X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

খাওয়ার সময় কি সালাম দেওয়া যাবে?

বেলায়েত হুসাইন
১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ২১:৩৬

সালাম আরবি শব্দ। এর অর্থ— শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, শুভকামনা ইত্যাদি। সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক ও অভিনন্দনজ্ঞাপক ইসলামি অভিবাদন। একইসঙ্গে সালাম শান্তির প্রতীকও। মুসলমানরা সালামের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়। এক মুসলিম অপর মুসলিমকে সালাম দেওয়া সুন্নত। আর সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সালাম দেওয়া-নেওয়া জান্নাতি মানুষের অভ্যাস। মুসলিমরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’, তোমরা সুখী হও।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৭৩)

ইসলামে সালামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৬)

সালামের প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না করো এবং গৃহবাসীদের সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৭)।

আমরা ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিয়ে থাকি। এর মানে, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এর উত্তরে বলা হয়, ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এর মানে, আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক। অর্থাৎ সালামের মাধ্যমে পরস্পরের শান্তি কামনা করা হয়।

সালাম ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্র ও পরিস্থিতিতে তা এড়িয়ে যাওয়া ভালো এবং ওইসব মুহূর্তে তার জবাব দেওয়াও জরুরি নয়। যেমন- নামাজরত ব্যক্তি, কোরআনে কারিম তিলাওয়াতকারী, আজানরত মুয়াজ্জিন, ইকামত দানকারী যখন ইকামত দেন, খুতবাদানকারী এবং শ্রবণকারী, জিকিরকারী, হাদিস পাঠদানকারী, ফিকহ নিয়ে আলোচনাকারী, বিচারকাজে ব্যস্ত বিচারক, পাঠদানে ব্যস্ত শিক্ষক, বিবস্ত্র লোক ও প্রাকৃতিক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম না দেওয়া উত্তম।

আর খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া হচ্ছে— খাবার গ্রহণকারী ব্যক্তির মুখের মধ্যে যদি খাবার না থাকে, তাহলে এ পরিস্থিতিতে সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর দেওয়া উভয়টিই জায়েজ। তবে মুখে খাবার থাকলে সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর দেওয়া উভয়টিই থেকে বিরত থাকা উচিৎ। এই পরিস্থিতিতে যদি কেউ সালাম দেয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। (দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া। প্রশ্নোত্তর নাম্বার : ২০৬৬৩)

এ প্রসঙ্গে করাচির জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘খাওয়ার সময় সালাম না দেওয়া উচিৎ। এটি সুন্নত নয়। এরপরও যদি কেউ সালাম দিয়ে দেয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে কেউ যদি এই পরিস্থিতিতেও সালামের উত্তর দেয় কিংবা নিজেই সালাম দেয়, তাহলেও কোনও সমস্যা নেই।’ (প্রশ্নোত্তর নাম্বার : ১৪৪০০৪২০০৫২৪)

ইসলামে যেভাবে সালাম এলো?

পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.)-এর সময় থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে। সেখানে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করে বলেন, যাও ফেরেশতাদের সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয়, মন দিয়ে শোনো। এটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালাম। সে অনুযায়ী হজরত আদম (আ.) গিয়ে ফেরেশতাদের বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। ফেরেশতারা উত্তরে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। (মিশকাত: ৪৬২৮)।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা

/এসটিএস/এমএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ বিএনপি নেতা গ্রেফতার
কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ বিএনপি নেতা গ্রেফতার
জোতার মৃত্যুতে ক্লাব বিশ্বকাপে শোকে মুহ্যমান আল হিলাল
জোতার মৃত্যুতে ক্লাব বিশ্বকাপে শোকে মুহ্যমান আল হিলাল
পুকুরের পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
পুকুরের পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা