করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে। আজ বুধবার (২৫ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই তথ্য জানিয়েছেন। এদিন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ভাষণ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ৮টি পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে। দেশের অন্য ৭টি বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, গতকাল (২৪ মার্চ) পর্যন্ত ১৩ হাজার পরীক্ষা কিট মজুদ ছিল। আরও ৩০ হাজার কিট শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে।
শেখ হাসিনা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ছয়টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া আরও তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারাদেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা আছে। সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত। এতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সরকার প্রধান মনে করেন, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে। তাদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুদ আছে বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি তার আহ্বান, ‘বিভ্রান্ত হবেন না। আপনাদের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। তাদের মধ্যে ৪ জন বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন। তারা আগে থেকেই বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন। পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭ হাজার ৩৮ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮৮৫ জন ছাড়পত্র পেয়েছে। এছাড়া ২৬৭ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ২৭৭ জন ছাড়পত্র পান।
ভাষণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– দেশের সব স্কুল কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রাখা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (এইচএসসি) স্থগিত করা, সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা; যেকোনও রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি, ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরবারি অফিস বন্ধ ঘোষণা, ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা প্রভৃতি।
গতকাল থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি উল্লেখ করেন– কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে।