X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু ‘দোয়াতেই’ ডাক পড়ে ওলামা দলের

আদিত্য রিমন
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:১২আপডেট : ০৪ মার্চ ২০১৯, ১৭:১০

বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলনের সঙ্গে  ওলামা দলের নেতাকর্মীরা

বিএনপির গঠনতন্ত্রে অঙ্গ সংগঠন হিসেবে আলাদা মর্যাদা থাকলেও কেবল দোয়া-দরুদের প্রয়োজন হলেই ডাক পড়ে ওলামা দলের। সাংগঠনিকভাবে পৃথক গঠনতন্ত্র এবং কার্যক্রম থাকলেও সেগুলোতে কোনও মনোযোগ নেই বিএনপির এই অঙ্গ সংগঠনটির। ১৩ বছর ধরে হচ্ছে না নতুন কমিটি। পাশাপশি মূল দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদককে নিয়েও ওলামা দলে রয়েছে অসন্তুষ্টি।

ওলামা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সংগঠনটি নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বের কোনও আগ্রহ নেই। কারাবন্দি খালেদা জিয়া বা লন্ডনে থাকা তারেক রহমান, কারও কাছে ওলামা দলের আবেদন নেই। একারণে গত ১৩ বছর ধরে দলের হাইকমান্ডের কাছে ওলামা দলের কমিটি গঠনের দাবি জানানো  হলেও তারা বিষয়টিকে পাত্তা দেননি। ফলে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। তাদেরকে কেবল বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিলাদ- মাহফিল- দোয়া- দরুদ  আর মোনাজাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।    

সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৭৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইসলামী চিন্তাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ওলামা দল গঠন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। নব্বইয়ের দশকে সংগঠনটির প্রথম সম্মেলনে মাওলানা এসএম রুহুল আমিনকে সভাপতি আর মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ১৯৯৭ সালে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারীকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও নজিবুল বাশার জিততে পারেননি। এরপর তিনি বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে গঠন করেন তরিকত ফেডারেশন।

ওলামা দলের সূত্র মতে, ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর হাফেজ আব্দুল মালেককে সভাপতি এবং হাফেজ মাওলানা নেছারুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি এখনও অব্যাহত আছে। তবে বর্তমান কমিটির অনেকেই মারা গেছেন বা বয়োবৃদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। কর্মীরাও অনেকেই সংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন।

২০১২ সালের ৬ আগস্ট কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে নতুন কমিটি গঠনের আবেদন জানান সংগঠনটির ১১৮ জন নেতা। পরবর্তীতে এনিয়ে আরও কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেছারুল হক এবিষয়ে ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেছারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে রাজনীতি করার কোনও পরিবেশ নেই। ঘরোয়া আলোচনা করার জন্যও কোনও  হল পায় না বিএনপি। যে কোনও  সংগঠনের সম্মেলন করার জন্য কোনও মাঠ বা বড় হল রুমের প্রয়োজন হয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষে খালেদা জিয়াকে আমরা একাধিকবার সম্মেলনের কথা বলেছি। কিন্তু দেশের বৈরী পরিবেশের কারণে ধীর গতিতে সম্মেলন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। এখন শুনছি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক জিয়া) নতুন করে সম্মেলন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আশাকরি, এবার সম্মেলন হয়ে যাবে।’

মাওলানা নেছারুল হক আরও  বলেন, ‘আমরা শুধু দোয়া বা মিলাদ মাহফিলেই সীমাবদ্ধ আছি, এ অভিযাগ ঠিক নয়। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও মহিলা দলের পরেই ওলামা দলের উপস্থিতি থাকে।’ 

বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারী ড্যানী বলেন, ‘আমি ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বলে ওলামা দলের কার্যক্রম দেখি, তা কিন্তু নয়। তাদের কার্যক্রম বা সংগঠনের দেখভাল কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে করা হয়। তারপর যেহেতু সংগঠনের জেলা কমিটিগুলো করা যাচ্ছে না, তাই সংগঠনের মূল কমিটিও করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওলামা দলের নতুন কমিটিতে আসতে চান— এমন নেতারা একাধিকবার নতুন কমিটি গঠনের জন্য বিএনপির হাইকমান্ডকে  প্রস্তাবনা দিয়েছেন।’

১৩ বছর ধরে কমিটি না হওয়ার বিষয়ে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সেলিম রেজা বলেন, ‘ এই সরকারের আমলে আমরা ঘরেও থাকতে পারি না। বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে এখনও দলের অনেক নেতা কারাগারে রয়েছেন। বিভিন্ন সময় আমরা সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েও করতে পারি নাই।’

নজরুল ইসলাম খানের ওলামা দলের নেতাকর্মীরা ওলামা দলের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে— ‘বাংলাদেশের  সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম ইসলাম। তাই, ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ দান করে জনগণের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ করতে হবে। মাদ্রাসা ও মসজিদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে মাদ্রাসা ও মসজিদের সার্বিক উন্নয়নে কোনও কর্মসূচি ছিল না সংগঠনটির।

এ প্রসঙ্গে মাওলানা নেছারুল হক বলেন, ‘আমাদের দল তো দীর্ঘদিন ক্ষমতা নেই। ফলে আমরা কিভাবে কর্মসূচি দেবো। কারণ, বর্তমানে মাদ্রাসার কল্যাণ ও মসজিদের সার্বিক উন্নয়নে  আমরা তো  কিছুই দিতে তো পারবো না ।’    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াত করতে ওলামা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ডাক পড়ে। এতে তারাও সন্তুষ্ট। এছাড়া, দলীয় কোনও নেতা মারা গেলে তার জানাজা পড়ানোর দায়িত্ব পড়ে ওলামা দলের ওপর।’ 

সাইনবোর্ড থাকলেও কার্যালয় নেই ওলামা দলের

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওলামা দলের একটি সাইনবোর্ড থাকলেও পুরো ভবনে সংগঠনটির কোনও কার্যালয় বা কক্ষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংগঠনটির কোনও সভা বা জরুরি কোনও কাজ থাকলে বিএনপির প্রেস ব্রিফিং কক্ষে বসেই তা শেষ করতে হয়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ওলামা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সেলিম রেজা বলেন, ‘শুধু ওলামা দলের নয়, বিএনপির অনেক অঙ্গ সংগঠনেরই নিজস্ব কোনও অফিস নেই। দলের কেন্দ্রীয় কা্যালয়ে জায়গার অভাবে আমাদের রুম দিতে পারছে না বিএনপি।’

বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদককে নিয়ে ওলামা দলের ক্ষোভ

বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ওলামা দলে। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, কোনও মাওলানাই হচ্ছেন এই পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি। কিন্তু এপর্যন্ত যাদেরকে এই পদ দেওয়া হয়েছে, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তারা তেমন কিছু জানেন না। বিএনপির সর্বশেষ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন বদরুজ্জামান খসরু।  গত বছরের ১১ জুলাই তিনি মারা গেছেন।  বর্তমানে এ পদটি খালি আছে।  আর সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হলেন আব্দুল বারী ড্যানী। তিনি আগে যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন।

ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ. মো. নেছারুল হক বলেন, ‘কোনও মাওলানাকে এই পদ দেওয়া উচিত। তাহলে ধর্ম  সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকায় তিনি কর্মসূচি দিতে পারবেন।  

নতুন কমিটির গুঞ্জন, নেতৃত্বে আসতে চান যারা

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে সব অঙ্গ সংগঠনকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরইমধ্যে ড্যাব ও  মৎস্যজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই ওলামা দলের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা রয়েছে। ফলে ওলামা দলের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আগ্রহী নেতারা। আগামী কমিটিতে ফের সভাপতি হতে চান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ. মো. নেছারুল হকসহ আরও কয়েকজন। আর সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে আগ্রহী বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সেলিম রেজাসহ কয়েকজন নেতা।

মো. নেছারুল হক বলেন, ‘দল চাইলে আগামী কমিটিতে সভাপতি হতে চাই।’ বর্তমান কমিটির সভাপতি অনেকদিন থেকে অসুস্থ বলেও জানান তিনি।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
লক্ষ্মীপুরের পাঁচ ইউপির তিনটিতে নতুন মুখ, দুটিতে পুরোনোতে আস্থা
লক্ষ্মীপুরের পাঁচ ইউপির তিনটিতে নতুন মুখ, দুটিতে পুরোনোতে আস্থা
স্কুল-মাদ্রাসা ২ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ
স্কুল-মাদ্রাসা ২ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ