X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাষ্ট্রের ভাবনায় মুক্ত গণমাধ্যম থাকতে হবে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ অক্টোবর ২০২০, ২৩:৪৮আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২০, ২৩:৫০

‘রাষ্ট্রের ভাবনায় মুক্ত গণমাধ্যম থাকতে হবে’

‘আমরা গণমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ বলছি ঠিকই, কিন্তু আমরা সেভাবে মেনে নিচ্ছি না। সেটা ট্রাম্প বলেন, আর আমাদের দেশই বলেন— রাষ্ট্রের ভাবনায় মুক্ত গণমাধ্যম থাকতে হবে। সেটা আসলে বিশ্বব্যাপী কোথাও আছে কিনা, আমার জানা নেই,’ মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) রাতে পেন বাংলাদেশের আয়োজনে ‘করোনাকালে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের পেশাগত নিশ্চয়তা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি।

তিনি বলেন, ‘যদি রাষ্ট্রের ভাবনায় মুক্ত গণমাধ্যম থাকে, তাহলে যেসব মালিককে আমরা দায়ী করছি, তারাও কিন্তু পার পাওয়ার কথা না। আমরা রাষ্ট্রের ভাবনায় মুক্ত গণমাধ্যমকে রাখতে পারিনি, যে কারণে যেসব মালিককে আমরা দায়ী করছি, তারাও কিন্তু সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। সেই সুযোগ বন্ধ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই সুযোগ পাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে— গণমাধ্যমকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না। আমাদের সংগঠনগুলো বহুভাবে বিভক্ত, যার কারণে আমরা কোনও কিছুই সরকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি না। এতে শাসকশ্রেণি আমাদের বিভক্তির সুযোগ নিচ্ছেন।’    

আলোচনার শুরুতে  পেন বাংলাদেশের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী অনেক রাষ্ট্র এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাবে একটা মানবিক সমাজ গড়ার সংকল্প তারা হাতে নিতে পারছে না। আমি মনে করি, চিন্তার স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, লেখকদের ও সাংবাদিকদের যে স্বাধীনতা থাকার কথা এবং তাদের যে অবস্থান থাকার প্রয়োজন, সেটি না থাকলে যে সমাজ তৈরি হয়, সেটি কখনও একটি আদর্শ রাষ্ট্রের অনুকূল হতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য মোটেই না। আমরা যেহেতু নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করি,এই রাষ্ট্রের জন্য, সাংবাদিকদের জন্য, লেখকদের জন্য, বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ’   

গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘কোভিড -১৯ এমন এক সময় বাংলাদেশে আঘাত হানে, যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থা এমনিতেই অনেক সঙ্গীন ছিল। ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিচালিত হয় একটি বৈরি পরিবেশে। সমালোচনা সইতে না পারার সংস্কৃতি ছাড়াও বাংলাদেশের গণমাধ্যম সনাতন পদ্ধতিতে কাজ করে— একধরনের আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে। করোনা আসার আগে থেকেই মিডিয়ার রাজস্ব আয় কমছিল, সেটি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে করোনার অজুহাতে। ডিজিটাল দুনিয়ায় সামাজিক মাধ্যমের যে আগ্রাসী অবস্থান এবং হাতে হাতে স্মার্ট ফোনের যে ব্যাপক বিস্তার, সেটি গণমাধ্যমের ব্যবসাকে অনেক সংকুচিত করছিল। করোনা এসে এতে আরও গতি যুগিয়েছে। এর বাইরে বেড়েছে কাজের চাপ, তৈরি হয়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাকরি যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, এগুলো আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সংকটের জায়গা হলো আমরা শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত গণমাধ্যম যে পরিমাণ প্রসার লাভ করেছে, সেখানে প্রাতিষ্ঠানিকতা ছিল খুবই কম। আমাদের ভেতরে সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল অনেক বেশি। বড় পুঁজির প্রকাশ ঘটেছে, কিন্তু বড় চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটেনি।  ফলে আমরা মনে করি, আমাদের প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে হলে কর্মী ছাঁটাই করতে হবে। খরচ কমানো দিয়ে কখনও বড় কিছু অর্জন করা যায় না। এটা আমাদের মালিক শ্রেণি বুঝে উঠতে পারছে না। আরেকটা বড় দুর্বলতার জায়গা হলো— যেহেতু আমরা রাজনৈতিক জায়গায় বিভাজিত, ফলে আমাদের নিজস্ব দাবি দাওয়া প্রতিষ্ঠা করার জায়গা তৈরি হয়নি।’                   

দৈনিক ইত্তেফাকের সহযোগী সম্পাদক মহসীন হাবিব বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই যেমন চাকরি হারাচ্ছেন, এমন কিন্তু অন্যান্য বিজনেস সেক্টরেও হচ্ছে। এটা যে শুধু সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়।’ সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় প্রেস ক্লাবের মতো জায়গায় অনেকগুলো দল, অনেকগুলো উপদল অনেক গুলো পকেট। একজন মালিকের বিপক্ষে যখন একটি পক্ষ সোচ্চার হয়ে ওঠে, তখন আরেক পক্ষ মালিকের সমর্থনে চলে যায়। এটি খুবই দুঃখের বিষয়। এই দুর্বলতাগুলো আমাদের নিশ্চয়ই আছে। যদি সরকার মনে করে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখা দরকার, তাহলে যে অনিয়মগুলো আমরা দেখতে পাই, সেগুলো ঠিক করা দরকার।’   

গ্রিন ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের চেয়ারপানসন ড. অলিউর রহমান বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি ভূমিকা পালন করতে পারছি না। আসলে আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তভাবে কথা বলার স্বাধীনতা, এটা অনেক ঊর্ধ্বে। এখানে অনেকগুলো সংকট রয়েছে বাংলাদেশে। আমি মনে করি, বাংলাদেশে যে মিডিয়া গভর্নেন্সের ধারণাই আমাদের কাছে স্পষ্ট না। মিডিয়া গভর্নেন্সের জায়গায় সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যম, সংগঠন এবং মালিকদের যে সেতুবন্ধন, সেগুলো পরস্পর চেক করার একটি জায়গা হতে পারতো। আমাদের দেশে অনেকগুলো কমিশন আছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় যে আমাদের প্রেস কমিশন নেই। ’    

চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি সোমা ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যম স্বাধীন, কিন্তু সাংবাদিকরা কতখানি স্বাধীন— সেটা একটা ব্যাপার। কারণ, মালিকদের হাতেই সাংবাদিকরা বন্দি থাকেন। মালিকদের অনেক স্বার্থ এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় থাকে, সেই কারণে সাংবাদিকতা হয়তো একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ 

আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম। আলোচনা শেষে পেন বাংলাদেশের মহাসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

 

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ