X
সোমবার, ২৭ মে ২০২৪
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জনইস্যুতে কঠোর কর্মসূচি কি দেবে বিএনপি?

আদিত্য রিমন
০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:২৯আপডেট : ০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:৪১

বিএনপি

জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে দাবি আদায়ে বিরোধী দল বিএনপির তেমন কোনও কঠোর কর্মসূচি বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে না। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবিবার (৭ জুলাই) বামদলগুলো আধাবেলা হরতালের মতো কর্মসূচি দিলেও গত ১ জুলাই বিএনপি জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেই তাদের কর্মসূচি শেষ করেছে। স্বভাবতই জনমনে কৌতুহল জেগেছে গ্যাসের দাম বাড়াসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্যদলগুলোর পাশাপাশি বিএনপির ভূমিকা সামনের দিনগুলোতে কেমন হবে? দাবি আদায়ে বিএনপিও কি ভবিষ্যতে হরতাল বা অন্য কোনও কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে? এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কয়েকজন কঠোর কর্মসূচির আভাস দিলেও দলটির হাই কমান্ডের ভাষ্য, এখনই কঠোর কোনও কর্মসূচির কথা ভাবছেন না তারা। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথা জানিয়েছেন।     

বিএনপির প্রথম সারির একাধিক নেতা দাবি করছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা, গ্যাসের দাম বাড়ানো, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণ মানুষ রুষ্ট। এছাড়া দ্রব্যমূলের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষের কাছে কর্মসূচি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বাম গণতান্ত্রিক জোটের রবিবারের হরতালকে সামনে রাখছেন নেতারা। যদিও নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বলছেন, বামদের হরতাল আর বিএনপির কর্মসূচি এক নয়। তারা মশাল মিছিল করেছে, বিএনপি মশাল বানালেই সরকার গ্রেফতার শুরু করবে। তাদের আশঙ্কা,পুরো পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে টানতে একাধিক পক্ষ স্যাবোটাজ করবে।

তবে দলটির নীতিনির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২০ জুলাই চট্টগ্রামে ও ২৫ জুলাই খুলনায় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রের দাবি,জাতীয় নির্বাচনের পরদিন (৩১ ডিসেম্বর) ও এর পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের যত বৈঠক হয়েছে, সেগুলোতে কোনও সদস্যই কর্মসূচির পক্ষে কথা বলেননি। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান নিজেও কর্মসূচি দিয়ে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। সে ক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকেও অনীহা ছিল। নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বিবেচনায় পার্টি এখন আন্দোলনের পথে যাচ্ছে। আর আন্দোলন মানে তো বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ। খালেদা জিয়ার মুক্তি, গ্যাস, লুটপাট, দুর্নীতি, ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড, খুন, ধর্ষণসহ সর্বোপরি গণতন্ত্র উদ্ধারের দাবিতে কর্মসূচি আসবে।’

হাইকমান্ডের কী হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা আছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘কঠোর তো কর্মসূচি হয় না। সরকার যদি কর্মসূচিতে রিঅ্যাক্ট করে, তাহলে সেটা কঠোর হয়। সাধারণত কর্মসূচি সরকার কঠোর না বানালে কঠোর হয় না। সরকার যদি গণতন্ত্রে ফেরে, উদ্যোগ নেয়, তাহলে তো কঠোর হওয়ার দরকার নেই।’

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে যেসব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল, তা ‘স্যাবোটাজ’ হয়েছে নানা কারণে। এর মধ্যে গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর এবং একটি গোষ্ঠীর ‘রহস্যজনক’ আচরণ নিয়েও ভীতি তৈরি হয়েছে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। ফলে, যেকোনও কর্মসূচি দেওয়ার আগে ‘স্যাবোটাজভীতি’ কাজ করছে  নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। ইতোমধ্যে বিএনপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ১ জুলাই জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করেছে; তা শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই মুহুর্তে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেইনি আমরা। যখন এই রকম সিদ্ধান্ত নেবো তখন জানাবো।’ এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত হয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। এর বাইরে তো সিদ্ধান্ত হয় না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কর্মসূচির বিষয়ে দলের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি। দলের স্থায়ী কমিটিতে এই রকম বিষয়ে কোনও আলোচনা হলে পরে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরেও হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর জন্য লাগাতার হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তবে ওই হরতাল ও অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলন্ত গাড়ি, মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পেট্রল বোমা নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহত হন—যাদের বেশিরভাগই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এরপর দেশব্যাপী নাশকতার অভিযোগ এনে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সরকার। এসব মামলায় দলটির অসংখ্য নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়ে এখনও কারাগারে আছেন। অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দলীয় প্রধানসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের এসব মামলায় এখন নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। ওই ঘটনার পর থেকে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছে না দলটি।  

 

/আইএ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাতক্ষীরায় চলছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তীব্র তাণ্ডব
সাতক্ষীরায় চলছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তীব্র তাণ্ডব
কৃতীজন সংবর্ধনা দিলো চট্টগ্রাম সমিতি
কৃতীজন সংবর্ধনা দিলো চট্টগ্রাম সমিতি
ডুবে গেছে ভোলার অনেক এলাকা, বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
ডুবে গেছে ভোলার অনেক এলাকা, বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
আইপিএলে কার হাতে কী পুরস্কার উঠলো!
আইপিএলে কার হাতে কী পুরস্কার উঠলো!
সর্বাধিক পঠিত
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: পায়রা ও মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: পায়রা ও মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেলো সুন্দরবন
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেলো সুন্দরবন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী
কখন উপকূল অতিক্রম করতে পারে ‘রিমাল’?
কখন উপকূল অতিক্রম করতে পারে ‘রিমাল’?
ধানমন্ডিতে হকারদের সড়ক অবরোধ
ধানমন্ডিতে হকারদের সড়ক অবরোধ