X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
গুম, খুন শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত

আমরা শান্তি ফিরিয়ে এনেছি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:২৯আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:১২

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গুম, খুন শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমরা এগুলো ব্যাপক হারে দেখেছি। তখন প্রতিবছর প্রতিনিয়ত এ ধরনের গুম, খুন হতো। তারা যদি এখন এসে বলে, এত খুন হয়েছে, এত গুম হয়েছে, বলতেই পারে। আমাদের কথা হচ্ছে, এই গুম ও খুন এখন আমরা সচরাচর দেখছি না। বাংলাদেশ এখন পিসফুল একটা দেশ। ২০০৪ সালে এক বছরে ৪৭০ জন গুম হয়েছিল। যারা এসব কথা বলছেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু জানেন, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এখানে সন্ত্রাস, জঙ্গি, চরমপন্থি, বনদস্যু, জলদস্যু সবাই পর্যায়ক্রমে স্যারেন্ডার করেছে। এগুলো এখন বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে।

রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী উত্থান দেখেছি। ২১ আগস্ট আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা দেখেছেন। খোদা তাকে রক্ষা করেছেন। জায়গায় জায়গায় বোমা হামলা হতো। ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা হয়েছে। সবগুলো কিন্তু সেই আমলে হয়েছে। এগুলো ইতিহাস হয়ে আছে। এখন যারা এগুলোর কথা বলেন, তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিগত দুই বছর ধরে বিএনপি, জামায়াত কিংবা অন্য কোনও দলের কর্মসূচিতেই বাধা দেইনি। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর যেটা হয়েছে, সেখানে পর্যন্ত আমরা বাধা দেইনি। সেদিন দেখলাম সারা দেশ থেকে অধিকাংশ নেতাকর্মীকে তারা ঢাকায় নিয়ে এসেছে। তারা বিরাট একটা সমাবেশ শুরু করলেন। বলেছিলেন, নাইটিঙ্গেল মোড় ও অন্যদিকে ফকিরাপুল চৌরাস্তা ক্রস করবেন না। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তারা এর বাইরে যাবেন না। আমরা দেখলাম নাইটিঙ্গেল মোড় পার হয়ে গেছে। কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ও জাজেস কমপ্লেক্স পর্যন্ত। হাজার দুয়েক লোক সেখানে জটলা করছিল। ওইদিন আওয়ামী লীগ একটি শান্তি সমাবেশ করছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে। আমার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর) এলাকার মহিলারা সেই শান্তি সমাবেশে যাচ্ছিলেন প্রধান বিচারপতির বাসার পেছন দিয়ে। সেখানে তাদের ধরে এমন পেটান পেটালো, তাদের কান্না যদি দেখতেন, তাদের আহাজারি যদি দেখতেন, তাহলে আপনারাও হয়তো অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। এরপরই দেখলাম তারা আরও মারমুখী হলেন। তারা প্রধান বিচারপতির বাসায় ঢুকে হামলা চালালেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেটের নামফলক ভাঙচুর করলেন। ছোট গেটটা গুড়িয়ে দিলেন। ভেতরে ঢুকে ঢিল মারলেন। পাঁচ-ছয়শ লোক ঢুকে বিচারপতির বাসায় হামলা চালালেন। পুলিশ বাধ্য হয়ে তখন তাদের সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। আমরা দেখলাম, তারা জাজেস কমপাউন্ডের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করলেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ভাঙচুর করলেন। সাংবাদিকরা তাদের ঢিলে ও মারধরে আহত হলেন। কোথা থেকে তারা ব্যাগভর্তি করে ঢিল নিয়ে এলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপির কর্মীরা পুলিশ হাসপাতালেও হামলা চালালেন। যেখানে সাংবাদিকরাও চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। একজন লোক হার্ট অ্যাটাক করলেন। তিনিও চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। সেখানেও বিএনপির শত শত কর্মী যারা সবসময় এ ধরনের অশান্তি করেন, মারধর করেন, বোমাবাজি করেন, তারা ঢুকে গেলেন। বোমা মারতে মারতে হাসপাতালের স্পেশাল অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করলেন, সেবিকাদের মারপিট করলেন। সেখানেই শেষ নয়, তারপর দেখলাম কালভার্ট রোডের এক মাথায় ছাত্রদলের কয়েকজন চিহ্নিত নেতা পুলিশকে পেটানো শুরু করলো। পিটিয়ে হত্যা যখন নিশ্চিত হলো, তখন তারা আবার এসে তার মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করলো। এগুলো সবই ক্যামেরাবন্দি রয়েছে। তারা পুলিশের লাশের ওপর যেগুলো করলো সেগুলো আপনারা দেখেছেন। শুধু পুলিশ নয়, আনসারের ওপরও এমন বর্বর আক্রমণ হয়েছিল। সেদিন কয়েকশ পুলিশ আহত হলো। কয়েকশ সাংবাদিক আহত হলো। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা ধরেই নিয়েছিলাম বিএনপির নেতারা বলবেন, আমাদের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা এ কর্মটি করেছে। সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তা না করে তারা হরতাল ঘোষণা করলো দেশব্যাপী। ২৯ তারিখ সকাল বেলায় দেখলাম, নিরীহ হেলপারসহ একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দিলো। আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো। একসঙ্গে কয়েকশ বাসের মধ্যে আগুন দিলো। যেখানে সেখানে পেট্রোল বোমা ছোড়া শুরু করলো। ২০১৪ সালে যেভাবে তারা আগুন দিয়ে আতঙ্ক শুরু করেছিল, অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, তারই একটা পুনরাবৃত্তি ঘটালো। এগুলো যারা করে, তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলে। তারা নানা ধরনের কথা বলে। তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না। এসব শুনলে মনে হয় আমরা কোন যুগে বসবাস করছি। পুলিশ ও আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ প্রশ্ন আসে খুন, গুমের কথা। খুন গুমের যে দৃশ্যগুলো দেখেছেন সেগুলো ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত হিসাব করেন, যোগ করেন, তাহলে আপনারাই আঁতকে উঠবেন। আপনারা তখনও ছিলেন, এখনও আছেন। ঘটনাগুলো অনেকেই হয়তো ভুলে গিয়েছেন। আমি আবারও তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। খুন, গুম শুরুই করেছিলেন তারা। আমরা এগুলো বন্ধ করে আজ একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। আমরা পরিবেশটা ভালো রাখতে চাই। সে জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।

সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা দেশ থেকে তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে এসেছে। এমন কোনও থানা নেই, যেখান থেকে তাদের নেতাকর্মীরা সেদিন ঢাকায় আসেনি। তারা প্রথমে ঢাকায় এসেই ডিএমপির কিছু সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে দিয়েছিল। তারা মনে করেছিল ক্যামেরা নষ্ট করলেই আমরা বোধহয় আর কিছু পাবো না। তাদের এসব কর্মকাণ্ডও লক্ষণীয়। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে ডিএমপি এসব ক্যামেরা লাগিয়েছিল। এটা ঘটাতে পারে সেটা আমরা জানতাম। সেজন্য ড্রোনের সাহায্য নিয়েছিলাম। ফলে সেখানে কত লোক জমায়েত হয়েছিল সেটা আমরা হেড কাউন্ট করে জানতে পেরেছিলাম। আমাদের পিকচারগুলো এত সুন্দর এসেছে, আমরা হাইপাওয়ারের ড্রোনগুলো সেখানে দিয়েছিলাম। কারা কারা পিটিয়েছে, কারা কোন জায়গা থেকে এসেছে সবগুলো আমাদের ক্যামেরায় রয়ে গেছে। এই ক্যামেরা সার্চ করেই যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের চিহ্নিত করে সে যেখানেই থাকুক সেখান থেকে গ্রেফতার করছে। অন্যায়ভাবে কাউকে অ্যারেস্ট করা হচ্ছে না। ওয়ারেন্ট ছাড়া কিংবা যারা ২৮ অক্টোবরের সহিংসতায় সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, তাদের ছাড়া সারা দেশ থেকে কাউকে অ্যারেস্ট করা হচ্ছে না। এখানে তারা ২ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিল। হেড কাউন্ট করে যেটা আমরা দেখেছি। পাশাপাশি আরও ছোট ছোট কয়েকটা দলও প্রোগ্রাম করেছিল। সবার চেহারাই ড্রোনের মাধ্যমে ক্যামেরাবন্দি করে সংরক্ষিত করা হয়েছে।

মানববন্ধনও করতে দিচ্ছে না পুলিশ এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন নির্বাচন শিডিউল ঘোষণা হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনও কীভাবে নির্বাচন করবেন সেটা নিয়ে ব্যস্ত। স্বাভাবিক কারণেই এ ধরনের মানববন্ধন ও ধর্মঘট, কিছু অসুবিধা হোক, পুলিশ সেরকম কিছু চায় না। তারা অনুরোধ করেছিল অন্য জায়গায় মানববন্ধন করতে। এরা যে জায়গায় করতে চেয়েছিল সেখানে যানজট সৃষ্টি হতে পারে, এজন্য পুলিশ করতে দেয়নি। হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করতে চায়, কিন্তু নির্বাচন কমিশন আপত্তি করলে করতে পারবে না। নিরাপত্তা বাহিনী যদি মনে করে পরিবেশ নষ্ট হবে, তাহলে সেটা দেখার বিষয় রয়েছে। সবাই যেন নির্বাচনি বিধিনিষেধ মেনে চলে।

/জেইউ/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
‘ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে’
সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, আ.লীগ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
বিএনপি ফের নৈরাজ্য করলে ডাবল শিক্ষা পেয়ে যাবে: ওবায়দুল কাদের
সর্বশেষ খবর
২০ ঘণ্টা পর মুক্ত সৈয়দপুরের সেই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী
২০ ঘণ্টা পর মুক্ত সৈয়দপুরের সেই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে চলেছে রকমারি ডট কম
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে চলেছে রকমারি ডট কম
বিছানায় পড়ে ছিল স্ত্রীর লাশ, ঘরের আড়ায় ঝুলছিলেন স্বামী
বিছানায় পড়ে ছিল স্ত্রীর লাশ, ঘরের আড়ায় ঝুলছিলেন স্বামী
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির জন্মদিন আজ
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির জন্মদিন আজ
সর্বাধিক পঠিত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
এ আর রাহমানের মুখে লালন ফকির থেকে শেখ হাসিনা...
কান উৎসব ২০২৪এ আর রাহমানের মুখে লালন ফকির থেকে শেখ হাসিনা...
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া