X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরগরম স্বাস্থ্য অধিদফতর এখন নিশ্চুপ, সবার ভেতর আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ জুলাই ২০২০, ০৯:৫৯আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২০, ০৯:৫৯

স্বাস্থ্য অধিদফতর সব সময়ই সরগরম থাকতো মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ‘স্বাস্থ্য ভবন’ । ঝাঁ চকচকে ভবনের সর্বত্রই নতুনত্বের ছাপ। নিচ তলায় বা দিকে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর বিশাল রুম জুড়ে শুরু হয় সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। কিন্তু বুধবার (২২ জুলাই) দুপুর একটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত অধিদফতরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের সেই সরগরম ভাব নেই, আতঙ্ক আর ভয় সবার ভেতরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুদক, ডিবির যাতায়াত এবং অধিদফতরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এক অস্থির এবং আতঙ্কিত সময় কাটাচ্ছি। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না, না জানি আবার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, তদন্ত শুরু হয়-সে আতঙ্ক চলছে। কে কাকে কী বলবে, কথা বলতেই তো সবাই ভয় পাচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, করোনা পরীক্ষায় অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল রিজেন্ট ও জেকেজি (জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার) এর প্রতারণার খবর প্রকাশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পায়। রিজেন্ট এবং জেকেজির শীর্ষ ব্যক্তিরা বর্তমানে কারাগারে, চলছে মামলা।

তবে অনুমোদনহীন রিজেন্ট হাসপাতাল কিভাবে করোনা পরীক্ষার সরকারি তালিকাতে এলো তা নিয়ে মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর একে অপরকে দোষারোপ করে। অধিদফতর প্রধান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। এরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে শোকজ করে। ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে সে বিষয়ে জবাব চায়। সাবেক স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামের নির্দেশে রিজেন্টের সুপারিশ করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়কে জানান অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসান।

ইতোমধ্যে গত ১৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। তারা রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে অধিদফতরের চুক্তির রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে গেছেন বলে জানান দুদকের অনুসন্ধান দলের প্রধান আবু বক্কর সিদ্দিক। অধিদফতর থেকে বের হয়ে যাবার সময় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘রিজেন্টের সঙ্গে অধিদফতরের চুক্তির রেকর্ডপত্র আরও তিন দিন আগে চাওয়া হয়েছিল। আজ সেগুলো নিতে এসেছিলাম। কিন্তু পুরো ফাইল তৈরি না হওয়ায় আগামীকাল তারা পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’

এরপর গত ২১ জুলাই শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

বুধবার স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন পুরোটা দিনই অধিদফতর জুড়ে আলোচনায় ছিলেন রিজেন্ট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. আমিনুল হাসান। এই কর্মকর্তা অধিদফতরের কাউকে সেভাবে আমলে নিতেন না বলেও জানান কর্মকর্তারা।

এদিকে অধিদফতরের একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, অধিদফতরের ১০ কর্মকর্তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তারা কারা, কীভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে, এরপরের আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে সেসব নিয়েও আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মধ্যে।

পদত্যাগী মহাপরিচালক বুধবার (২২ জুলাই) অফিসে আসেননি। অন্যদিকে বৃহস্পতিবারই (২৩ জুলাই) নিয়োগ পাওয়া মহাপরিচালক এখনও যোগ দেননি।

ভবনের দ্বিতীয় তলাতে হাতের ডানে একে একে মহাপরিচালক, অতিরিক্ত দুই মহাপরিচালকের  নির্ধারিত অফিস কক্ষ।  বুধবার সংবাদকর্মীরা অতিরিক্ত মহাপরিচালক ( প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানার কক্ষের সামনে জড়ো হলেও তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান। পরে তিনি জানান, দুপুর আড়াইটায় করোনা বিষয়ক নিয়মিত অনলাইন বুলেটিন শেষে কথা বলবেন গণমাধ্যকর্মীদের সঙ্গে। বুলেটিন শেষ হবার পর তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

বেশকিছু রদবদল হলো, কাজের জায়গাতে কোনও ঘাটতি রয়েছে কিনা অথবা কোনও সমস্যাতে পরতে হচ্ছে কিনা—জানতে চাইলে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা  বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদফতর অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের যে কাজ সেটা একদিন থেমে যাওয়ার বিষয় নয়। প্রতিদিনের কাজ যেমন চলে সেভাবেই চলছে, কোথাও কোনও বাধা বা বিপত্তি নেই।

তিনি বলেন, আর কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অধিদফতরের নিয়মিত যে কাজ যেমন করোনার নমুনা সংগ্রহ, নমুনা পরীক্ষা, ল্যাবরেটরি চালানো সবই চলছে এবং হাসপাতাল পরিচালকরা সেভাবে হাসপাতালে কাজ করছেন। কাজেই দৈনন্দিন কোনও কাজে অসুবিধা হচ্ছে না, সব কাজই রুটিন মাফিক চলছে।

যদিও এদিন বুধবার বিকেলেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে জেকেজির সঙ্গে চুক্তি সংক্রান্ত কাগজ দেখতে চাইলেও সেটা দেখাতে পারেননি অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। এক কর্মকর্তা বলেন, এসব নিয়ে অধিদফতরের ভেতরে ভীষণভাবে অসন্তোষ ও আতঙ্ক কাজ করছে, যাতে করে এই মহামারির সময়ে কাজে মন দেওয়া যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ে নয়টি কমিটি ও একটি সমন্বয় কমিটির সভাপতি ছিলেন পদত্যাগী মহাপরিচালক। তার অনুপস্থিতিতে গত দুইদিন (২১ ও ২২ জুলাই) এ কমিটিগুলোর নির্ধারিত নিয়মিত সভা হয়নি, যেহেতু তিনি সভাপতিত্ব করতেন। তবে ২৩ জুলাই সভা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান পদত্যাগ করেছেন, মানসিক প্রস্তুতিতেও সময় লাগে একটু। সেটাও দূর হয়ে যাবে, আর করোনার এই সময়ে তো থেমে থাকলে চলবে না, কাজ করতে হবে, কাজ চলবে।

/জেএ/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গণমাধ্যমের ওপর করের বোঝা সহনীয় করার দাবি এফবিসিসিআই’র
গণমাধ্যমের ওপর করের বোঝা সহনীয় করার দাবি এফবিসিসিআই’র
সাতক্ষীরার ৩ উপজেলায় জিতলেন যারা
সাতক্ষীরার ৩ উপজেলায় জিতলেন যারা
ময়মনসিংহেও ৪ গোল করতে চান দিয়াবাতে!
ময়মনসিংহেও ৪ গোল করতে চান দিয়াবাতে!
প্রথমবারই বাজিমাত মন্ত্রীর শ্যালকের, পাত্তা পাননি সাবেক মন্ত্রীর ভাই
প্রথমবারই বাজিমাত মন্ত্রীর শ্যালকের, পাত্তা পাননি সাবেক মন্ত্রীর ভাই
সর্বাধিক পঠিত
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সংসদীয় কমিটির তোপের মুখে টেলিটক
সংসদীয় কমিটির তোপের মুখে টেলিটক
সহিংসতার দুটি মামলা থেকে খালাস পেলেন ইমরান খান
সহিংসতার দুটি মামলা থেকে খালাস পেলেন ইমরান খান
ভোটারের অপেক্ষায় কুমিল্লার একটি কেন্দ্র
ভোটারের অপেক্ষায় কুমিল্লার একটি কেন্দ্র