X
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
২৪ বৈশাখ ১৪৩২
রাজপথের পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে সংশয়

বিএনপির নতুন কমিটিতে ‘বঞ্চিত’ ঢাকা!

সালমান তারেক শাকিল
১১ এপ্রিল ২০১৬, ০৭:২২আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০১৬, ১২:৪৭

বিএনপি মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, ৭ যুগ্ম মহাসচিব ও ৯ সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করেছে বিএনপি। নতুন কমিটিতে ঢাকার নেতারা তুলনামূলকভাবে কম বলে অভিযোগ রয়েছে নেতাদের। মনোনীত নেতাদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের। রাজধানীতে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ও লোকবল অনেক কম। এ কারণে বিএনপির নতুন কমিটিতে ঢাকার নেতারা ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, এতে  রাজধানীকেন্দ্রিক আন্দোলনের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে এখনই সংশয় দেখা দিচ্ছে।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনীত নতুন কমিটির এই পদগুলোয় তুলনামূলক তরুণ নেতাদের সংখ্যাই বেশি। আর এই মনোনীতদের বেশিরভাগই ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা। নেতাকর্মীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত মনোনীত নেতারা তারেক রহমানের পছন্দের বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। তিনি যাদের বিশ্বস্ত মনে করেছেন, বা যাদের দিয়ে দলে তার প্রভাব-কর্তৃত্ব পূর্ণরূপে ধরে রাখা সম্ভব, তাদেরই নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই দিয়েছেন। কেউ-কেউ বলছেন, খালেদা জিয়া তার বিগত দিনের দেওয়া কথা ঠিক রাখছেন। তিনি প্রায়ই  তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার কথা বলতেন।
গত শনিবার বিকালে বিএনপির নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুনুর রশিদ ও লায়ন আসলাম চৌধুরীর নাম ঘোষিত হয়। পাশাপাশি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঢাকায় ফজলুল হক মিলন, চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাৎ হোসেন, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীতে অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বরিশালে বিলকিস জাহান শিরিন, রংপুরে আসাদুল হাবিব দুলু, ময়মনসিংহে ইমরান সাহেল প্রিন্স ও ফরিদপুরে শ্যামা ওবায়েদের নাম ঘোষণা করা হয়। এদিন রাতে সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনের নামও জানানো হয়। এর আগে ৩০ মার্চ মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে রুহুল কবির রিজভীর নাম ঘোষণা হয়েছিল।

জানা যায়, বিগত দিনে বিএনপির মহাসচিব হিসেবে ঢাকার নেতাদের প্রাধান্য ছিল। এর মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আবদুস সালাম তালুকদার, কেএম ওবায়েদুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা নেতা। ৬ষ্ঠ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে এলেন বৃহত্তর উত্তরবঙ্গের সন্তান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সজ্জন হিসেবে পরিচিত এই নেতার ঢাকায় সাংগঠনিক সক্ষমতা আগের সবার চেয়ে কম বলেই মনে করেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আগামী দিনের আন্দোলনে তাকে ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ওপরেই ভরসা করে থাকতে হবে বলে জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা। যদিও স্বপরিচয় ব্যক্ত করে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিএনপির ঢাকা মহানগরীর এক নেতা জানান, সাদেক হোসেন খোকা বলয়ই নতুন কমিটিতে জয়ী হলো। তবে শঙ্কা রয়েছে বিদেশ পলাতক স্বয়ং খোকা কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন সে বিষয়ে।

বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু অবশ্য মনে করেন ভিন্ন কিছু। তার মতে, ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন সফল হয় মূলত ঢাকার কমিটিগুলোর মাধ্যমেই। ঢাকার বিএনপি, ছাত্রদল, শ্রমিকদলসহ অন্য সংগঠনগুলো আন্দোলন করলেই ঢাকার আন্দোলন সফল হয়। কিন্তু বিগত দিনে সেটি প্রমাণিত হয়নি। সরকারের রোষানলে পড়ে সর্বশেষ মির্জা আব্বাস-সোহেল কমিটি গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। তবে, এ কারণে মহাসচিব হিসেবে সাংগঠনিক শক্তি নেই, এ কথাও বলা যাবে না।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, যুগ্ম মহাসচিব মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক সাংগঠনিক দক্ষতার ওপরেই নির্ভর করে মনোনীত করা হতো। কিন্তু এবার খায়রুল কবির খোকন ছাড়া ঢাকার শক্তিশালী নেতা নেই। যেকোনও কর্মসূচিতে লোকজমায়েতসহ সক্রিয় আন্দোলন করতে বাকি মনোনীতদের মধ্যে অনেকের ভূমিকা প্রমাণিত। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নোয়াখালীকেন্দ্রিক ও আইনজীবীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বেশি। এছাড়া মজিবুর রহমান সারোয়ার বরিশালকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে যুবদলের সাবেক সভাপতি হিসেবে অসফল বলে মনে করা হয় দলের ভেতরে। বিগত দিনে ঢাকার আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নন নেতাকর্মীরা। একই পরিস্থিতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের। মির্জা আব্বাস কমিটির সদস্য সচিব হলেও রাজপথে ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি তার অনুসারী  নেতাকর্মীরা। এছাড়া রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জের হারুনুর রশিদ ও চট্টগ্রামের ধনকুবের লায়ন আসলাম চৌধুরী মনোনীত হয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে।

সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলের ফজলুল হক মিলন পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাৎ হোসেন, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীতে অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বরিশালে বিলকিস জাহান শিরিন, রংপুরে আসাদুল হাবিব দুলু, ময়মনসিংহে ইমরান সাহেল প্রিন্স ও ফরিদপুরে শ্যামা ওবায়েদ ও সিলেট ডা. সাখাওয়াত হাসান মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে বিলকিস জাহান শিরিনের বরিশাল বিএনপিতে প্রভাব ও সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে দলেই প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে সরাসরি সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন শামা ওবায়েদ। নেতাকর্মীরা বলছেন, ফরিদপুর অঞ্চলে শামা ওবায়েদ কতটা সফল হবেন, এ নিয়ে পুরো সন্দেহ আছে তাদের। আবার কেউ কেউ বলছেন, বাবা কে এম ওবায়েদুর রহমানের পরিচয় ও বিগত দিনে দলের আইসিটি ও পররাষ্ট্র উইংয়ে সক্রিয়তার কারণেই তিনি মনোনীত হয়েছেন। 

সূত্র জানায়, নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে গত ২০১৩-১৫ সালে নানা ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার পরও স্থান পাননি ড. আসাদুজ্জামান রিপন। সম্ভাব্য ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে তার নাম আসতে পারে বলে এখন অনেকে মনে করছেন। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নাম আসেনি বলেই যে আর আসবে না, তা নয়। নেত্রী চাইলে যুগ্ম মহাসচিব বাড়াতে পারেন, হয়তো দেখা যাবে রিপনের নাম আসবে। তবে নেত্রী সবসময়ই বলে এসেছেন যোগ্যদের জায়গা তিনি দেবেন।

এখন পর্যন্ত কমিটিতে নাম নেই সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রমাণিত যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানের। বিগত দিনের পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এমনকি মির্জা ফখরুলের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দূরত্ব কমাতে সম্প্রতি তিনিই উদ্যোগ নিয়েছেন। এর পরও তিনি যুগ্ম মহাসচিবদের কাতারে নেই। ভারতে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনের নামও নেই। যদিও কেন্দ্রীয় এক নেতা বলছেন, শাহজাহানকে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব বা এ ধরনের কোনও পদে দেখা যেতে পারে। সালাহউদ্দিনের নাম হয়তো ভাইস-চেয়ারম্যানের তালিকায় দেখা যেতে পারে।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, তরুণ নেতৃত্বের ওপর ভরসা করছেন খালেদা জিয়া। সংগঠন ও আগামী দিনের আন্দোলনে তারা ভূমিকা রাখবেন বলেই তিনি প্রত্যাশা করেন।

অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ঢাকার নেতাদের না থাকার কারণ নেই। এটি তো মাত্র শুরু। আগামী পদগুলোয় দেখা যাবে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের কমিটি সবাইকে নিয়ে হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি যেভাবে হওয়া দরকার, সেভাবেই হচ্ছে। অপেক্ষা করুন, ঢাকার কমিটিগুলোয় ঢাকার নেতাদের দেখা যাবে।

শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপির ঢাকা মহানগরের এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিগত দিনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে বুঝতে পারছি নতুন মনোনীতরা কী করবেন। শুধু তরুণ নেতাদের দিয়েই রাজনীতি হলে বিগত দিনের প্রবীণ নেতারা কি বিফল হয়েছেন? এমনিতেই বিএনপির নেতারা সুট-কোটে অভ্যস্ত। এরপর যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের ড্রইং রুমে যেতে হয় জুতা খুলে।

এদিকে, নীরবে সমালোচনা হলেও ফেসবুকে মনোনীতদের অভিনন্দন জানানো অব্যাহত আছে। মনোনীত নেতাদের মধ্যে অনেকের ফেসবুক ওয়াল রেস্ট্রিকটেড থাকলেও গতকাল নাম ঘোষণার পর থেকে নিজেদের ওয়াল ওপেন করে দিয়েছেন। মনোনীতদের নাম ও ছবি সংবলিত ডিজিটাল পোস্টারও দলীয় ঘরানার ফেসবুক আইডি, লাইক পেজগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টেকনাফে ১০ হাজার জেলে পরিবারে দুর্দিন, ২১ দিনেও পাননি ভিজিএফের চাল
মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাটেকনাফে ১০ হাজার জেলে পরিবারে দুর্দিন, ২১ দিনেও পাননি ভিজিএফের চাল
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৫)
পাকিস্তানে মিসাইল ছুড়লো ভারত, নিহত ৩
পাকিস্তানে মিসাইল ছুড়লো ভারত, নিহত ৩
মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে মেয়েকে বিক্রির অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে
মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে মেয়েকে বিক্রির অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ