প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য পাঠানো আইনি নোটিশের সূত্র ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা। অন্যদিকে, নোটিশে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনও জবাব না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে খালেদা জিয়ার নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ৩০ দিনের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আইনি নোটিশ পাঠান। রেজিস্ট্রার্ড ডাকযোগে (উইথ এ/ডি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় নোটিশটি পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে ব্রিফিংকালে আপনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু মানহানিকর বিবৃতি দিয়েছেন, যা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া, দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন ও অনেক সামাজিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক বিবৃতি দিয়েছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।’ নোটিশের বিষয়টি বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলন করে জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘৩০ দিনের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নোটিশে।’
এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তিনি দিতেই পারেন। কোনও ব্যক্তি যদি দুর্নীতি করেন, সে দুর্নীতির খবর তার কাছে থাকলে তিনি তা (প্রধানমন্ত্রী) বলতেই পারেন। তিনি সবার দুর্নীতির কথাই প্রকাশ্যে বলেন। কারণ, বর্তমানে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখে চলেছেন। এমনকী তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনকেও স্বাধীন রেখেছেন, এটা শুধু তার ক্ষেত্রেই সম্ভব। তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া নোটিশ পাঠিয়ে কি ধরনের প্রতীকার পেতে পারেন, তা আমি বুঝি না। তবে আমি মনে করি, বিএনপি রাজনীতির একটি পার্ট হিসেবে এই ধরনের নোটিশ পাঠিয়েছে।’
বিএনপি আইনী নোটিশ দিতেই পারে উল্লেখ করে আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘এই ধরনের আইনি নোটিশের বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায়, এটা রাজনৈতিকভাবে নতুন ইস্যু সৃষ্টির জন্যই বিএনপি পাঠিয়েছে। এটাই দলটির মূল উদ্দেশ্য।’
এদিকে নোটিশদাতা আইনীজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই ওই বক্তব্য দিয়েছেন। এ কারণেই আমরা ওই নোটিশ পাঠিয়েছি।’
নোটিশের জবাব না পেলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে—জানতে চাইলে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে নোটিশ পাঠিয়েছি। তাই তার (খালেদা জিয়া) পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করতে পারি না।’
এদিকে, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দুর্নীতির বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথ্য বের হলে তার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বক্তব্য তো আর প্রধানমন্ত্রীর নিজের সৃষ্টি নয়!’
তবে ওই নোটিশকে সাধুবাদ জানিয়ে আওয়ামীপন্থী এই সিনিয়র আইনজীবী আরও বলেন, ‘তারা নোটিশ দিয়েছেন, ভালো কথা। এর ফলে নোটিশে দেওয়া বক্তব্য ধরেই তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে অভিযোগ খোঁজা হবে। এতে হয়তো তার বিরুদ্ধে অনেক গোপন রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে।’ এই নোটিশের কোনও জবাব দেওয়ার হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নোটিশের জবাব দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব না দিলে বিএনপি চাইলে মানহানির মামলা করতে পারে।’
তবে একই বিষয়ে জানতে চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।