শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)।সম্প্রতি মুঠোফোন আলাপে চলমান সংকট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়-দায়িত্ব প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন এপিইউবি’র সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
তিনি বলেন,বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের ফলে থমকে গেছে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই প্রেক্ষিতে বেশি বিপাকে পড়ে গেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাত। অনলাইনে তাদের যেটুকু শিক্ষাক্রম চালু ছিল সেটা স্থগিত হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)গত ৬ এপ্রিলের একটি ঘোষণা মোতাবেক। এদিকে করোনা সংকটে বহু শিক্ষার্থীর টিউশন ফি দেবার সামর্থ্য কমে গেছে। ধ্বস নেমেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ে। তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের ঝুঁকি। এইসব ঝুঁকি থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উত্তরণ ও শিক্ষাব্যাবস্থা চলমান রাখতে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই বলে দাবি করেন এপিইউবির সভাপতি।
তিনি এও উল্লেখ করেন, বাস্তবতার নিরিখে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সবার পক্ষে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব নয় প্রযুক্তিগত কারণে। তাই তাদের জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ জরুরি।
তিনি সরকার ও টেলিকম কোম্পানির প্রতি বিশেষ অনুরোধ করেন দেশের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথের সামান্য অংশ উন্মুক্ত করে দিতে। পাশাপাশি শেখ কবির হোসেন জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা শুরু করেছে যে কীভাবে ফিচার্ড ফোন ও টুজি কানেকশন দিয়ে অনলাইন শিক্ষা চালু রাখা যায়। এতে করে সারাদেশের যেসব এলাকায় ইন্টারনেটের ঘাটতি আছে তারা উপকৃত হবে।
এপিইউবির সভাপতি বলেন, ইউজিসির নিয়ম মেনে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ বন্ধ করেছে, তবে প্রচলিত ধারণার বাইরে যেসব পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো নিয়ে ইউজিসি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। এতে করে সেশনজটের ঝুঁকিমুক্ত হতে পারবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে তিনি ওপেনবুক টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক মূল্যায়নসহ নানা পদ্ধতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
মুঠোফোন আলাপে তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে সহজ ও সর্বনিম্ন যোগাযোগের উপায়ের মাধ্যমেই শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখতে হবে।
এই করোনা পরিস্থিতি কতদিন চলবে তার কোনও ঠিক নেই। এতে শিক্ষা কার্যক্রম যদি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে গোটা জাতি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এমন আশঙ্কা করছেন তিনি। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান শেখ কবির হোসেন।
এসময় তিনি সামর্থ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি দেওয়ার আহ্বানও জানান শিক্ষার্থীদের প্রতি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা সামর্থ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধ করলে প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে। তবে কাউকেও কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সংকটকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে এবং হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
শেখ কবির হোসেন আরও উল্লেখ করেন, অল্প গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়তো আর্থিক সামর্থ্য বা স্বচ্ছলতা আছে, তারা হয়তো শিক্ষকদের ও কর্মচারিদের বেতন দিতে পারে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। দেশের এই পরিস্থিতিতে অনান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তুমুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। সেটি মোকাবিলায় সরকারি প্রণোদনা জরুরি বলে মনে করছেন তিনি। এ কারণে ইতোমধ্যে সরকারের কাছে একটি প্রণোদনার আবেদন করেছেন বলেও জানান এপিইউবি সভাপতি।
বৈশ্বিক এই মহামারীর সময় তিনি সবাইকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে উচ্চশিক্ষা বিঘ্নিত যেন না হয় সে বিষয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে ও ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।