X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা-দর্শনা জংশন প্রকল্প: চিঠি চালাচালিতেই শেষ অর্ধেক সময়

শাহেদ শফিক
১৫ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৪৮আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২০, ২০:০৫

বাংলাদেশ রেলওয়ে

বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কানেকটিভিটি তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিতব্য ছয় বছর মেয়াদি প্রকল্পটির তিন বছর শেষ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে চিঠি চালাচালির মধ্যে। এখনও প্রকল্পের কাজই শুরু করতে পারেনি রেলওয়ে। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, শুরুতেই কম গুরুত্ব পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলে। ফলে নির্ধারিত সময়ে এর কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই প্রকল্পের মেয়াদ ও সময় দুটোই বাড়াতে হবে।

যে কারণে প্রকল্প গ্রহণ

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, খুলনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৪১৩ কিলোমিটার। এরমধ্যে মাত্র ১১০ কিলোমিটার ডাবল লাইন এবং বাকি ৩০৩ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন। এই ৩০৩ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে খুলনা থেকে দর্শনা ১২৬ কিলোমিটার এবং ঈশ্বরদী থেকে টঙ্গী ১৭৭ কিলোমিটার।

বর্তমানে ঢাকা-খুলনা করিডোরের খুলনা-দর্শনা সেকশনে সিঙ্গেল বিজি লাইন সেকশন রয়েছে। এই সেকশনটি খুলনা-ঢাকা, খুলনা-চিলাহাটি এবং খুলনা-রাজশাহী রুটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এ রেল রুটগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুলনা-দর্শনা সেকশনটি সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় পণ্য ও যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় এই সেকশনটির অপারেশন ক্যাপাসিটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। এজন্য ১২৬ কিলোমিটার বিজি রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করে ওই সেকশনটি ডাবল লাইনে উন্নীত করতে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

রেলওয়ের সক্ষমতা বাড়াতে ভারতের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের অধীনে ঢাকা-খুলনা এবং খুলনা-চিলাহাটি রুটে লাইনটি হবে। স্বল্প  সময়ে অধিক যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। 

প্রকল্প ব্যয়

তিন হাজার ৫০৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরমধ্যে প্রকল্প ব্যয়ের দুই হাজার ৬৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দেবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ অবশিষ্ট ৮১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আসবে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম

খুলনা থেকে দর্শনা জংশন পর্যন্ত আনুষঙ্গিক কাজসহ মেইনলাইন ১২৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ মেইন লাইন এবং ১৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার ব্রডগেজ লুপলাইন ট্র্যাক; ১৬টি স্টেশন সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ; ৩৭টি (পাঁচটি নতুন ও ১২টি পুনঃনির্মাণ) প্ল্যাটফর্ম; ২০টি (১৭টি নতুন ও তিনটি পুনঃনির্মাণ) প্ল্যাটফর্ম শেড; ১৪৭টি (চারটি গার্ডার ও ১৪৩টি আরসিসি) বক্স কালভার্ট; ১৮টি স্টেশনে সিবিআই সিগন্যালিং সিস্টেম প্রবর্তন ও ১৭টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের মূল লক্ষ্য

রেলওয়ে জানিয়েছে, রেল লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা উন্নত করা, স্বল্প  সময়ে অধিক যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন পরিচালনা, পাওয়ারপ্ল্যান্টের জন্য জ্বালানি তেল পরিবহন, দ্রুত ও নিরাপদ রেলসেবা নিশ্চিত করা এবং রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়ানোই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। ছয় বছর মেয়াদি প্রকল্পটির এরই মধ্যে প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত অগ্রগতি প্রায় শূন্য।

যে কারণে ধীরগতি

গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছরের ১০ মার্চ প্রথমবার পরামর্শক নিয়োগে আগ্রহের প্রকাশের জন্য অনুরোধ (ইওআই) টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ করা হয়, যা পরবর্তী ২৬ জুলাই উন্মুক্ত করা হয়। মূল্যায়নের পর একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান শর্ট লিস্টের জন্য যোগ্য হওয়ায় পরবর্তী বছরের ১৯ আগস্ট বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সম্মতিতে দ্বিতীয়বার ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর  ইওআই নোটিশ প্রকাশ করা হয়, যা ওই বছরের ১৩ নভেম্বর উন্মুক্ত করা হয়। মূল্যায়নের পর তিনটি প্রতিষ্ঠানকে শর্ট লিস্টিং করে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সম্মতির জন্য ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পাঠানো হয়। কিন্তু ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক তাতে সম্মতি না দিয়ে পুনরায় ইওআই নোটিশ জারির অনুরোধ করে।

এর পর ২০১৯ সালের ২৩ মে খসড়া ইওআই নোটিশ ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সম্মতির জন্য  পাঠানো হয়। বিভিন্ন দফায় আলোচনা ও পত্রযোগাযোগের পর চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক ইওআই নোটিশের সম্মতি দেয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ইওআই নোটিশ প্রকাশিত হয়, যা গত ৮ মার্চ উন্মুক্ত করা হয়। মূল্যায়নের পর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে শর্ট লিস্ট করে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হলে ৩১ আগস্ট সম্মতি পাওয়া যায়।

গত ৮ সেপ্টেম্বর শর্টলিস্টে অন্তর্ভুক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) ডকুমেন্ট পাঠানো হয়, যা ৪ নভেম্বর উন্মুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের শুরু থেকে এক বছর ৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মতি গ্রহণে কম সময় লাগলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজতর হবে বলেও সভায় মতামত দেওয়া হয়েছে।

গুরুত্ব নেই সরকারে

প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভার এক কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘নিম্ন’ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রকল্পের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে প্রকল্পটি ন্যূনতম ‘মধ্যম’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরের প্রথম কিস্তিতে ৩২৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা অর্থছাড় চাহিদার বিপরীতে প্রকল্পের আউটসোর্সিং খাতে মাত্র তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত এডিপির বিপরীতে অর্থ অবমুক্ত না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা বাড়ার পাশাপাশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

যা বলছে কর্তৃপক্ষ

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) ও প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের শর্টলিস্ট প্রস্তুত করেছি। এখন ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হবে। তারপর তারা ৭-৮ মাস ধরে ডিজাইন প্রস্তুত করবে। এরপর ঠিকাদার নিয়োগ হবে। মোটকথা ২০২২ সালের শুরু নাগাদ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ হতে পারে। এরপর আমাদের হাতে মাত্র এক বছর সময় থাকে। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি শুরু থেকেই ধীরগতিতে হয়েছে। এখন সময় বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।’

রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গত বছরের ৪ জুলাই খুলনা রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে যান। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সব লাইনই ডাবল। আমাদের ট্রেনের যে স্বাভাবিক পরিবহন তা ডাবল রেললাইন নির্মাণ না করা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ডাবল রেললাইন নির্মাণে মন্ত্রণালয় আন্তরিক। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকার সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে।’

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
দিনাজপুরে ইউপি নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চাচা নিহত
দিনাজপুরে ইউপি নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চাচা নিহত
বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাবেয়া
বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাবেয়া
বন্ধ হচ্ছে না নকল ওষুধ উৎপাদন-বিপণন, বাড়ছে উদ্বেগ
বন্ধ হচ্ছে না নকল ওষুধ উৎপাদন-বিপণন, বাড়ছে উদ্বেগ
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ