X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

টেন্ডার ছাড়াই বেশি দামে ডিএসসিসির মশার ওষুধ ফরমুলেশনের অভিযোগ

শাহেদ শফিক
১৫ মে ২০২০, ২০:২৭আপডেট : ১৬ মে ২০২০, ১১:৪২

সিটি করপোরেশনের কর্মী মশা মারার ওষুধ স্প্রে করছেন (ফাইল ছবি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিরুদ্ধে মশার ওষুধ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। গতবছর ডেঙ্গুর সময় উত্তর সিটি করপোরেশনের বাতিল হওয়া ওষুধ ব্যবহারের সেই দুর্নাম কাটিয়ে না উঠতেই, এ বছর আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে সংস্থাটি। খোদ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে মশার ওষুধ নিয়ে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মশার ওষুধ বিষয়ে একটি ফাইল অনুমোদনের জন্য সংস্থার মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের কাছে পাঠানো হয়। তবে তিনি ফাইলের অনুমোদন দেননি বলে জানা গেছে। বরং মেয়র বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া তারা কীভাবে ওষুধ ফরমুলেশন করেছেন সেটা আমার জানা নেই।’

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, গেলো বছর ডেঙ্গু মশার প্রাদুর্ভাবের পর বিদেশ থেকে সরাসরি মশার ওষুধ আমদানির জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে অনুমতি দেয় সরকার। এজন্য উড়ন্ত মশা নিধন করতে ম্যালাথিউন ৫ শতাংশ আমদানি করে ডিএসসিসি। এই ওষুধের সঙ্গে ৯৫ শতাংশ ডিজেল মিশ্রিত করে নগরীতে ছেটাতে হয়। এজন্য ডিজেল এবং ওষুধের ফরমুলেশন সঠিক হতে হয়।

অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ফরমুলেশনের কাজটি করায় ডিএসসিসি। এরই ধারাবাহিকতায় ওষুধ ও ডিজেলের সঠিক ফরমুলেশন করে দিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টি সাইটিং ওষুধের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে ডিএসসিসি। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এতে সর্বনিন্ম দরদাতা হয় দ্য লিমিট এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি লিটার ওষুধের ফরমুলেশন করতে দর দেয় ১৫৫ টাকা। কিন্তু গতবছর মানহীন কাজের অভিযোগ থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। এর পর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মেসার্স ফরওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি লিটারের জন্য দর দেয় ১৮৫টাকা। আর তৃতীয় অবস্থানে ছিল জাহিন কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি লিটারের দর দেয় ১৯৫ টাকা। কিন্তু প্রথম অবস্থায় কোনও প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দিয়ে ফের টেন্ডার আহ্বান করে ডিএসসিসি।

পরে ওই টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স ফরওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি সর্বনিন্ম দর দেয় ১৫৫ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মেসার্স দ্য লিমিট এগ্রো প্রোডাক্ট দর দিয়েছে ১৬৩ টাকা। তৃতীয় অবস্থান থাকা মেসার্স নোকন লিমিডেট দর দেয় ১৮৩ টাকা। আর মেসার্স মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড চতুর্থ অবস্থান থেকে দর দেয় ১৮৯ টাকা।

এদিকে টেন্ডার কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় প্রথম ধাপে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও মেসার্স মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ডিএসসিসিকে এক লাখ লিটার ওষুধ দেওয়ার কাজ পায়। অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে মৌখিকভাবে এই ওষুধ সরবরাহ করতে বলেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ৬০ হাজার লিটার ওষুধ দিয়েছে।

তবে ডিএসসিসির ভাণ্ডার সূত্রে জানা গেছে, এসব ওষুধ খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। সঠিকভাবে ফরমুলেশন না হওয়ায় বাকি ৪০ হাজার লিটার ওষুধ এখনও সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

ভাণ্ডার সূত্র আরও জানায়, মশার ওষুধের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধ ফরমুলেশনের যেসব শর্ত থাকার কথা তার কিছুই নেই মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। এ কাজে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ব কোনও অভিজ্ঞতাও নেই। কোথায়-কীভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে তারও কোনও তথ্য নেই ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে। অথচ কোনও মালামাল কেনার ক্ষেত্রে যেখানে সংস্থাটি থেকে কারখানা পরিদর্শনের জন্য বিদেশে পর্যন্ত প্রতিনিধি পাঠানো হয়, সেখানে মশার ওষুধ ফরমুলেশনের জন্য পর্যাপ্ত জিনিসপত্র ও উপকরণ আছে কিনা সে বিষয়ে কোনও তথ্য যাচাই করেনি ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।

খামারবাড়িতে পরীক্ষায় ফরমুলেশনের মাত্রায় সমস্যা পাওয়ারবিষিয়টি মেসার্স মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক নাসির উদ্দিনও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘একবার আমার ওষুধ খামারবাড়ির কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটে পাঠানো হলে তাদের ল্যাবের পরীক্ষায় ৫ শতাংশ এর কম আসে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব ল্যাব টেস্ট কখনো সেটা ৫.১; ৫.৪ ও ৪.৯ পর্যন্ত আসে। এমন প্রায় ১৭টি টেস্টের রেজাল্ট আমাদের কাছে আছে। পরে আমাদের কেমিস্ট ও খামার বাড়ির কেমিস্টরা বসে রেজাল্ট ঠিক করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, “আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনেও ফরমুলেশনের কাজ পেয়েছি। সে সুবাদে একদিন দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমাকে খবর দেন। আমি সেখানে গেলে তারা আমাকে বলেন, ‘আমাদের ফরমুলেশনকৃত ওষুধ প্রায় শেষের পথে। আপনারা যেহেতু ঢাকা উত্তরের ওষুধ ফরমুলেশন করছেন, তাই আপৎকালীন কিছু ওষুধ আমাদেরকে ফরমুলেশন করে দেন। আমরা পরে সেগুলো এডজাস্ট করে নেবো।’ এর পর আমরা ওষুধ ফরমুলেশন করে সরবরাহ করেছি। এখন কীভাবে তারা বিল পরিশোধ করবে সেটা তারাই জানেন। নিশ্চয় কোনও একটা পথ বের করে নেবেন।”

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক দ্বিমত পোষণ করেন ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘নগর ভবনে আমার ৬ মাস হয়েছে। এ সম্পর্কে আমার চেয়েও আপনি বেশি জানেন। আমি এ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও কথা বলতে পারবো না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া তারা কীভাবে ওষুধ ফরমুলেশন করেছেন সেটা আমার জানা নেই।’ টেন্ডার ছাড়া কোনও কাজের বিলে অনুমোদন দেবেন না বলে জানান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

 

আরও পড়ুন:
মশক নিধনে ‘অকার্যকর’ ওষুধ এখনও ব্যবহার করছে ডিএনসিসি (ভিডিও)

এক হাত দূর থেকে ওষুধ দিয়েও মারা গেলো না মশা! (ভিডিও)

/টিটি/
সম্পর্কিত
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ‘জুলাই ঐক্য’ জোটের আত্মপ্রকাশ
মোহাম্মদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ২০
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা: বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট
সর্বশেষ খবর
শেখ হেলাল ও শেখ তন্ময়ের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা
শেখ হেলাল ও শেখ তন্ময়ের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা
স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এপ্রিলে ৪৭৭ মামলা নিষ্পত্তি
স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এপ্রিলে ৪৭৭ মামলা নিষ্পত্তি
এডিপি কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা
এডিপি কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা
মূলধন ঘাটতির রেকর্ড, সংকটে ব্যাংক খাত
মূলধন ঘাটতির রেকর্ড, সংকটে ব্যাংক খাত
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ