X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান: বদলে দেবে আপনার জীবন

মুফতি আবু মুআজ
২২ মার্চ ২০২৪, ১১:২৮আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৪, ১১:২৮

পবিত্র রমজান মাস হলো সহানুভূতিশীলতার মাস। অভাবি ব্যক্তির না খাওয়ার যন্ত্রণা উপলব্ধি করার মাস। অন্যকে খাওয়ানোর মাস। এই মাসে সহানুভূতি দেখানোর ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, রমজান মাস হলো সহমর্মিতা ও সহানুভূতিশীলতার মাস। [সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস : ১৮৮৭;  শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৩৩৬]

কারণ, রোজা রেখে আপনাকে অনুভব করতে হবে আজ আপনি না খেয়ে আছেন। আপনার অসহায় ভাই যখন খাবার না পান তখন তিনিও এমন কষ্ট পান। সুতরাং ভাইয়ের বিপদে আপনাকে পাশে দাঁড়াতে হবে। বিপদের সময় তাকে ছেড়ে যাওয়া যাবে না। মানুষের মাঝে এই অনুভূতি সৃষ্টি করা রোজার অন্যতম লক্ষ্য।

দানশীলতার মাস

পবিত্র রমাযান মাসে দান সদকার সওয়াবও অন্যান্য সময় থেকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। হাদিসে নববিতে এসেছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানের সাগর এমনিতেই সারা বছর উত্তাল থাকত; কিন্তু রমজানুল মোবারকে তাঁর দানশীলতা এমন হতো, যেমন প্রচণ্ড বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়া। যে ব্যক্তি তাঁর কাছে আসত তাকে অনেক বেশি দিতেন। এজন্য আমাদেরও এ মাসে বেশি বেশি দান সদকা করা উচিত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন :

মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ছিলেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অবশ্য রমজান মাসে জিবরাইল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তাঁর দানশীলতা (অন্য সময় হতে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত। জিবরাইল রমজানের প্রতি রাতে আসতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কোরআন শোনাতেন। সুতরাং নবীজি তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হয়ে যেতেন। [সহিহ বুখারি, হাদিস : ০৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬১৬]

ইফতার বয়ে আনে কল্যাণ

দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা মুস্তাহাব। এতে দুনিয়াবি কল্যাণও লাভ হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:

যতদিন পর্যন্ত মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে ততদিন পর্যন্ত তারা কল্যাণের ওপর থাকবে। [সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৯৮]

মাগরিবের নামাজ পড়ার আগেই ইফতার করে নিতে হবে, যেন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করার সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দ্বারা। আর তাও না পেলে এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। [আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৬]

খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব

খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

যার কাছে খেজুর আছে, সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা পানি হলো পবিত্র। [তিরমিজি, হাদিস : ৬৯৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭৫৮৬]

ইফতারের সময় দুআ

ইফতারের সময় দুআ কবুল হয়। তাই এসময় বেশি বেশি দুআ-ইস্তিগফার করতে হবে। বিশেষ করে এই দুআ পড়বে :

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকা বিরহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরা লি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার কাছে সবকিছু পরিবেষ্টনকারী রহমতের ওসিলা দিয়ে প্রার্থনা করছি, যে তুমি আমাকে মাফ করে দাও। [ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫৩]

ইফতার করার সময় এই দুআ পড়বে :

আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতরতু।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই রোজা রেখেছিলাম এবং তোমার রিজিক দ্বারাই ইফতার করলাম। [আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮]

ইফতারের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ পড়তেন :

যাহাবাযমাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়াসাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।

অর্থ : পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সতেজ হলো। আল্লাহ তাআলা চান তো রোজার সওয়াব লিপিবদ্ধ হলো। [আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ১৫৭৬]

বদলে যাবে আপনার জীবন

দান করলে কোনও লোকসান নেই। এই মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর দানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো, ইফতার করা এবং অন্যকে ইফতার করানো। হজরত সালমান ফার্সি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

রমজান মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। [সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস : ১৮৮৭;  শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৩৩৬]

ইফতার করুন, ইফতার করান : হাদিসে নববিতে দুভাবে খাবার খাওয়ানোর নির্দেশ এসেছে :

১. দরিদ্র ব্যক্তিকে খাওয়ানো এবং

২. রোজাদারকে ইফতার খাওয়ানো।

হজরত যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

যদি কেউ কোনও রোজাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে; তবে এতে রোজাদারের সাওয়াব একটুও কমানো হবে না। [তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৪৬; সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস : ১৮৮৭;  শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৩৩৬]

যে ইফতার করাবে তাকে ওই রোজাদারের সমান সওয়াব দেওয়া হবে। অবশ্য রোজাদারের সওয়াব থেকে সামান্য পরিমাণও কমানো হবে না। আবার এই সওয়াব কেবল পেট ভরে খাওয়ানোর বিনিময়েই নয়; বরং একটি খেজুর খাওয়ানো, এক ঢোক পানি এমনকি সাদা পানি পান করানোর দ্বারাও এই সওয়াব পাওয়া যাবে।

হাদিসে নববি থেকে আমরা ইফতার করানোর অনেক সওয়াবের কথা জানতে পারলাম। এ ছাড়াও হাদিসে ইফতারের সময় গুনাহ মাফ হওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির কথা এসেছে। এই ইফতার করানোও গুনাহ মাফ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রোজাদারকে ইফতার করিয়ে সৌভাগ্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: ভাইস প্রিন্সিপাল, হেরার পথে মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, জয়রা, সদর, মানিকগঞ্জ।

/এফএস/
সম্পর্কিত
আজ ঈদ
ঈদুল ফিতরে করণীয়
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
প্যারিস অলিম্পিকে ফিলিস্তিনি অ্যাথটলেটদের আমন্ত্রণ জানাবে আইওসি
প্যারিস অলিম্পিকে ফিলিস্তিনি অ্যাথটলেটদের আমন্ত্রণ জানাবে আইওসি
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই