনায় দুই কোটি টাকা বেশি। এদিকে আজ পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর নিজস্ব বিক্রি ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের মেলায় বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৬ সালে ৪০ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৪ সালে ছিলো সাড়ে ১০ কোটি এবং ২০১৩ সালে ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

শেষ দিনে মেলায় বই এসেছে ১৮৪টি। এ নিয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ হাজার ৯১৯টি। এর মধ্যে গল্প ৬৪৪টি, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, কবিতা ১ হাজার ৫৮৫টি, গবেষণা ১১২টি, ছড়া ১১১টি, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনী ১৪৯টি, রচনাবলী ৮টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১৫২টি, নাটক ৩৪টি, বিজ্ঞান ৮৩টি, ভ্রমণ ৮২টি, ইতিহাস ৯৬টি, রাজনীতি ১৩টি, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ৩৬টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১৪৪টি, রম্য ও ধাঁধা ৪০টি, ধর্মীয় ২০টি, অনুবাদ ৫৬টি, অভিধান ১৪টি, সায়েন্স ফিকশন ও গোয়েন্দা বিষয়ক ৬৭টি এবং অন্যান্য ধরনের ২৬৮ টি।

এবারের মেলায় ৭৫১টি মানসম্পন্ন বই এসেছে বলেও জানানো হয়েছে আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে।

বাংলা একাডেমির গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান

সমাপনী মঞ্চে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য 'কথাপ্রকাশ'কে 'চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২০' প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত 'প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য' গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে, মঈনুস সুলতান রচিত 'জোহানেসবার্গের জার্নাল' গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত 'স্মৃতির পথরেখা' গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্সকে 'মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০' প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড'কে 'রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২০' এবং ২০২০ সালের গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘অভিযান’ (এক ইউনিট), 'কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড' (২-৪ ইউনিট), 'বাংলা প্রকাশ' (প্যাভেলিয়ন)-কে 'শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০' প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল প্রকাশককে ৫০ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই সাহিত্যিকের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকার চেক, সনদ, ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়।

রাত ৮ টায় স্বাধীনতাস্তম্ভ সংলগ্ন মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী এবং হাসান আরিফ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে ছিল লেজার শো।

 

/এইচএন/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে এই ৪ খাবার
অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে এই ৪ খাবার
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতা সহজ হবে না: শান্ত
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতা সহজ হবে না: শান্ত
আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
রাঙামাটিতে বজ্রাঘাতে ৩ জনের মৃত্যু
রাঙামাটিতে বজ্রাঘাতে ৩ জনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল