লকডাউনের প্রথম দিন রাজধানীর ওয়ারী এলাকার ভেতরের প্রতিটি অলিগলিতে সুনসান নীরবতা দেখা গেছে। তবে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ভিড় ও অব্যবস্থাপনা। কারণে-অকারণে নানা অজুহাতে লকডাউন এলাকায় প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে। তবে সিটি করপোরেশন দাবি করেছে, তাদের কোনও অব্যবস্থাপনা নেই। প্রথম দিন সামান্য যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো আগামীতে সংশোধন হয়ে যাবে।
সকালে ওয়ারীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওয়ার সংলগ্ন সুমি’স হট কেকের সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকার জনসাধারণকে লকডাউন মানাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণে অকারণে এলাকাবাসী লকডাউন এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের লকডাউন মানানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যেও অনেকেই নানা অজুহাত দেখিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ করার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা জানিয়েছেন, কেউ কেউ তাদের সঙ্গে উগ্র ও বিশৃঙ্খল আচরণ করেছেন। হেয়ার স্ট্রিটের বাসিন্দা সোহেলি আক্তারা বলেন, আমি অনেক দিন ধরে অসুস্থ। গতকাল ডাক্তারের চিকিৎসার জন্য বের হয়ে রাতে আজিমপুরের বোনের বাসায় ছিলাম। এখন বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে আমাদের দেওয়া হয়নি। স্বেচ্ছাসেবকরা খুবই উগ্র আচরণ করছেন।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে এলাকা পরিদর্শনে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক। এসময় তিনি প্রথমে ওয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ে অবস্থিত কন্ট্রোল রুমে গিয়ে লকডাউন ব্যবস্থাপনার সার্বিক চিত্র দেখেন। পরে এলাকার অধিকাংশ সড়ক ঘুরে ঘুরে দেখেন। কথা বলেন স্থানীয় বাড়ির মালিক ও ওষুধের দোকানি ও ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গেও। এসময় এলাকার প্রতিটি সড়কে নীরবতা দেখা গেছে।
সকাল থেকে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির প্রধান ফটক ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে ওষুধের দোকান এবং ভেতরের সড়ক মোডে ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সুপার শপ কোম্পানির ভ্যান সার্ভিসও দেখা গেছে। এসবের মাধ্যমে এলাকাবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন। তবে সড়কগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী ও সিটি করপোরেশনের লোকজন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনও মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
ওয়ারীর র্যানকিন স্ট্রিটে অবস্থিত ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে করোনার নমুনা সংগ্রহ বুথ। সেখানে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্সও। এছাড়া কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় রয়েছেন দুই জন ডাক্তারও। তারা রোগীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।
এলাকা পরিদর্শন শেষে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘আমাদের কোথাও কোনও গ্যাপ নেই। এলাকায় ই-কমার্স রয়েছে, ভ্যান সার্ভিস রয়েছে, তারা বিভিন্ন খাবার নিয়ে ভেতরে অবস্থান করছে। ওষুধের ফার্মেসিগুলো খোলা রয়েছে। আমাদের দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী তিন শিফটে কাজ করছে। এলাকায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখানে দুই জন ডাক্তার রয়েছেন। তারা করোনায় আক্রান্ত ৪৬ জন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করছেন। তাদের চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছেন।’
ওয়ারীর সুমি’স হট কেকের সামনের প্রবেশপথে গিয়ে দেখা গেছে সাধারণ মানুষ এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন, এই এলাকায় তাদের অনেকেরই ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এজন্য তারা লকডাউন চান না।
ওয়্যার স্ট্রিটের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় আমাদের তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সারা দেশ উন্মুক্ত রেখে শুধু এই এলাকায় লকডাউন পরিচালনা করে সরকার কী বোঝাতে চাইছে তা বুঝতে পারছি না। এই ২১ দিনে আমাদের যে ক্ষতি হবে সেটা কে পুষিয়ে দেবে? আমাদের তো না খেয়ে মরতে হবে।’
স্থানীয় লোকজন লকডাউন অমান্য করার চেষ্টা করছেন এই বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কী ব্যবস্থা রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে এমদাদুল হক বলেন, ‘লকডাউন হবে কী হবে না এটা আমাদের কোনও সিদ্ধান্ত নয়, সরকার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা শুধু সেটা বাস্তবায়ন করছি। স্থানীয় লোকজন যদি মনে করেন লকডাউন করা ঠিক হয়নি এটা আমাদের বিষয় নয়, এটা তাদের বিষয়। সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন, সেটা অমান্য করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’